ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড মানুষদের কাছ থেকে যা শেখা উচিৎ সবার
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আমাদের চারপাশে কিছু মানুষের মন্তব্য এরকম- আমার যদি ওরকম পা কাটা থাকতো, আমি নিজেই আত্মহত্যা করতাম! আমার যদি চোখ না থাকতো, এই জীবন নিয়ে আমি কী করতাম! এই জীবন নিয়েও কি কি করা যায় সেসব শেখা যাবে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড মানুষজনদের কাছ থেকে। সবচেয়ে রূঢ় বাস্তবতাগুলোতো তারাই ফেস করেছে সবচাইতে বেশি...
আপনি যে মানুষটাকে এই মুহুর্তে অপছন্দ করছেন, একটু মনোযোগ দিয়ে যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন তারও কিছু অসাধারণ দিক আছে। স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকের এমন অভিজ্ঞতা আছে। প্রথম দিকে যাকে একেবারেই ভালো লাগেনি, পরে কোনো একসময় তার সাথেই খুব কঠিন বন্ধুত্ব হয়ে যায়! কেন হয় এমন? কারণ, প্রথমে আপনি মানুষটাকে বিচার করেছেন নিজের মতো করে।
কিন্তু জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এসে আপনি যখন তাকে তার অবস্থান থেকে বিচার করবেন, মনে হবে- নাহ, মানুষটা তো এত খারাপ না! আপনি একটু লক্ষ্য করে দেখবেন আমাদের চারপাশে এমন অনেকে আছেন, যারা শারীরিকভাবে আমাদের মতো না। সৃষ্টিকর্তা তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা দিয়ে পাঠিয়েছেন। কিছু মানুষ যখন তাদের নিয়ে কথা বলে, এমনভাবে কথা বলে যেন জগতের সকল মোটিভেশন উৎসাহ উদ্দীপনা তাদেরই প্রয়োজন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে এই মানুষগুলো অনেক বাঁধাবিপত্তি পেরিয়ে আসে। সত্যিকার অর্থে, আমরা বরং নিজেদের ইগো সরিয়ে রাখতে পারলে তাদের কাছ থেকেই জীবনের অন্যতম সেরা লাইফ ল্যাসন শিখতে পারি।
অপূর্ণ দেহ নিয়েও সতিকারের সুখ উপলব্ধি করা যায়
আমাদের চারপাশে কিছু মানুষের মন্তব্য এরকম—আমার যদি ওরকম পা কাটা থাকতো, আমি নিজেই আত্মহত্যা করতাম! আমার যদি চোখ না থাকতো, এই জীবন নিয়ে আমি কী করতাম! সম্পূর্ণ পা প্যারালাইসিস হয়েছে এমন একজন তার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন,
আমি ভেবেছিলাম আমি আর কখনো আগের মতো সুখী থাকতে পারবো না। কিন্তু প্যারালাইজড হওয়ার কয়েক বছর পর আমি বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করলাম, পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই। পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, প্রতিদিন কত কিছু হয়ে যাচ্ছে। আগে হয়তো অনেক কিছুই লক্ষ্য করতাম। কিন্তু এখন করি, ছোট ছোট অনেক বিষয়ের মধ্যেও আমি আনন্দ খুঁজে পাই। আমি এখনো আশা করি, একদিন আবার হাঁটতে পারবো, এই আশার মাঝেও বেঁচে থাকার আকুতি আছে!
চেহারা দেখে মানুষ যাচাই করে যারা সুখ পান
বইয়ের মলাট দেখে যেমন বই কেমন, তা বোঝা যায় না- তেমনি মানুষকে বাহ্যিক অবয়ব দেখেই তার সম্পর্কে কোনো ধারণা করে ফেলা ঠিক নয়। স্টিফেন হকিং এর নাম তো শুনেছেন নিশ্চয়ই? একটা মানুষ যে তার প্রায় গোটা জীবন হুইল চেয়ারে বসেই কাটিয়ে দিলো, কিন্তু জীবন নষ্ট করলো না। পৃথিবীর অন্যতম সেরা স্মার্ট এবং তুখোড় মেধাবী একজন মানুষ স্টিফেন হকিং, যে কিনা সময়ের আলোচিত পদার্থবিজ্ঞানী। ২০১৪ সালে তাকে নিয়ে একটি সিনেমাও হয় যার নাম, “থিউরি অব এভরিথিং”। তাই শারীরিক সীমাবদ্ধতা মানেই মানুষটা ইম্প্রেসিভ হতে পারবে না, সফল হতে পারবে না এমন নয়। আপনি কখনো ধারণাই করতে পারবেন না যাকে আজ অগ্রাহ্য করলেন, সে আপনাকে কি চমক দেখাবে!
জীবনটা স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা, যা কিছু আসুক সব কিছুকে নিজের মতো উপভোগ করুন
একজন আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মানুষও আজকাল ৯৫ বছর বেঁচে থাকবে এমন আশা করতে পারে না। জীবন আমাদের এমনিতেই ক্ষনকায়। তবুও, আমরা হা হুতাশ করে সময় নষ্ট করে জীবনের দৈর্ঘ্য আরো ছোট করে ফেলি। কিন্তু শারীরিকভাবে যাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে, তারা জীবনের সকল সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে নিয়ে একটা গোপন সূত্র খাটিয়ে জীবন উপভোগ করছে। প্রতিটা দিনই শেষ দিন- এটা মনে করেই দিনটাকে আলাদা করে উপভোগ করেন তারা। সকাল বেলার প্রথম সূর্যের আলো থেকে বিকেলের এক মগ কফিতেও তারা নতুন করে আনন্দ খুঁজে পান। জীবনের সকল সুন্দর মুহুর্তগুলো দেখার জন্যে নিজেকে ধন্যবাদ দেন। এভাবেই প্রতিটি দিন আলাদা ও তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে।
সীমাবদ্ধতাকে সবসময় ডিপ্রেশনের কারণ হিসেবে দাঁড় করানোর মানে নেই
জীবনের কোনো কোনো মুহুর্তে এসে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এক ধরণের জড়তা আর ইগো আমাদের সমস্যা আরো বাড়ায়। আমরা কারো কাছে সাহায্য চাইতে কিংবা কারো সাথে খোলামেলা কথা বলে সমস্যার কথা জানাতে ইতস্তত বোধ করি। কিন্তু, কেউ যখন শারীরিক ভাবে সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমাজে চলাফেরা করে, সে মেনে নেয় মানুষ তাকে সাহায্য করতে চাইবে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নেয়া দোষের কিছু নয়। যদি এটা তারা মেনে না নিতেন তাহলে তারাই সবচেয়ে ডিপ্রেশনে থাকতেন, কিন্তু কী আশ্চর্য, তারা জীবনকে খুব সহজ করেই দেখতে পছন্দ করেন।
সবার চেয়ে যারা আলাদা, সবার চেয়ে বেশিই অভিজ্ঞতা তাদের
আচ্ছা, কোনো একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় খেয়াল করলেন, সবাই আপনার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ মিটমিট করে হাসছে। ভেতরে ভেতরে আপনি খুবই অস্বস্তি বোধ করবেন। ইন ফ্যাক্ট, বেশিরভাগ মানুষই এমন। সে চায় না অজানা কোনো কারণের জন্যে তাকে সবাই আলাদা করে খেয়াল করুক। কিন্তু এই ব্যাপারটি অতটা খারাপ নয় যতটা আমরা ভাবি। কারণ, পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতাগুলো হুট করেই ঘটে যায়, সবচেয়ে সুন্দর মানুষগুলোর সাথে আমাদের দেখা হয় হুট করেই। আপনাকে যারা আলাদা করে লক্ষ্য করে, তাদের মধ্যে অসাধারণ কোনো মানুষের সাথে আপনার দেখা হয়েই যেতে পারে, যার কথা কিংবা কাজে হয়তো আপনার জীবন নতুন মোড় নেবে। হয়তো, এভাবেই আপনার জন্য তৈরি হতে পারে নতুন কোনো সুযোগ। তাই নিজেকে আলাদা মানুষ মনে করে অস্বস্তি অনুভব করার কিছু নেই।
কমবেশি সীমাবদ্ধতা সবার জীবনেই আছে
টেলিভিশনে দেখা কোনো এক্সিডেন্টের খবর কিংবা আশেপাশে ঘটে যাওয়া বীভৎস কোনো দূর্ঘটনা দেখে আপনি মনে মনেই বলে ফেলেন আপনার জীবনে এরকম যেন না হয়। এইরকম অবস্থা ঘটুক আপনি কল্পনাতেও চান না। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে প্রতি মুহুর্তেই অঘটন ঘটছে, কারো না কারো জীবন পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে এসব দূর্ঘটনায়। এমনটা কাল আপনারও হতে পারে। আমরা ভুলেই যাই আমরা কেউই পারফেক্ট না। আমরা সবাই মানুষ, একদিন সবাইকেই মরতে হবে। শারীরিক সীমাবদ্ধতা আছে এমন কারো সাথে আমাদের সবচেয়ে বড় তফাৎ চিন্তায়-মানসিকতায়। তাদের অনুপ্রেরণার ছবক দেওয়ার আগে নিজেরাই বরং অনুপ্রাণিত হই তাদের কাছ থেকে?
হাফিংটনপোস্ট অবলম্বনে