৬৫ বছরের দৌড়বিদ থেকে সিনেমায় অভিনয়ের গল্প যার, তিনি লতা কার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
লতা কারের গল্পই প্রমাণ করে যে চেষ্টা করলে সবারই দিন ফেরে। জীবন কখন কার জন্য কী নিয়ে বসে আছে, আপনি ভাবতেও পারবেন না।
একজন দৌড়বিদকে কল্পনা করুন তো। পুরুষ হোক, বা নারী, কেমন হয় তার বয়স? বেশভুষাই বা কেমন হয়? ৪০ এর কম বয়স, শর্টস বা ট্রেকিং প্যান্ট, বিশেষ জুতা আর ঘাম শুষে নেওয়ার হাতাকাটা গেঞ্জি পরা সুঠাম দেহ- এমনটাই তো কল্পনায় আসে, নাকি? কিন্তু আপনার এই ধারণা বদলে যাবে ভারতের এক দৌড়বিদের কথা শুনলে।
তিনি লতা কার। ষাটোর্ধ্ব বয়স, খালি পা, সুতি শাড়ি- এই তিনের সমন্বয়ে এই দৌড়বিদ মহিলার নাম উচ্চারিত হয়। সমগ্র বিশ্বের কাছে হয়তো পরিচিত মুখ নন, কিন্তু নিজ রাজ্যে তিনি একজন যোদ্ধা দৌড়বিদ হিসেবেই পরিচিত, যিনি জেলা ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় টানা তিনবার অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিবারই প্রথম স্থান অর্জন করেন।
দিনমজুর লতা কার আর নিরাপত্তা প্রহরী ভগবান কারের দিন আনে দিন খাই সংসার, একমাত্র ছেলেটাও তেমন কিছু করে না। কোনোমতে খেয়ে-পরে চলে যাচ্ছিল দিন। গরীবের সংসারে অসুখ-বিসুখ বাড়তি ঝামেলা বৈ কিছু না। লতা কারের সংসারও তার ব্যতিক্রম না।
লতা কারের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে স্বামীর আকস্মিক অসুস্থতায়। চিকিৎসা খরচ বাবদ পাঁঁচ হাজার রুপি দরকার হয় সে মুহূর্তে। অভাবের সংসারে পাঁচ হাজার তো অনেক, কে দিবে এত টাকা? এসব ভেবে লতা কারের যখন দিশেহারা অবস্থা, তখনই প্রতিবেশী তরুণরা তাঁকে ম্যারাথন প্রতিযোগিতাটির খোঁজ দেন। তারা বলে, 'নানী, তুমি তো অনেক হাঁটতে পার, নাম দাও, জিতেও যেতে পার। জিতলে পুরস্কার হিসেবে পাঁচ হাজার রুপি দেওয়া হবে'।
এ কথা শুনে যেন অন্ধকারে আলোর আভা দেখতে পান লতা কার। কিন্তু দৌড়ের প্রতিযোগিতা তো দূর, বড় হবার পর কখনো দৌড়ও দেননি তিনি। আবার, স্বামীর চিকিৎসা খরচ যোগানোর দারুণ এই সুযোগও তো হেলায় যেতে দিতে পারেন না! অতঃপর দৌড়ের প্রতি কোনো ভালবাসা বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য নয়, নিতান্তই চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতেই প্রতিযোগিতাটিতে নাম দেন তিনি। তিনি বলেন- 'আমি প্রতিদিন সকালে হাঁটতাম, কিন্তু দৌড়াইনি কখনো। যে কখনো দৌড়ায়নি, সে কোনো দৌড় প্রতিযোগিতায় কীভাবে প্রথম হলো তা এখনো ভেবে পাই না আমি, তবে আমি সত্যিই প্রথম হলাম। ভাগ্য আমার সাথে ছিল, আর আমি পেলাম পাঁচ হাজার রুপি।'
পুরস্কার প্রাপ্ত টাকা দিয়ে স্বামীর চিকিৎসা করালেন লতা কার। স্বামী বলেন- 'সে শখের বশে এ কাজটি করেনি, আমাকে বাঁচানোর জন্য করেছে। তাঁর এখন দৌড়ানোর বয়স না, কিন্তু আমি তাঁর ফলাফলে খুব গর্বিত।'
লতা কারের কাছে স্বামীর সুস্থতার আনন্দের সাথে বাড়তি পাওনা হিসেবে ছিল নিজ প্রতিভা দিয়ে উপার্জন করার খুশি। সব মিলিয়ে, আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গেল তার। তারই ধারাবাহিকতায় পরের বছর একই প্রতিযোগিতায় তিন কিলোমিটার ম্যারাথনে পুনরায় নাম দেন তিনি। এবং আবারও প্রথম হন। তৃতীয়বারের মতো নাম দিয়েও প্রথম হোন!
চতুর্দিকে লতা কারের নাম ছড়িয়ে পড়ে, সবাই জানতে পারে তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা। আয়োজক কমিটি থেকে ফান্ড রেইজ করে তাঁকে দেওয়া হয়। সে টাকা দিয়ে বাড়ির কাজ করেন লতা কার। বর্তমানে আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল না হলেও আগের মতন অসচ্ছল নন তিনি।
তাঁর জীবনী নিয়ে সম্প্রতি একটি সিনেমা হয়েছে, যাতে অভিনয় করেছেন লতা কার নিজেই। সিনেমায় কাজ করা প্রসংগে তিনি বলেন- 'জীবনের কোনো ধাপেই ভাবিনি কখনো সিনেমা করবো। দৌড় দিয়ে শুরু যাত্রাটা সিনেমায় অভিনয় দিয়ে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আমাকে কম পোহাতে হয়নি এই বয়সে এসে এসব করছি বলে। অথচ তাদের কাছে গিয়ে কোনো ধরণের সাহায্যও পাইনি কোনোদিন। নিজেই চেষ্টা করেছি, করে যাব। আমার সুদিন ফিরেছে।'
সতিই! লতা কারের গল্পই প্রমাণ করে যে চেষ্টা করলে সবারই দিন ফেরে। জীবন কখন কার জন্য কী নিয়ে বসে আছে, আপনি ভাবতেও পারবেন না।