কোনো দূর্ঘটনা নয়, সরাসরি হত্যা! এবারের ঘটনা আরো ভয়াবহ ও নৃশংস!
গতকাল টেকনাফের হ্নীলায় পল্লীবিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিশাল মর্দা হাতির মৃত্যুর পর সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে নতুন দুঃসংবাদ৷ এবার ঘটনাস্থল বান্দরবানের লামা (যদিও এলাকাটি কক্সবাজার সন্নিহিত)। এবারের ঘটনা আরো ভয়াবহ ও নৃশংস!
লামার ফাঁসিয়াখালীর ধান চাষীদের পাতা বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে অাটকা পড়ে শুধু বন্য হাতিই মরেনি, মৃত্যু হয়েছে আবদুর রহিম নামের স্থানীয় এক যুবকেরও৷
স্থানীয় সোর্স মোস্তফা কামাল মারফত জানলাম বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের পাইন্যার ঝিরি নামক এলাকায় গতকাল মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। ছবি দেখে মনে হচ্ছে হাতিটি কমবয়সী জুভিনাল। তার উপর মানুষ মরেছে৷ এবার কি আপনাদের মায়া হবে?
সারাদেশ ঘুরার অংশ হিসেবে জামালপুর শেরপুর জেলার বকশিগঞ্জ, শ্রীবর্দি, নলিতাবাড়ি ও ঝিনাইগাতি ঘুরার সময় দেখেছি সেখানে এনজিও ব্যবস্থাপনায় হাতিকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে তাড়ানোর জন্য এমনভাবে ফেন্সিং করা হয়েছে যাতে হাতি মারা না যায়। কিন্তু দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোনো বিবেচনা ছাড়াই ফসল বাঁচাতে শক দিয়ে হাতি-মানুষ সব মেরে ফেলছি আমরা!
এরকম নানা কারণে গত কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতিমাসেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে উন্নয়নের বলি হয়ে হাতি মারা যাচ্ছে। স্থানীয়রা ছিল, রোহিঙ্গারা এসেছে। খালি রোহিঙ্গাদের উপর দোষ চাপিয়ে বসে থাকলে হবে না। হাতি হত্যা আগে কম ছিল, এখন বেড়েছে। কদিন পর যখন চট্টগ্রাম-কক্স রেল চালু হবে, তখন আরো অনেক হাতি মরবে। মেরে মেরে অল্প যে কয়টা আছে সবগুলোকে শেষ করতে পারলে তবেই আমাদের শান্তি হবে!
হিউম্যান এলিফ্যান্ট কনফ্লিক্ট নিয়ে অনেকে কথা বলে। এই কনফ্লিক্টের জন্য দায়ী আমরা। হাতি আমাদের ঘরে হামলা করতে আসেনি। বরং আমরা হাতির পথে গিয়ে ঘর তুলে হাতি মেরে চলেছি।
হাতি তাদের একই চলার পথ ব্যবহার করছে লাখ লাখ বছর ধরে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হাতির ডিএনএ ম্যাপে আঁকা থাকে সেই চলার পথের মানচিত্র। এর কোনো ব্যতিক্রম সাধারণত হয় না, অথচ ২০-৫০ বছর হলো আমরা সেখানে গিয়ে বন পাহাড় কেটে বাড়ি-ঘর বানিয়ে বিদ্যুতের ফাঁদ পেতে হাতি মারছি! এ কেমন সভ্যতার জন্ম দিলাম আমরা?
যারা কেরালার হাতি ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন, তাদের ধন্যবাদ৷ আপনাদের সরব অবস্থান থাকলে একটা চাপ তৈরী হয়৷ যেহেতু অন্য পেশার গ্রুপগুলো নিস্ক্রিয়, সেহেতু এখন আমাদেরই সক্রিয় হতে হবে। আমরা সক্রিয় হলে কাজ হবে৷ আমরা দেখেও না দেখার ভান করলে এমন চলতে চলতে দেশ থেকে বন্য হাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ এরা খুব অল্প পরিমাণেই আমাদের দেশে আছে।
হাতির কোনো দেশ-পাসপোর্ট হয় না৷ কেরালার হাতির মতো টেকনাফ-লামা-রামু-উখিয়ার হাতিগুলোও পৃথিবীর সন্তান। শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে মানুষের কাছে স্রষ্টার আমানত। কীভাবে পারেন একই সৃষ্টির বিনাশে সরব হয়ে আবার হঠাৎ করে নীরব হয়ে যেতে?
আরো পড়ুন-