গৃহবন্দী একঘেয়ে দিনগুলোতে কিটো ভাইয়ের উপস্থিতি যোগ করছে অন্যরকম একটা মাত্রা। কিটো ভাই ওরফে ইনান খুব সহজেই মানুষের আপন হয়ে উঠেছেন, মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন...

ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে থাকলে কিটো ভাইকে আপনার চেনার কথা। নাম শুনে চিনতে না পারলেও, যদি শোনেন যে ‘এ গেদু’ গানের গায়কের কথা হচ্ছে, তাহলে নিশ্চয়ই মুহূর্তের মধ্যে চিনে যাবেন। এই সময়ে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ এই তরুণ, তার একেকটা ভিডিওতে লক্ষ লক্ষ ভিউ, হাজার হাজার মানুষ শেয়ার করছেন তার বানানো ভিডিওগুলো।

আসল নাম মাশরুর রাব্বি ইনান। বরিশালে জন্ম, স্কুল-কলেজ জীবন কেটেছে সেখানেই। এখন পড়ছেন ঢাকার '‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস'’ এ। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি গেয়েছেন গান, গানের ছলেই তিনি সবাইকে করোনা থেকে সাবধান থাকতে বলছেন, বলছেন সচেতন হয়ে ঘরে সময় কাটানোর জন্যে। তার গান অবসর সময়ের বিনোদনের কারণ হয়ে উঠছে অজস্র মানুষের কাছে। ব্যক্তি উদ্যোগে যে কাজটা মাশরুর রাব্বি করছেন, সেটা যে কোন চ্যারিটির চেয়ে কম কিছু নয়। লেখক-সাহিত্যিক-সাংবাদিক আনিসুল হক যেমন বলেছেন, করোনার দিনগুলিতে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির একটি হচ্ছে এই কিটো ভাই, সেটার সঙ্গে আমিও পুরোপুরি একমত।

মাশরুর রাব্বি ইনানের কাছে গান গাওয়াটা শখ, গানের ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোন শিক্ষা না থাকলেও গানের প্রতি ভালোবাসাটা কমেনি কখনও। সেই ভালোবাসার বীজটা তার মধ্যে বুনে দিয়েছিলেন মা, ছেলেকে ক্ল্যাসিক্যাল গান শেখাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্ত হয়নি সেটা। না হলেও, গানের ভূতটা মাথা থেকে নামেনি ছেলের, তাই তো অবসর সময়ে পড়ে থাকেন গান নিয়েই। যেসব বাদ্যযন্ত্র বাজান, সেগুলোও ইউটিউব দেখে শেখা, নইলে শিখেছেন বড় ভাইয়ের কাছে। ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয়, ইনান তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

কিটো ভাই

কিন্ত মাশরুর রাব্বি ইনান কি করে কিটো ভাই হলেন? এর পেছনে রয়েছে মজার একটা গল্প, সেটা শোনা যাক ইনানের মুখেই- কিটো ভাই আসলে বেশ আগে থেকেই এসব ভিডিও বানাতো, গানের কভার করতো! তো একদিন কিটোভাই হুট করেই জনপ্রিয় কিটো-ডায়েট এর বিরুদ্ধে গিয়ে ভাত খাইতে চাওয়ার দাবী জানালো! আর মাছে ভাতে বাঙালীরা কি আর এই ব্যাক্তি কে ফেলতে পারে? হয়তো সেখান থেকেই হয়ে গেলাম কিটো ভাই।

আর কিটো ভাইয়ের জনপ্রিয়তা? সেটা এসেছে ‘এ গেদু’ সিরিজের মাধ্যমে। করোনাভাইরাস যখন বাংলাদেশে ডানা মেলছে ধীরে ধীরে, মানুষজন আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুর খবর আসছে, বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত, জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হচ্ছে বারবার, তখন ইনান ভাবলেন, মানুষকে ঘরে থাকতে বলার জন্যে কি করা যায়? এমন নয় যে তার কথা হাজার হাজার মানুষ শুনবে, কিন্ত দশজন শুনলে সেটাও তো সার্থকতা! সেই ভেবেই বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় গাইলেন গান, সেই গানের কথা-সুর আর বাজনা, সবকিছুই তার নিজের।

শঙ্কা ছিল, আঞ্চলিক ভাষায় গাওয়া গানে মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, কি বলবে সবাই! ফলাফলটা দেখে চমকে গেছেন ইনান নিজেও। ইতিমধ্যে তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ দেখেছে ‘এ গেদু, সমেস্যা কি’ শিরোনামের গানটি। শেয়ার করেছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ, গানটিতে রিয়্যাক্ট করেছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ, মন্তব্য জানিয়েছে ৩ হাজার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ভাইরাল সেটি হাজার হাজার মানুষের নিউজফিডে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই গান। লোকজন নিজেরা তো দেখছেই, বন্ধুবান্ধবের সাথেও শেয়ার করছে দলে দলে।

কিটো ভাই

এই সিরিজের পরের গানটাও চলে এসেছে ফেসবুকে, জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে সেটিও। হ্যাপি সং নামের এই গানটিও ভাইরাল হবার পথে, বরং প্রথম গানের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে যাবে এটি। কিটো ভাইয়ের গাওয়া গানের সহজবোধ্য কথাগুলো মানুষকে আকর্ষণ করছে, তার চোখ-মুখের এক্সপ্রেশন মানুষকে হাসাচ্ছে, গৃহবন্দী একঘেয়ে দিনগুলোতে কিটো ভাইয়ের উপস্থিতি যোগ করছে অন্যরকম একটা মাত্রা। কিটো ভাই ওরফে ইনান খুব সহজেই মানুষের আপন হয়ে উঠেছেন, মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন।

মানুষকে হাসানো নাকি দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিণ কাজ। কোন রকমের ভাঁড়ামি না করেই এই কাজটা অবলীলায় করে চলেছেন ইনান, দিনের পর দিন তিনি মানুষকে বিনোদন দিয়ে চলেছেন, সেই বিনোদনের আড়ালেই করছেন মানুষকে সতর্ক করার কাজটাও। গান নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেন, সামনে এগিয়ে যেতে চান গান নিয়ে। এলেবেলে নামের একটা ব্যান্ড আছে তার, পাশাপাশি সামাজিক নানা সমস্যায় কিটোভাই চরিত্রটাকেও জীবন্ত রাখতে চান সবসময়। কিটোভাই আর ইনান, একই মানুষের ভেতরে বসত করা দুটো চরিত্র তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাক দুরন্ত গতিতে, এটাই আমাদের কামনা…


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা