কেনিয়ায় শিশু-ব্যবসা ছড়াচ্ছে মহামারীর বেগে। সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা কারনে এখানকার মায়েরা সদ্যোজাত সন্তানকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে, বিনিময়ে পাচ্ছে নামমাত্র টাকা। এভাবেই এগোচ্ছে এক অমানবিক সমাজের আখ্যান!

কেনিয়ায় শিশু-ব্যবসা সাম্প্রতিক সময়ে মহামারী আকার ধারণ করেছে। গত মাসেই কেনিয়ার নাইরোবিতে শিশু ব্যবসার রহস্য উদঘাটনের পরে পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করে। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরো সব চমকে যাওয়ার মত তথ্য। জানা যায়- কেনিয়ার অনেক মা স্বেচ্ছায় নিজেদের দুধের সন্তানকে তুলে দিয়েছে শিশু-ব্যবসায়ীদের হাতে, অল্প কিছু টাকার জন্যে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এরকমটা হলো? মায়ের অমূল্য স্নেহ কেন বিকিয়ে গেলো অল্প কিছু টাকার কাছে? জানবো এসব নিয়েই।

প্রথমে একটা গল্প দিয়ে শুরু করি৷ নাইরোবির একটি মেয়ে, কায়ক্লেশে জীবন চালাতো। বাইশ বছর বয়সে তিনি এক পুরুষকে বিয়ে করেন। সেই সাথে এও ভাবেন - জীবনটা বোধহয় একটু স্থির হবে এবার। কিন্তু বিধাতার নিয়ম বোঝা বড় দায়। বিয়ের কয়েক মাসের মাথাতেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। ঘরে এক সন্তানও জন্মায়। সন্তান জন্মের তিন দিনের মাথায় মেয়েটির স্বামী মারা যায়। সীমাহীন দারিদ্র্য নেমে আসে মেয়েটির জীবনে৷ এরপর মেয়েটি, দুধের শিশুটিকে তার নানীর কাছে রেখে শহরে যান কাজ খুঁজতে। সেখানে একটা কাজ জোটানোর পরে অন্য আরেকজন মানুষের সাথে তার দেখা হয়। তার সাথে সম্পর্কও হয় মেয়েটির। মেয়েটিকে অন্তঃসত্ত্বা বানিয়ে লোকটি পালিয়ে যায়। মেয়েটি বিপাকে পড়ে যায় আবার। তখন মেয়েটি বাধ্য হয়েই তার সন্তানকে বিক্রি করে দেন, অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে। টাকার হিসেবে সে টাকার পরিমান শুনলে শিউরে উঠবে যে কেউ!  মাত্র বাইশশো টাকার বিনিময়ে বাচ্চাকে বিক্রি করেছিলো কেনিয়ার এই মেয়েটি।

কেনিয়ার প্রেক্ষাপটে এরকম গল্প আরো আছে। অনেক মেয়েই নিদারুণ দারিদ্র‍্যের বলি হয়ে সদ্যোজাত সন্তানকে বিক্রি করে দেন শিশু-ব্যবসায়ীদের হাতে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যেমন অনেক মেয়েই কাজের সন্ধানে শহরে এসে পুরুষদের সাথে অনিরাপদ সম্পর্কে জড়িয়েছে, এরপর সন্তানের জন্ম দিয়ে দিশেহারা হয়ে সেই সন্তানকে বিক্রি করেছে ব্যবসায়ীদের কাছে।

আফ্রিকার মধ্যে কেনিয়ায় মেয়েদের গর্ভধারণের হার সবচেয়ে বেশি৷ আশ্চর্যের বিষয়, সেখানেই মেয়েদের যৌন শিক্ষা নিয়ে নেই কোনো ঠিকঠাক ধারনা। ফলে যেটা হচ্ছে, অনিরাপদ সম্পর্ক প্রচুর হচ্ছে। অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক শিশুর জন্ম হচ্ছে। বৈধভাবে সন্তান দত্তকের বিষয়  নিয়েও এই দেশে আছে অনেক জটিলতা। তাছাড়া অ্যাবরশন নিয়েও আছে কিছু নিষেধাজ্ঞা। কোনো নারী এখানে গর্ভের সন্তান না চাইলে সরকারের তরফ থেকে এই বিষয় সমাধান করার জন্যে নেই কোনো উদ্যোগ। সবকিছু মিলিয়েমিশিয়েই তাই এখানে শিশু-ব্যবসা বাড়ছে ক্রমশ। এমনও হচ্ছে গর্ভবতী নারীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রসববেদনা উঠিয়ে সন্তান বের করে এনে বিক্রি করা হচ্ছে। এতটাই অমানবিক পর্যায়ে চলে গেছে সেখানের শিশু-ব্যবসার অবস্থা।

অল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছে নিষ্পাপ সব জীবন! 

বাবা-মা'র জন্যে 'সন্তান' হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার। সেই উপহার কে যখন কেউ সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়, তখন বুঝতে হবে, সামাজিক কাঠামোর মধ্যে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। কেনিয়ার এই ক্রমবর্ধমান শিশু-ব্যবসার সাথে শুধু টাকাপয়সা-ই না, সরকারের উদাসীনতা, প্রশাসনের নজরদারিতার অভাব, দারিদ্র‍্য, সামাজিক সংস্কার ও অনুশাসনের অভাব...এগুলোও অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। যার সম্মিলিত ফলাফল হচ্ছে শিশু-ব্যবসার মহামারী আকার৷ এভাবে আর কতদিন চলবে, জানা নেই কারো। রাষ্ট্রযন্ত্রও কেন ঠুটোঁ জগন্নাথ হয়ে বসে আছে, সেটিও আমাদের কাছে ঠিক বোধগম্য নয়।
 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা