মুফতি ইব্রাহিমরা আসলে করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
শুনেছিলাম, শেষ যুগে নাকি মূর্খেরা মহাপণ্ডিত উপাধি পাবে, জ্ঞানীরা লজ্জায় লুকাবে, নামবে অজ্ঞতার অন্ধকার। কথাগুলো যে সত্য, তাতে এখন কোন সন্দেহই নেই।
ধর্মের নাম করে উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলা লোকজনের অভাব নেই উপমহাদেশে। এদের আবার প্রচুর ভক্ত-আশেকান থাকে, মুরিদেরা দিনরাত এদের নাম জপে। হিন্দু হোক বা মুসলমান, ভারতীয় হোক বা বাংলাদেশী- একটা শ্রেনীর মানুষের কাছে এসব বকধার্মিকদের জনপ্রিয়তা বরাবরই তুঙ্গে থাকে। এরকমই একজন হচ্ছেন মুফতি কাজী ইব্রাহিম। নাম শুনে যদি না চিনে থাকেন, তাহলে বলে দেই, ইনি হচ্ছেন সেই মহামানব, যিনি এন্টারকোটিক নামের আস্ত একটা মহাদেশ আবিস্কার করে ফেলেছেন কিছুদিন আগে! তিনি এবার করোনাভাইরাস নিয়ে পড়েছেন, তিনি নাকি করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিস্কার করে ফেলেছেন! তাও আবার স্বপ্নে!
ইউটিউবে এক ভিডিওতে দেখলাম, কাজী ইব্রাহিম বলছেন, তাকে সুদূর ইতালি থেকে মামুন মারুফ নামের একজন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিনের ফর্মূলা পাঠিয়েছেন। মামুন মারুফ এই ফর্মূলা স্বপ্নে পেয়েছেন এবং স্বপ্নেই নাকি তিনি করোনা ভাইরাসের সাথে দীর্ঘ কথোপকথন চালিয়েছেন! ভাইরাসের সাথে মানুষ যে স্বপ্নেই কথা বলতে পারে, বাস্তবে নয়- এই বোধটুকু কাজী ইব্রাহিমের আছে, এজন্যে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম সাথে সাথে।
যাই হোক, ইব্রাহিম সাহেব বলে চললেন- মারুফ মামুন এবং করোনা ভাইরাসের মধ্যকার কথোপকথনে খোদ করোনা মামুনকে ভ্যাক্সিনের ফর্মূলা জানিয়ে দিয়েছে। সেটি হলো- 1.q7+6=13। কাজী ইব্রাহিম সবার উদ্দেশ্যে ফর্মূলাটি জানিয়ে বলেছেন, 'এটি কী, সেটা আমি জানি। কিন্তু এখন বলবো না।' মামুন মারুফ কাজী ইব্রাহিমকে বলেছেন- ‘হুজুর, আমি তো জানি আপনি এগুলো নিয়ে গবেষণা করেন, তাই আপনাকে জানিয়েছি।’ মামুন নিজে ও’ষুধ তৈরী করছেন দাবি করে ফর্মূলার ব্যাখ্যা কাউকে না জানানোর শর্তে স্বপ্নেপ্রাপ্ত ফর্মূলাটি কাজী ইব্রাহিমকে দিয়েছেন। কাজী ইব্রাহিম এটি কোরআন থেকে প্রাপ্ত বলে দাবি করেছেন।
মামুন মারুফ এবং করোনা ভাইরাসের মধ্যকার এই কথোপকথনের বিষয়ে কাজী ইব্রাহিম বলেছেন, করোনা জানিয়েছে, সে বাংলাদেশে আসবে না। কারন বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বসবাস। তবে সে পৃথিবী থেকে ১০০ কোটি মানুষের মৃ’ত্যু ঘটাবে। কারন তারা অমুসলিম, নাস্তিক বা মুসলমানের ওপর অত্যা’চারকারী। তবে বাংলাদেশের নাস্তিকদের সে ছাড়বে না বলে জানিয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই লোক মানুষজনের সামনে স্টেজে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোনে কথাগুলো বলছে, তার এসব আজগুবি এবং অযৌক্তিক কথাবার্তা অনেকে শুনছেও! ইউটিউব এবং ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে ভিডিওগুলো, একদল অন্ধের মতো বিশ্বাস করছে এসব কথায়, আরেকদল হাসাহাসি করছে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে, মজা করে উড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্ত কেউ প্রতিবাদ করছে না। শুনেছিলাম, শেষ যুগে নাকি মূর্খেরা মহাপণ্ডিত উপাধি পাবে, জ্ঞানীরা লজ্জায় লুকাবে, নামবে অজ্ঞতার অন্ধকার। কথাগুলো যে সত্য, তাতে এখন কোন সন্দেহই নেই।
একটা লোক প্রকাশ্যে এসব মনগড়া কথাবার্তা বলছে, মানুষজন তাকে ভাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে তার কথা শোনার জন্যে, তাকে 'মাওলানা' বা 'আলেম' ভাবছে- এর চেয়ে বড় বোকামি আর কি হতে পারে? ধর্মের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করে চলা লোকগুলোকে কেউ থামাচ্ছে না, এরা যে ইসলাম ধর্মটাকে হাসির বস্তুতে পরিণত লরেছে, সেটা বুঝতে পেরেও অনেকের বিকার নেই। ওয়াজের নামে এই লোক যে বকওয়াজ করে চলেছে দিনের পর দিন, তাতে বাধ সাধছে না কেউই!
কাজী ইব্রাহিমের পাগুলে প্রলাপ কিন্ত এবারই প্রথম নয়। অবাস্তব আর উদ্ভট বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলার ইতিহাস তার বহু পুরনো। এর আগে এই লোক শিশু জন্মের পর টিকা দেয়াকে নাজায়েজ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, টিকা দিলে এইডস হয়। পুরুষদের টেস্টোস্টেরন উৎপাদন হয় পায়ের গোড়ালি থেকে, রাত ৯টার পর ঘরের লাইট জ্বালানো থাকলে ক্যান্সার হয়, মাটির নিচে আরও ৭টা পৃথিবী আছে, যেখানে একটি অঞ্চলের নাম ‘এন্টারকোটিক’, সেখানে হিটলার লুকিয়ে আছে। তিনি উস্কানি দিয়ে বলেছেন, জন্ম’নিয়ন্ত্রণ হারাম। অধিকহারে সন্তান জন্ম দিয়ে কাফেরদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি হয়ে তাদের প্রতিহত করতে।
কাজী ইব্রাহিম যেটা করছেন, সেটা স্ট্যান্ডাপ কমেডিয়ানের কাজ, লোক হাসানো। অথচ তিনি এসব করছেন ওয়াজের নাম দিয়ে। শূন্য আইকিউ নিয়ে ঘোরা প্রচুর লোকজন তার কথাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছে, তার সমালোচনাকে 'ইসলামের সমালোচনা' হিসেবে ভাবছে, এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর। ভারতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে হিন্দু মহাসভা নামের এক সংগঠন গরুর গোবর আর গোমুত্র পানের আসর বসাচ্ছে, এদেশে কাজী ইব্রাহিমরা উদ্ভট সমীকরণ সাজিয়ে ভ্যাক্সিন আবিস্কার করে ফেলছে- ধর্মের নাম ভাঙিয়ে খাওয়া এই লোকগুলো আসলে করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর, সেটা আমরা এখনও বুঝতে পারছি না...