নগ্ন ছবি দেখবেন? ফ্রি অফার নয় কিন্ত, মাত্র দশ ডলার খরচা করলেই আপনি পাবেন মডেল কেলেন ওয়ার্ডের নগ্ন দেহের একটি ছবি।
নগ্ন ছবি দেখবেন? ফ্রি অফার নয় কিন্ত, মাত্র দশ ডলার খরচা করলেই আপনি পাবেন মডেল কেলেন ওয়ার্ডের নগ্ন দেহের একটি ছবি। তবে টাকাটা কেলেনকে দিতে হবে না, আপনার দেয়া দশ ডলার যোগ হবে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, সেখান থেকে সরাসরি চলে যাবে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণীদের সাহায্য করার জন্যে তোলা ফান্ডে।
অস্ট্রেলিয়া পুড়ছে, দাবানলে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ, পুড়ে মারা গেছে পঞ্চাশ কোটি প্রাণী। সেই সংখ্যাটা বাড়ছে ক্রমশ, দল-মত নির্বিশেষে লাখো অস্ট্রেলিয়ান এগিয়ে এসেছেন এই বোবা জীবগুলোকে সাহায্য করার জন্যে, ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই। সাবেক ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন তার ব্যাগী গ্রীন ক্যাপটা নিলামে তুলেছেন অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণী আর মানুষগুলোকে সাহায্য করার জন্যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট নিজেই মাঠে নেমে গেছেন দমকল কর্মীদের সঙ্গে, চালাচ্ছেন উদ্ধার অভিযান।
তবে এসবের তুলনায় কেলেন ওয়ার্ডের সাহায্যটা একটু অদ্ভুত লাগবে অনেকের কাছে। ইন্সটাগ্রাম আর টুইটারে জনপ্রিয় এই মডেলের অনুসারী আছে ত্রিশ হাজারেরও বেশি। তাদের কাছে কেলেন আর্জি জানিয়েছেন, সবাই যাতে অস্ট্রেলিয়ার এই দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আহবান জানিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, নিয়েছেন অদ্ভুত এক উদ্যোগ। তার মাধ্যমে যে কেউ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে গঠিত ফান্ডে দশ ডলার দান করলেই সেই ব্যক্তিকে নিজের নগ্ন দেহের একটি ছবি উপহার হিসেবে দেবেন কেলেন। পাঁচ হাজার ডলার দান করে এই মিশনের শুরুটা করেছেন কেলেন নিজেই।
ইন্সটাগ্রাম এবং টুইটারে এই বিষয়ে একটা পোস্ট করে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন কেলেন। ঘুম থেকে উঠে দেখেন, হুলস্থুল পড়ে গেছে চারদিকে, তার পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেছে কয়েক ঘন্টার মধ্যে। দলে দলে লোকজন এসে কমেন্ট করছে, রিটুইট করছে, সাধ্যমতো দান করছে ব্যাংক একাউন্টে। যার সামর্থ্য কম সে দশ ডলার দিচ্ছে, যার সামর্থ্য ভালো সে পাঁচ হাজার ডলারও দান করছে। কেলেনও তার কথা রেখেছেন, যোগাযোগ করছেন দাতাদের সঙ্গে। ডোনেশনের টাকার হিসেব রাখার জন্যে একজনকে নিয়োগও করেছেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, পোস্টটা ভাইরাল হবার পরে ইন্সটাগ্রাম কর্তৃপক্ষ কেলেনের একাউন্ট ডিজেবল করে দিয়েছে, তাদের নীতির সঙ্গে ব্যাপারটা সাংঘর্ষিক বলেই। মানবতার চেয়ে তাদের কাছে নীতি বড়! তবে তাতে দমে যাননি কেলেন, টুইটারেই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। ইতিমধ্যে প্রায় পনেরো লাখ ডলার চলে এসেছে একাউন্টে, বাংলাদেশী টাকায় যেটা প্রায় সাড়ে বারো কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে একটা পয়সাতেও কেলেন হাত ছোঁয়াবেন না, পুরোটাই সরাসরি চলে যাবে অস্ট্রেলিয়ায়।
ক্যালিফোর্নিয়ায় বাস করা কেলেন জানেন ঘর হারানোর বেদনা কী। ২০১৭ সালে এক দাবানলে নিজের বাড়িটাকে পুড়ে ছাই হতে দেখেছিলেন তিনি, সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। আর তাই অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের সংবাদ শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি, নিজের সামর্থ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আর্ত মানবতার সেবায়। তিনি পেশাদার মডেল, সেটাই তিনি ভালো পারেন, আর তাই সেটাকে উপজীব্য করেই নেমেছেন অর্থ সংগ্রহের মিশনে। অনেকেই তাকে ব্যাঙ্গ করছে, টিটকারী মারছে, সেসবে তোয়াক্কা করছেন না তিনি। কেলেনের কথা একটাই- ওসব ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপে কারো প্রাণ বাঁচবে না, নতুন বাড়ি বানানো যাবে না। আমাদের পাঠানো এই টাকাগুলো দিয়ে সেটা হবে।
আমাদের দেশে কোন দুর্ঘটনায় যদি বিদেশ থেকে কেলেনের মতো কোন মডেল এরকম নগ্ন ছবির বিনিময়ে ফান্ড কালেকশান করে সাহায্যের জন্যে পাঠাতেন, তাহলে দেখা যেতো, ধর্মান্ধ তৌহিদী জনতা সেটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে, এই টাকা কেন হারাম, সেসব নিয়ে নানামুখী ফতোয়া চলে আসতো। সবার ওপরে মানবতা যে সত্য, সেটা ধর্মান্ধদের মোটা মাথায় ঢুকতো না কোনভাবেই।
কেলেন ওয়ার্ডের এই খবরটার নিচেও দেখবেন অনেকে ফতোয়া ঝাড়বে, তাকে গালাগাল দেবে। এই লোকগুলোর জীবনে অর্জন বলতে কিছু নেই, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ফালতু ফতোয়াবাজীতেই এরা ওস্তাদ। ধরে নিলাম কেলেন ওয়ার্ড খুব খারাপ কাজ করেছেন, কিন্ত সাড়ে বারো কোটি টাকা অনুদান মানুষের কাছ থেকে তুলে তিনি ঠিকই অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন, সেই টাকাটা দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের কাজে লাগবে। আর বাংলাদেশে বসে ভালো মানুষ হয়ে ফতোয়াবাজী ছাড়া আপনি আর কী করেছেন, বলুন তো শুনি?