কতটা অসহায় হলে একটা মেয়েকে মাঝ নদীতে লাফিয়ে পড়তে হয়!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

ছবিটা দেখে মনে হতে পারে, একটা কিশোরী মেয়ে বুঝি সাঁতার কাটার জন্য পুকুরে নেমেছে। কিন্ত ছবিটার গল্প এমন নয়, বরং ভয়ংকর এবং রোমহর্ষক।
খবরে পড়লাম, কাজের সন্ধানে ভোলার তজুমদ্দিন থেকে লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল ১৬ বছরের এক কিশোরী। চরফ্যাশন-ঢাকা নৌরুটের কর্ণফুলী-১৩ নামের লঞ্চে ওঠে সে। লঞ্চে ওঠার পর থেকেই কয়েকজন স্টাফ তাকে কুপ্রস্তাব দিতে শুরু করে এবং উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এক পর্যায়ে লঞ্চের কেবিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্টাফরা তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করলে নিরুপায় হয়ে মেঘনা নদীতে ঝাঁপ দেয় ওই কিশোরী। শুধু তাই নয়, তাকে নদীতে ফেলে রেখেই লঞ্চ চলে যায় ঢাকার দিকে! কয়েক ঘন্টা ভেসে থাকার পর মাছধরা জেলেরা নদী থেকে মেয়েটাকে উদ্ধার করেছে!
ওই কিশোরী জানিয়েছে, নদীতে লাফ দেয়ার পর লঞ্চ থেকে একটা বয়া ফেলা হলেও স্রোতের কারণে সেটি ধরতে পারেনি সে। পরে তাকে উদ্ধার না করেই লঞ্চটি সেখান থেকে চলে যায়। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর জেলেরা তাকে উদ্ধার করে। কিশোরীকে উদ্ধারকারী জেলে রায়হান জানিয়েছেন, তারা নদীতে মাছ ধরার জন্য ট্রলার প্রস্তুত করছিলেন। এমন সময় চিৎকার শুনে তারা কিশোরীকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। লঞ্চ থেকে লাফ দেয়ার সময় ওই কিশোরী হাতে আঘাত পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ পাবার পরে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশ ওই লঞ্চের তিন কর্মীকে আটক করেছে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে। তারা হলো- বাবুর্চি মো. হোসেন ওরফে গিয়াস উদ্দিন, এবং কর্মী শাকিল (১৯) ও শাকিল (১৮)। মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

বাসে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির ঘটনা কিছুদিন আগেও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল আমাদের জন্য। করোনার কারণে গণপরিবহন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কয়েক মাস এরকম ঘটনার কথা শোনা যায়নি। যেই না গণপরিবহন চালু হয়েছে, অমনি এসব ঘটনা সামনে আসা শুরু হয়ে গেছে। অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে, আটক এই তিন কর্মীর পক্ষে লঞ্চের মালিক তদবির শুরু করেছেন, তাদেরকে নির্দোষ হিসেবেও দাবী করেছেন তিনি। অভিযোগ আছে, এর আগেও এই কর্মীদের বিরুদ্ধে নারীদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ এসেছে, কিন্ত বরাবরই পার পেয়ে গেছে তারা।
ঠাণ্ডা মাথায় একবার ভেবে দেখুন, কতটা বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখে পড়লে একটা মেয়ে চলন্ত লঞ্চ থেকে উত্তাল মেঘনায় ঝাঁপ দেয়? এটা তো আত্মহত্যার শামিল, সেই কাজটা মেয়েটা কেন করেছে? নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রমত্তা নদীতে।
চাইলে এই ছবিটাকে সিম্বলিক হিসেবে ধরতে পারেন। এটা আসলে গোটা বাংলাদেশেরই চালচিত্র। মেঘনা নদীটা হচ্ছে বাংলাদেশ, আর এই কিশোরী মেয়েটা আমাদের সবার প্রতিমূর্তি। বছরের পর বছর ধরে ধর্ষক-নিপীড়কদের বিচার নিশ্চিত করতে না পারায় এভাবেই উত্তাল মেঘনার বুকে ঝাঁপ দিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের সম্ভ্রম বাঁচানোর সংগ্রাম করতে হয় আমাদের...