তালেবানদের অভয়ারণ্যে মেয়েদের প্রথম জিম: অসম্ভব যেভাবে সম্ভব হলো!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আপনি ভাবতেই পারেন, একটা জিম নিয়ে এত মাতামাতি করার কি আছে? কিন্ত জায়গাটা আফগানিস্তানের কান্দাহার, তালেবানদের অভয়ারণ্য; যেখানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়াই নিষেধ, সেখানে আবার নারীদের জন্য জিম খোলা হবে? অসম্ভব!
সারা বিশ্বে সাম্প্রতিক সময়ে নারী অধিকার নিয়ে নানারকম কথাবার্তা হচ্ছে। নারী-পুরুষের সমতাবিধানে নানারকম প্রচেষ্টাও চলছে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে। আবার এমন সব দেশের ঘটনাও আমরা জানছি, যারা নারীকে এখনো রাখছে মলাটের অভ্যন্তরে, লোকচক্ষুর বাইরে। সেরকমই এক দেশ আফগানিস্তান। সে দেশে তালিবানদের ত্রাসের রাজত্ব, নারীদের মানবেতর অবস্থান নিয়ে অনেক লেখালেখিই হয়েছে আগে পরে। তাই সেগুলো নিয়ে এখন লেখা অনেকটাই চর্বিত চর্বন হয়ে যাবে।
তবে নারীদের জন্যে চরম প্রতিকূলের আফগানিস্তানেও সম্প্রতি হলো অন্যরকম এক ঘটনা। শুধুমাত্র মেয়েদের জন্যে একটি জিম খোলা হলো। তাও খোলা হলো কান্দাহারে, যেটি খোদ তালেবানদের জন্মভূমি এবং এখনো ঔ এলাকার নারীদের নানা কারণে বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়। সেরকমই এক স্থানে জিম খোলা একটি অন্যরকম ঘটনাই। বলে রাখা ভালো, আফগানিস্তানের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে এটিই একমাত্র জিম।
এই জিমের মালিক মরিয়ম দুরানি, যিনি নিজেও প্রচণ্ড সাহসী এক মহিলা। জিম তৈরী করার সময়ে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, নানাভাবে শাসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাও তিনি লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। শেষপর্যন্ত খুলে ফেলেছেন জিম। এতেই থেমে নেই তার কাজ। নারীদের জন্যে রেডিও স্টেশনের পরিচালনা কার্যক্রম দেখাশোনা এবং কান্দাহারের প্রাদেশিক কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্বও করছেন তিনি। দুইবার আত্নঘাতী হামলাও হয়েছে তার উপরে। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। তাঁর সাহসী কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তৎকালীন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার কাছ থেকে পেয়েছেন 'ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড'।
এই জিমের খরচ খুবই কম এবং এই জিমের পুরোটাই নারীরা তত্ত্বাবধান করেন। নিরাপত্তা থেকে টাকাপয়সা লেনদেন, সব দায়িত্বই তাদের উপর ন্যস্ত। দুরানি এই জিমের মাধ্যমে নারীদের স্বাস্থ্যগত উন্নয়নের পাশাপাশি চেষ্টা করছেন তাদেরকে স্বাবলম্বী করারও। তাই জিমের নিয়ন্ত্রণের পুরোটাই দিয়ে দিয়েছেন তিনি নারীদের হাতে৷ প্রথম দিকে আফগান পুরুষেরা এই জিমের তীব্র বিরোধিতা করলেও এখন তারাও ক্রমশ প্রশংসা করছেন জিমের। নারীদের এখন পরিবার থেকেই উৎসাহিত করছে জিমে আসার জন্যে। আস্তে আস্তে অংশগ্রহণও বাড়ছে। এক বছর আগে খোলা জিমের সদস্যসংখ্যা ত্রিশেরও বেশি।
এই ছোট্ট ঘটনাটুকু আমাদের আশাবাদী করে প্রচণ্ড। আফগানিস্তানের মত দেশে প্রগতিশীল কাজকর্ম চলছে, নারীদের আত্মনির্ভরশীল করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে, নারীদের জন্যে বর্তমানের প্রচণ্ড অস্থিতিশীল, সে সাথে টালমাটাল পরিবেশে দাঁড়িয়ে এটি অবশ্যই স্বস্তির খবর।
আশা করা যায়, ভালো সময় আসবেই সামনে। সে সময়ের জন্যেই আমাদের প্রত্যাশা।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন