ভাড়া নিয়ে ঝগড়া লেগেছে। তারপর যাত্রী এবং চালক দুজনেই দৌড় দিয়ে ঢুকে গেছে কামরান সাহেবের বাসায়। কামরান সাহেব সময় নিয়ে আবার ১০ টাকা ভাড়ার জটিল সমস্যাটির সমাধানও করে দিয়েছেন!

ছড়ার পাড়ে কামরান চাচার বাসার ঠিক উলটা দিকে আমাদের বাসা ছিলো। প্রায় প্রতিদিন সকালেই দেখা হতো। হাত তুলে সালামের উত্তর দিতেন। তারপর দেখতাম, হাটছেন অথবা গল্প করছেন কোনো রিক্সাচালক বা ক্ষুদ্র দোকানদার বা সবজী ব্যবসায়ীর সাথে।

দুই দফা গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এতকিছুর পরেও নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান ছিলেন খুবই উদাসীন। ছড়ার পাড়ে তাঁর বাসায় কোনো গেইট নেই। একজন দারোয়ানও নেই। যে যখন ইচ্ছা ঢুকে পড়তো। 

তাঁর বাসার সামনেই ছিলো রিক্সা স্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড এবং কয়েকটা দোকান। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটতো। ভাড়া নিয়ে ঝগড়া লেগেছে। তারপর যাত্রী এবং চালক দুজনেই দৌড় দিয়ে ঢুকে গেছে কামরান সাহেবের বাসায়। কামরান সাহেব সময় নিয়ে আবার ১০ টাকা ভাড়ার জটিল সমস্যাটির সমাধানও করে দিয়েছেন!

বড় গাড়ির ধাক্কায় সবজীওয়ালার গাড়ি থেকে সবজী পড়ে নষ্ট হয়ে গেলো। সবজীওয়ালা কাউকে কিছু না বলে দৌড় দিয়ে ঢুকে গেলো কামরান সাহেবের ড্রয়িং রুমে। তারপর তাঁকে হাত দিয়ে ধরে বাইরে এনে বললো, 'এই দেখেন, আমার সব সবজী ফেলে দিয়েছে...' কামরান সাহেব এইটারও সমাধানও করতেন।

সবার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল

ছড়ার পাড়ের কোনো গরীব ছেলে বিয়ে করেছে। বৌকে নিয়ে সে সোজা চলে যেত কামরান সাহেবের বাসায়। কামরান সাহেব লুঙ্গি পরে বের হয়ে আসতেন। নতুন স্বামী স্ত্রীকে টাকা পয়সা দিয়ে বলতেন, 'ধুর ব্যাটা, টেনশন করিস না।'

অতি সাধারণ এই জীবনযাপন তাঁকে অসাধারণ করে তুলেছিল।
ভোটের ফলাফল যা-ই হোক, সিলেটের খেটে খাওয়া এবং শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে তাঁর যে জনপ্রিয়তা সেটা যেকোনো রাজনীতিবিদের জন্য ঈর্ষণীয় হতে পারে। রাজনীতির উদ্দেশ্য যদি হয় দুঃখী মানুষের কাছে যাওয়া- তাহলে বদরউদ্দিন আহমেদ সেখানে পুরোটাই সফল।

অন্য ভুবনে ভালো থাকবেন, কামরান চাচা। এই চলে যাওয়ার সংবাদটা শোনার জন্য আপনার শহর সিলেট একদমই প্রস্তুত ছিলোনা।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা