"কামরানের লাশ এক মিনিটের জন্যে হলেও যেন সিসিকে আনা হয়"
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

এই দাবী করছেন কামরানের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড়ো প্রতিপক্ষ মেয়র আরিফ৷ দাবী করেই শেষ নয়, সাবেক এই মেয়রের জন্য নিজ উদ্যোগে শোক বই খুলেছেন তিনি।
কামরানের অসুস্থতার সময়ে সাবেক মেয়রের জন্য দোয়ার আহবান জানিয়েছিলেন আরিফ। মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র আরিফ ছুটে গেছেন কামরানের বাসায়, লাশবাহী গাড়িকে প্রটোকল দিয়ে নিয়ে এসেছেন সিলেটের মাটিতে। কামরানের অন্তিম শয্যার জায়গা নিজে গিয়ে তদারকি করেছেন। সবশেষে বলেছেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনগণের জন্য কামরানের যে অবদান...তার জন্য অন্তত এক মিনিটের জন্যে হলেও সাবেক নগরপিতার লাশ সিসিক ভবনে রাখা হয়।
কোনো আওয়ামীলীগ নেতার প্রতি সরাসরি রাইভাল কোনো বিএনপি নেতার এমন ট্রিবিউট প্রায় রূপকথার গল্পের মতোই শোনায়। অথচ সেটাই এখন সত্যি।
পুরো দেশে বিএনপি নামক দলের অস্তিত্বই যখন খুঁজে পাওয়া ভার, তখনো সিলেট শহরে বিএনপির বিশাল বিশাল তোরণ দেখা যায়। দেশের একমাত্র অঞ্চল হিসেবে সিলেটে এখনো বিরোধী রাজনীতি কিছুটা হলেও অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এখনো এখানে প্রতিপক্ষকে সমূলে উপড়ে ফেলার তাড়না দেখা যায় না।

এই যে সম্প্রতির অনন্য উদাহরণ, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব ছিল বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের। নিজের ক্ষমতার সময়ে আরিফ সাহেবের মতো বিরোধী নেতাদের তিনি উপড়ে ফেলে দিতে চাননি। রাজনীতিকে রাজনীতি হিসেবে দেখেছেন, পেশীশক্তি হিসেবে নেননি।
মৃত্যুর পর জীবনের এই মহত্বের প্রতিদান পাচ্ছেন তিনি। যারা তাঁকে ভোট দেননি, ভোটের সময়ে যারা তাঁর বিরুদ্ধে সরব ছিলেন, তারাও আজকে শোকাহত। সবচেয়ে বড়ো প্রতিপক্ষ আজকে তাঁর লাশের অভিভাবক হয়ে গেছেন।
জীবনের কৃতকর্ম মৃত্যুর পরে আয়না রূপে প্রতিক্রিয়া দেখায়। একজন মানুষ হিসেবে, নেতা হিসেব বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের হয়তো অনেক ভুল ছিল। কিন্তু যেই ভিজিবল শুদ্ধতা ও মহত্ত্ব তিনি দেখিয়েছিলেন, সেটার প্রতিদানে সমান সম্মান শেষ বেলায় অর্জন করে নিচ্ছেন।
পেশীশক্তির জয় খুব বেশিদিন থাকে না। যেটা থাকে সেটা হলো শ্রদ্ধা। কামরান শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকবেন, থাকবেন দেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম বিদ্বেষপূর্ণ সময়ে সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে।