একে-৪৭ হাতে তালেবানদের একাই রুখে দিয়েছিলো ১৪ বছরের যে মেয়েটি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'পোয়েটিক জাস্টিস' টার্মটি সম্ভবত আমরা সবাই শুনেছি। যেখানে দিনশেষে ভালো মানুষ জেতে, খারাপ মানুষ হারে। ভিলেনের কার্যকারণই নির্ধারণ করে তার ভাগ্য। সেই পোয়েটিক জাস্টিসেরই এক ছোটখাটো দৃশ্যায়ন হয়ে গেলো সম্প্রতি, আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশে। যে প্রদেশ আফগানিস্তানের সবচেয়ে পশ্চাৎপদ এবং অনুন্নত প্রদেশ। এই প্রদেশের যে ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে একের পর এক ঝড় তুলছে, দিচ্ছে অনুপ্রেরণার ইঙ্গিত, সে গল্পটিই বলা যাক বরং।
আফগানিস্তান বেশ কয়েকদিন ধরেই টালমাটাল #whereismyname মুভমেন্ট নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে এ তথ্য সবার স্মার্টফোনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। নারীরা আস্তে আস্তে তাদের খোলস ছেড়ে বেরোচ্ছেন সেখানে। অনলাইনে, অফলাইনে। আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশের ঘটনাটি তাই এতদিন ধরে চলে আসা নারী আন্দোলনেরই আরেকটি রূপ। এ যেন এক শেকল ভাঙ্গারই গল্প!
মূল ঘটনাতে যাওয়ার আগে তালেবান নিয়ে একটু কথা বলা যাক। আফগানিস্তানে তালেবানরা বেশ অনেককাল ধরেই আছেন এবং তাদের কাজকর্মও বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মূলত সুন্নী ইসলামী ও পশতুন জাতীয়তাবাদী এবং তারা আফগানিস্তান শাসনের মসনদে বসেন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৬-২০০১ সালের তালেবান শাসনামলে ইসলামিক আইন প্রয়োগের নামে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করা থেকে শুরু করে বাইরে যাওয়া সবখানেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বেশ বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ডের জন্ম দেয় তারা তাদের শাসন-সময়ে।
২০০১ সালে তাদের পতন ঘটলে তারা হয়ে ওঠে বিক্ষুব্ধ এক সংগঠন, ক্রমশ জঙ্গি সংগঠনে পরিণত হয় পরবর্তীতে। সহিংসতা শুরু করে তারা পুরো আফগানিস্তানেই। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন হামলায় নিহত হয়েছে হাজারেরও বেশি নিরীহ আফগান মানুষ। তাছাড়া বিদেশি সেনাবাহিনীগুলোর সাথে সহিংসতা, সরকারের সাথে সংঘর্ষ... মারদাঙ্গা সময়ই কাটাচ্ছিল তারা। এই তো কিছুদিন আগেই সরকারী চত্বরে গাড়ি বিস্ফোরণ করে সংবাদের মূল শিরোনাম দখল করে নেয় এই গোষ্ঠীটি।
এই তালেবানরা কয়েকদিন আগে আক্রমণ চালায় ঘোর প্রদেশের এক ব্যক্তির বাড়িতে। ব্যক্তিটির অপরাধ- তিনি তালেবানদের কিছু কর্মকাণ্ডের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। তালেবানরা এই বিরোধিতা মানবে কেন? মানেওনি। সশস্ত্র রনসজ্জায় সজ্জিত হয়ে তারা আক্রমন করলো সেই ভদ্রলোকের বাড়িতে। বাড়িতে ভদ্রলোক, তার স্ত্রী, কন্যা ও ছেলে ছাড়া আর কেউ ছিল না। তালেবানরা প্রথমেই ভদ্রলোকের স্ত্রীকে গুলি করে মেরে ফেলে। এরপর সেই ভদ্রলোককে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাকেও অন্তর্ভুক্ত করে লাশের সারিতে।
ওদিকে তখন ঘরে রয়ে গিয়েছে ১৪ বছরের মেয়েটি এবং ১২ বছরের ছেলেটি। দুই কিশোর-কিশোরীর সামনে অন্তিম পরিণতি ছাড়া আর কোনো পথও খোলা নেই। কিন্তু তখনই ঘটে চমক। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ কেমন অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায় না? সেরকমটিই হয় কিশোরীটির ক্ষেত্রে। বাবার রেখে যাওয়া একে-৪৭ তুলে নেয় কিশোরীটি। করে পাল্টা আক্রমণ। একাই অস্ত্র হাতে গর্জে ওঠে সশস্ত্র দানবদের বিরুদ্ধে।
তালেবানরা বোধহয় এটা আশা করেনি। দুইজন তালেবান মারা যায় সাথে সাথেই, আরেকজন আহত হয় গুলিতে। পাল্টা গোলাগুলি চলে ঘন্টাখানেক। এরইমধ্যে এলাকাবাসী খবর পায় তালেবানদের হামলার। তারা চলে আসে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। চতুর্মুখী আক্রমণে পিছু হটে তালেবানরা। ১৪ বছরের সেই মেয়েটি, যার নাম কামার গুল, সে অক্ষত থাকে। সাথে অক্ষত থাকে তার ১২ বছরের ভাই হাবিবুল্লাহ। দুইজনকে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ জায়গায়।
এই ঘটনাটি খুব আত্মতৃপ্তির। নিপীড়িত মানুষ যখন আক্রমনকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করে সফল হয়, সেটা আমাদের বরাবরই সন্তুষ্টি দিয়েছে। হেগেলের 'কনফ্লিক্ট থিওরি' অনুযায়ী মানুষ বরাবরই নিপীড়িতের, নির্যাতিতের পক্ষে থাকে। এখানে সেটি তো আছেই। সে সাথে রয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে যে ফাইটব্যাক করেছে, তিনি একজন নারী। সে নারী এমন এক জনপদের যে জনপদে নারীদের রাখা হয় খুবই নিষ্পেষিত অবস্থায়। শুধু তাই না, এই নারী যাদের বিরুদ্ধে করেছে লড়াই, তাদের কট্টর মানসিকতা ও নারীবিদ্বেষী আখ্যান তো আগেই বলা হলো, যে আখ্যান সর্বজনবিদিতও।
সবকিছু মিলিয়ে এ বিষয়টিকে যদি পোয়েটিক জাস্টিস না বলি, তাহলে সেটি হবে ভুল। সে সাথে এই ঘটনাটিকে যদি নারীশক্তির জয়গানও না বলি, সেটাও হবে অন্যায়।
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে
আরও পড়ুন-