কালাভান্তিন: পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দূর্গের গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
মহারাষ্ট্রের অদূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তেইশশো ফুট উঁচুতে একটি জায়গা আছে। যে জায়গাতে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার মানুষ আসেন। যাত্রাপত্রে অনেকেই মারা যান। তবু কী এক অমোঘ টানে পঙ্গপালের মতন মানুষ আসতেই থাকে এখানে। জায়গাটির নাম কালাভান্তিন। যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দূর্গ!
আমাদের শৈশবের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে 'দূর্গ' নামের একটি প্রকাণ্ড অট্টালিকার অস্তিত্ব। আমরা অনেকেই হয়তো সরাসরি দূর্গ দেখিনি। কিন্তু রূপকথার গল্প বলি অথবা থ্রিলার উপন্যাস...সবখানেই এই বিষম ভবনের অস্তিত্বের আভাস আমরা পেয়েছি। আমাদের উপমহাদেশের শিশু-কিশোর সাহিত্যে, রূপকথা-উপকথার গল্পে, ভৌতিক উপাখ্যানে বারবারই এসেছে দূর্গ। শৈশব থেকেই তাই 'দূর্গ' বিষয়টি আমাদের মানসপটে এক রহস্যজনক বিষয়। তবে দূর্গের মধ্যেও আছে রকমফের। কোনো দূর্গ খুবই গড়পড়তা। আবার কোনো দূর্গ যেন রহস্যের খাসমসল। এই দ্বিতীয় প্রকারের এক দূর্গ নিয়েই আজ কথা বলবো। যে দূর্গের নাম কালাভান্তিন। এই কালাভান্তিন দূর্গকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম ও ভয়ঙ্কর দূর্গ। এর কারন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই দূর্গ ২৩০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত!
মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলায় মুম্বাই শহর থেকে ষাট কিলোমিটার দূরে ওয়েস্টার্ন ঘাট পর্বতশ্রেনীর প্রবালগড় দূর্গের কাছেই এই দূর্গের অবস্থান। মানুষজন এই দূর্গকে নানা নামে ডাকেন। কালাওয়ন্তিন, কালাবতী, কালাভান্তি...নানারকম নাম। স্থানীয় আদিবাসীদের মতে, পুরাকালে কালাভান্তিন নামে এক দেবী ছিলেন। তার নামেই এই দূর্গের নামকরণ করা হয়। তবে আপনি যদি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তেইশশো ফুট অতিক্রম করে এই দূর্গ দেখতে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠেন, আপনি নিশ্চিতভাবে বিব্রত হবেন। কারন, পাহাড়ের চূড়ায় কোনো দূর্গ-ই নেই। ঠিকই পড়েছেন। পাহাড়-চূড়া পুরোপুরি শূন্য। ধন্দে পড়ে গেলেন? আচ্ছা, ধোয়াশা মিটিয়ে দিচ্ছি। এটি শুধু নামেই দূর্গ। বাস্তবে কোনো দূর্গ অথবা ভবনের অস্তিত্ব নেই এখানে। এই দূর্গ কাজ করতো ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে। অর্থাৎ আশেপাশের রাজ্যগুলোতে নজর রাখার জন্যে শাসকেরা এই দূর্গকে ব্যবহার করতেন। এই দূর্গের দেয়ালে শিলাহার, বাহমানী, যাদব, নিজাম শাহীসহ আরো বেশ কিছু শাসকের শাসনযন্ত্রের নমুনাও খোদাই করা রয়েছে।
তবে যাই হোক না কেন, স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে এই দূর্গ বেশ পবিত্র। তারা প্রত্যেক বছর হোলি উৎসবে এই দূর্গে দলেবলে উঠে উৎসব করেন। নৃত্য করেন। নানারকম আরাধনাও করেন এখানে।
ট্রেকিং করতেও দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসে এখানে। তবে আকাশচুম্বী খাড়া এই পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা ভয়ের বিষয়। প্রতিবছর বেশ কিছু মানুষ মারাও যায় এই দূর্গে উঠতে গিয়ে। প্রশাসন এখন তাই কালাভান্তিন দূর্গে ওঠার সময়সূচিতে রাতের সময়কালকে বাদ দিয়ে দিয়েছে পুরোপুরি। সন্ধ্যার পর এই দূর্গে ওঠার চেষ্টা করা তো দূরের কথা, এই এলাকাতেই ঢুকতে দেয়া হয় না। স্থানীয় কিছু ট্রেনার আছে, যারা এখানের ট্যুরিস্টদের পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। পদে পদে মৃত্যুর রোমাঞ্চ আছে বলে ট্যুরিস্টরা বেশ পছন্দ করেন এই দূর্গকে।
কালাভান্তিন দূর্গে আসতে পারেন ভ্রমণ-পিপাসু যে কেউ। রহস্য, রোমাঞ্চ ও দুর্লঙ্ঘকে ছুঁয়ে দেখার শখ যদি আপনার থাকে, যদি হাতের মুঠোয় মৃত্যুকে বন্দী করে পায়ের তলায় সর্ষে রাখতে চান আপনি, তাহলে আপনি হয়তো এ দূর্গকেই খুঁজছেন। যে দূর্গ মাটি থেকে তেইশশো ফুট উপরে রয়েছে, শুধুমাত্র অকুতোভয় পর্যটকেরই অপেক্ষায়!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন