আসামী আশেপাশে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ নাকি খুঁজেই পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত সমঝোতার চাপ, হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকির মুখে উপায়ান্তর না দেখে ন্যায়বিচারের দাবিতে একাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তিনি।
প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমেছেন এক অসহায় নারী। সেখানে লেখা, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি কি বিচার পাবো না?’ গতকাল সকালে এই মানবেতর দৃশ্যের অবতারণা ঘটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।
সাজিদা ইসলাম পারুল একজন গণমাধ্যমকর্মী। ন্যায়ের পক্ষে কলম চলে সে হাতে, সেই হাতেই প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বিচারের আশায় ক্রমাগত কড়া নেড়ে গিয়েছেন আইনের দরজায়, পেয়েছেন অবহেলা। যৌতুক দাবি, নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে সাবেক স্বামী রেজাউল করিম প্লাবনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন দেড় মাস আগে।
মামলার আসামী ঢাকা শহরেই খুঁজে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ নাকি তাকে খুঁজেই পাচ্ছে না। তার সাবেক স্বামী একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক। তাই প্রতিনিয়ত সমঝোতার চাপ, হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকির মুখে উপায়ান্তর না দেখে ন্যায়বিচারের দাবিতে একাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তিনি। পুরো সময়টা জুড়েই পারুলের চোখ গড়িয়ে শুধু পানি পড়ে যাচ্ছিলো।
গত ২ এপ্রিল প্লাবনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে প্লাবন ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট দাবি করেন পারুলের কাছে। একাধিক নারীর সঙ্গে প্লাবনের অনৈতিক সম্পর্ক থাকার কথা জেনে যান পারুল। অনৈতিক সম্পর্কে বাধা ও যৌতুক না দেওয়ায় পারুলকে নির্যাতন করা হয়।
মারধরের কারণে পারুলের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। গত ৫ মে তিনি প্লাবনের গ্রামে বাড়ি গেলে সেখানেও মারধরের শিকার হন। প্লাবনের মা-বাবা ও দুই ভাই মারধর করেন পারুলকে। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তিনি এসব জানান।
অভিযানের নামে যেন ইঁদুর-বিড়াল খেলছে পুলিশ। কতিপয় সাংবাদিক নেতা ও প্রশাসনের লোকজনে মাধ্যমে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছে প্লাবন। তিনি এই ক্ষমতাশালী সিন্ডিকেটের সাথে পেরে না উঠে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নেন। এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর আকুল আবেদন জানান।
যে প্রেসক্লাব অঙ্গনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি, সেখানেই যে কতশত স্মৃতি রয়েছে তার। কত বিচার প্রত্যাশীর হাহাকার শুনে কলম চালিয়েছেন তিনি তার ইয়ত্তা নেই। আজ নিয়তির পরিহাসে নিজেই একজন ভুক্তভোগী।
প্রতিটা দিন পার করেছেন অজানা আশঙ্কায়। নিজেকে উদ্ধার করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতা চেয়েছেন। প্রয়োজনে গণভবনের সামনে আমরণ অনশনে নামবেন বলে জানান তিনি। করোনার কথা চিন্তা করে এই মানবন্ধন কর্মসূচীতে তিনি একাই অংশ নেবেন বলেও জানিয়েছেন।
যে মানুষটা নিজেই রয়েছেন শত বিপদের মাঝে, এই অবস্থাতেও তিনি বাকীদের ভালোমন্দের কথাও চিন্তা করছেন। এই না হলে একজন সাদা মনের মানুষ। অন্যের প্রতি যত্নশীল এই মানুষগলোই বেশি অমানবিকার শিকার হয়ে থাকেন।
বিচারহীনতার এই সমাজে বেঁচে থাকার চেয়ে প্রতিবাদ করে মরে যাওয়া ভালো। তাই তিনি কোনো আপষ নয়, এর বিচার চান। সমাজে নিগৃহীত হয়ে কারও দয়ায় বেঁচে থাকতে চান না। মাথা উঁচু করে নিজের অধিকারটুকু আদায় করে নিতে চান।
আমাদের কথা: প্রিয় সাজিদা ইসলাম পারুল, আপনি ভেঙে পড়বেন না। প্লিজ, শক্ত থাকুন। আপনার অস্বিত্বের এই লড়াইয়ে এগিয়ে চলো যথাসম্ভব আপনার পাশে আছে। সহযোদ্ধা কিংবা শুভাকাঙ্খী হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য। শুভকামনা সতত।
আরও পড়ুন- কমেন্ট সেকশনে ঝাঁপিয়ে পড়া অকালকুষ্মাণ্ডদের গল্প!