আর কত কুলসুম মরলে আমরা সেই হত্যাকারীদের বিচার করতে পারব?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

কুলসুম যে বাড়িতে কাজ করতো সেই বাড়ির নিয়োগকর্তা ও তার ছেলে মেরে দুই হাত-পা ও কোমর ভেঙে দিয়েছে। এরপর একটি চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। তারপর ওই অবস্থায় রাস্তায় ফেলে গেছে। কুলসুমের হত্যাকারীরা কি তবুও পার পেয়ে যাবে?
১৪ বছরের কিশোরী কুলসুমকে বয়স ২৫ দেখিযে সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানোর ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।। ধন্যবাদ। কিন্তু দায় কি শুধুই এজেন্সি মালিকের? যারা তাকে হত্যা করলো সেই সৌদি নিয়োগকর্তাদের কি কোনদিন বিচার হবে না?
আচ্ছা ১৪ বছরের মেয়েটা কী করে পাসপোর্ট পেল? ভেরিফিকশনের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি কী করলেন? তাকে কী করে ছাড়পত্র দেয়া হলো? ট্রেনিং সেন্টারে কেউ দেখেনি মেয়েটাকে? বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কেউ? আর সবচেয়ে বড় দায় যে হত্যাকারীদের, তাদের কী হবে? এরা তো প্রত্যেকেই দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।
আর সৌদি আরবে যারা হত্যা করলো? কুলসুম যে বাড়িতে কাজ করতো সেই বাড়ির নিয়োগকর্তা ও তার ছেলে মেরে দুই হাত-পা ও কোমর ভেঙে দিয়েছে। এরপর একটি চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। তারপর ওই অবস্থায় রাস্তায় ফেলে গেছে। সৌদি পুলিশ সেখান থেকে কুলসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই আস্তে আস্তে মরে যায় কুলসুম। এই নির্যাতনের বিচার হবে না?
শুধু তো কুলসুম একা নয়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ র্পযন্ত চার বছরে বিভিন্ন দেশ কাজ করতে যাওয়া ৪১০ নারী লাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৫৩ জন। অথচ একটা ঘটনাতেও একজন সৌদি নাগরিককে আমরা শাস্তির আওতায় আনতে পারিনি। কুলসুমের হত্যাকারীরাও কি এভাবে পার পেয়ে যাবে? যেভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে নির্যাতনকারীরা?

এই যে কুড়িগ্রামের সেই নারী যে সংসারে সচ্ছলতার আশায় গিয়ে গৃহকর্তার ধর্ষণের শিকার হয়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আশ্রয় নেন রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে। তাকে নির্যাতনের বিচার হবে না?
ঢাকার উত্তর বাড্ডার সেই মেয়েটা যে আমাকে বলেছিল, বাসার পুরুষেরা তাকে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করতো। প্রতিবাদ করলে তার চুল টেনে টেনে তুলে ফেলা হতো। মানিকগঞ্জের সেই মেয়েটা যে নির্যাতনের কারণে চার তলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লো তার নির্যাতনকারীদের কিছু হবে না? কুমিল্লার সেই নারীর যাকে নির্যাতন করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়, যার ১৪টি সেলাই লাগে। তার নির্যাতনেরও বিচার হবে না?
গত বছর এভাবে আড়াই হাজার মেয়ে দেশে ফিরেছে। ২০১৮ সালে ফিরেছে এক হাজার ৬৫৬ জন। গত পাঁচ বছরে অন্তত আট থেকে দশ হাজার। হ্যাঁ, কোনো কোনো সময় কর্তা ব্যক্তিরা বলেন, এই যে তিন লাখ নারী সৌদি আরবে গেল তার মধ্যে মাত্র তো আট-নয় হাজার ফিরেছে। বাকিরা নিশ্চয়ই ভালো আছে। ভালো আছে কি না সেটা আসলে জানা যায় না। কারণ সৌদি আরবের সেই বাড়িগুলোতে যাওয়ার অধিকার কারও নেই।
কিন্তু এই যে শতাধিক নারী মারা গেল, কেন একটি ঘটনাতেও সৌদি নিপীড়নকারীদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে না? বাংলাদেশিরা কি মানুষ না? আচ্ছা বলেন তো আর কতো কুলসুম মরলে আমরা সেই হত্যাকারীদের বিচার করতে পারবো? আর কবে আমরা ১৭ কোটি মানুষ এক সুরে বলতে পারবো, হত্যাকারীদের বিচার চাই। আর কবে?
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন