মাইকেলের বাবা তাকে আর একটি পুরনো টিশার্ট এনে দিলেন। বললেন, ‘এটা বিশ ডলারে বিক্রি করতে পারবে?’ মাইকেল হেসে ফেললো- ‘অসম্ভব, কে কিনবে বিশ ডলারে এই শার্ট?’ বাবা বললেন, ‘সম্ভব, চেষ্টা করে দেখো তুমি।’
১৯৭৪ সালের কথা। ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক। কুখ্যাত বস্তিতে বাস করে ১৩ বছরের কিশোর মাইকেল। বর্ণবৈষম্য থেকে আমেরিকা পুরোপুরি বের হতে পারেনি তখনো, চাকুরী পাওয়া দুষ্কর কালোদের জন্য। তার উপরে চার ভাইবোন, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় মাইকেলের বাবাকে। মাইকেল নিজেও তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত, পড়াশোনা ভালো লাগে না একদম। সময় পেলেই তাই মাইকেল টিলার উপরে গিলে আনমনে সূর্যাস্ত দেখে, সূর্য ডোবার সময় কেমন যেন নীরব হয়ে যায় শহরটা, ভালো লাগে তার।
একদিন মাইকেলের বাবা তাকে একটা পুরনো টিশার্ট দিলেন । বললেন, ‘ সর্বোচ্চ কত দাম হতে পারে এটার ?’ মাইকেল অনেক ভেবেচিন্তে উত্তর দিলো- ‘ সর্বোচ্চ এক ডলার।’ মাইকেলের বাবা তার কনিষ্ঠ পুত্রকে তখন একটা কাজ দিলেন- ‘ চেষ্টা করো, কিভাবে এই টিশার্টটি দুই ডলারে বিক্রি করা যায়। আমার আর তোমার মা’র পক্ষে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে খুব। অনেক সাহায্য হবে এই দুই ডলার পেলে।'
মাইকেল বসে বসে ভাবতে লাগলো । তারপর মাইকেল পুরনো টিশার্টটিকে ধুয়ে পরিষ্কার করলো, রোদে শুকালো। বাসায় ইস্ত্রি নেই, পুরনো কাপড়ের স্তুপে চাপা দিয়ে সমান করলো টিশার্টটা । তারপর, ছয়ঘন্টা ধরে চেষ্টার পর, মাইকেল টিশার্টটা বিক্রি করতে পারলো পাতাল রেলের এক যাত্রীর কাছে , দুই ডলারে। ‘রেখে দাও‘- সহাস্যে বললেন মাইকেলের বাবা। ‘ওটা তোমার উপার্জন।' পরদিন সকালে মাইকেলের বাবা তাকে আর একটি পুরনো টিশার্ট এনে দিলেন । বললেন, ‘ এটা বিশ ডলারে বিক্রি করতে পারবে?' মাইকেল হেসে ফেললো এবার- ‘ অসম্ভব, কে কিনবে বিশ ডলারে এই শার্ট?’ বাবা বললেন, ‘ সম্ভব, চেষ্টা করে দেখো তুমি।' মাইকেল চিন্তায় বসলো কিভাবে এই ময়লা শার্টকে বিশ ডলারে বিক্রি করা যায়। আগেরবারের মতই সে শার্ট পরিষ্কার করলো, ইস্ত্রি করলো। তারপর তার মাথায় চমৎকার একটা বুদ্ধি আসলো।
মাইকেলের এক বন্ধু চমৎকার ছবি আঁকতো । মাইকেল আগের দুই ডলার দিয়ে রং আর তুলি কিনে, সেটা দিয়ে টিশার্টে বন্ধুকে দিয়ে মিকি মাউস একেঁ ফেললো । তারপর টিশার্ট নিয়ে ব্রুকলিনের ধনী শিশুদের এক কিন্ডারগার্টেনে বিক্রির চেষ্টা। প্রায় সারাদিন চেষ্টার পর, এক অবস্থাসম্পন্ন শিশুর খুব পছন্দ হয়ে গেল টিশার্টটা । সে তার বাবার কাছে জিদ ধরলো সেটা কেনার জন্য। ভদ্রলোক বিশ ডলার দিয়ে শুধু কিনলেনই না, মাইকেলকে পাঁচ ডলার বখশিশও দিলেন। ‘২৫ ডলার!!’ -মাইকেলের পরিবারের পুরো সপ্তাহের উপার্জন!
তার পরদিন সকালে মাইকেলের বাবা মাইকেলকে আর একটা পুরনো টিশার্ট এনে দিলেন । বললেন, 'এবার চেষ্টা করো, ২০০ ডলারে এই টিশার্ট বিক্রি করার।' মাইকেল কিন্তু এবার হাসলো না । বরং টিশার্ট নিয়ে চিন্তা করতে বসলো কিভাবে এটাকে ২০০ ডলারে বিক্রি করা যায়। আমেরিকায় তখন ‘চার্লিস এঞ্জেলস’ মুভি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে । মুভির বিখ্যাত অভিনেত্রী ফারাহ্ ফওলার সিনেমার প্রোমোশনের কাজে আসলেন নিউইয়র্কে । প্রেস কনফারেন্স শেষে জনস্রোত সামলে অভিনেত্রি যখন গ্রীনরুমে পৌছালেন, দেখলেন সেখানে ১৩ বছর বয়সের একটি ফুটফুটে কালো কিশোর একটি টিশার্ট নিয়ে দাড়িয়ে। ‘ম্যাম, আমি আপনার একজন অন্ধভক্ত । আপনি কি আমাকে দয়াকরে একটি অটোগ্রাফ দেবেন, আমার এই টিশার্টে?’ হেসে ফেললেন অভিনেত্রী, এমন সুন্দর শিশুকে না করার প্রশ্নই ওঠে না।
এর একসপ্তাহ পরে, ব্রুকলিনের নিলামঘরে দেখা গেল এক কালো কিশোরকে। সে মিস ফারাহ্ ফাওলারের নিজের হাতে অটোগ্রাফ দেয়া একটা টিশার্ট নিলাম করতে এসেছে। নিলাম শেষে টিশার্টটি ১২৫০ ডলার দিয়ে কিনে নিলেন এক ব্যবসায়ী। সেদিন রাতে বাবার পাশে ঘুমাবার সময় মাইকেলের বাবা বললেন, ‘ মাইকেল, এই টিশার্ট বিক্রি থেকে তুমি কি শিখলে?’ মাইকেল গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয়, "Where there's a will, there's a way."
মাথা নাড়লেন মাইকেলের বাবা। ‘দেখ ছেলে, তুমি যা বলেছ, তা সত্যি। কিন্তু আমি তোমাকে শুধু এটাই শেখাতে চেয়েছিলাম যে, সামান্য পুরনো টিশার্টও অনেক টাকায় বিক্রি হতে পারে, যদি তুমি চাও। ঈশ্বর আমাদের জন্ম দিয়েছেন এই বস্তিতে, এই অভাবের সংসারে, তার মানে এই নয়, এখানে আমাদের সারা জীবন কাটাতে হবে । নিজের চেষ্টায়, পরিশ্রমে একদিন আমরাও পারি সফল হতে। হতাশ হলে চলবেনা তোমার, মাইকেল ; বরং জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে শেখো।'
এই ঘটনার বিশবছর পরে ফোর্বস ম্যাগাজিন, বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী খেলোয়াড়টির একটি সাক্ষাৎকার নেয় । ভদ্রলোক বাস্কেটবলের জীবন্ত কিংবদন্তী, যার বাৎসরিক আয় ৪০ মিলিয়নের বেশি, নাইকিসহ হাজার হাজার ব্রান্ডে যার নাম। তিনি বিশ্বের প্রথম বিলিওনিয়ার খেলোয়াড়, বিশ্বের তৃতীয় সবোর্চ্চ আফ্রিকান–আমেরিকান ধনকুবের । সাক্ষাৎকারে তাকে তার সাফল্যের রহস্য জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি আবারও বলেন, "Where there's a will, there's a way." ভদ্রলোকের নাম মাইকেল জর্ডান।