জোকার চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে নিজের জনপ্রিয়তাকে নিয়ে গেছেন পাহাড়সম উচ্চতায়। অভিনয়টা তিনি বরাবরই ভালো করেন, এবার যেন ছাড়িয়েছেন নিজের সীমানা।
এ বছর অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, স্ক্রিন এক্টর্স গিল্ড এওয়ার্ডস— প্রতিটি পুরস্কারে নিজের নাম লিখিয়েছেন ওয়াকিন ফিনিক্স। জোকার চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে নিজের জনপ্রিয়তাকে নিয়ে গেছেন পাহাড়সম উচ্চতায়। অভিনয়টা তিনি বরাবরই ভালো করেন, এবার যেন ছাড়িয়েছেন নিজের সীমানা।
গ্রীক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, পবিত্র অনল প্রভা থেকে ফিনিক্স পাখির সৃষ্টি। রুপকথার সেই চিরঞ্জীব পাখির মতো করেই জোকারের চরিত্রায়নে পুনর্জন্ম লাভ করেছেন ওয়াকিন ফিনিক্স। তার করা সিনেম্যাটিক চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বসলে সেই আলোচনায় মানুষটির ব্যক্তিত্ব ঢাকা পড়ে যাবে। ব্যক্তিগত জীবনে এই হলিউড অভিনেতা একজন পরিবেশবাদী এবং নিরামিষভোজী। যেকোনো পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেই ব্যক্তিত্বের ছাপ রেখেছেন প্রতিটি পুরস্কার বিজয়ের পর ভাষণ দিতে গিয়ে। খুবই সহজ, সুন্দর এবং সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন পরিবেশবাদ, নিরামিষভোজ এবং বর্ণবাদের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে।
ইতিমধ্যেই নিজের খ্যাতি ব্যবহার করে বারবার পরিবেশ এবং প্রাণী রক্ষায় অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন। এবার গোল্ডেন গ্লোব জিতে মঞ্চে উঠে বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের কথা। পরিবেশ দূষণে পরোক্ষভাবে মানুষের বিলাসযাপনের স্বভাবকেই দায়ী করছেন। শুধু কথা নয়, কাজেও নিজেকে বারবার পরিবেশবাদী হিসেবে প্রমাণ করেছেন ফিনিক্স। ৭৭ বছরের গোল্ডেন গ্লোবের ইতিহাসে এবারই প্রথম ডিনারে নিরামিষ খাবার পরিবেশনের পেছনেও নাকি তারই অবদান ছিলো। গত সেপ্টেম্বরেই টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কিছুক্ষণ আগে সেন্ট জর্জ সাবওয়ে ট্রানজিট স্টেশনে ‘বি ফেয়ার বি ভেগান’ টিমের সাথে মিছিল করেছেন প্রাণীদের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতা বন্ধের দাবিতে।
সম্প্রতি, জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী সাপ্তাহিক আন্দোলন ‘ফায়ার ড্রিল ফ্রাইডেস’ এ অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানে নিজের বক্তব্য প্রদান করেন। পুলিশি বাধার এক পর্যায়ে ওয়াশিংটন ডিসির ঐ আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করা হয়েছিলো এই হলিউড সুপারস্টারকে। সেলুলয়েডের পর্দায় আর্থার ফ্লেক চরিত্রে অভিনয় করা হোয়াকিন ফিনিক্স যেন বাস্তব জীবনেই হয়ে উঠেছেন জোকার।
তার কাছে অস্কার আসুক বা নোবেল। তাতে তিনি থোরাই কেয়ার করেন। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়ন যাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, নিজ প্রতিভায় হয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত, বারবার জেগে উঠেছেন ফিনিক্স পাখির মতো— এই গ্রেপ্তার তাকে কী করে ঠেকাবে?
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে হোয়াকিন হচ্ছেন তৃতীয়। বাকী ভাইবোনদের নাম প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কিত হওয়ায় ওয়াকিন চাইতেন তারও এমন কোনো নাম থাকুক। তাই তিনি নিজের ডাকনাম রেখে দেন ‘লিফ’। মাত্র ৩ বছর বয়স থেকেই হলিউডের বিখ্যাত এই অভিনেতা একজন নিরামিষভোজী। মাছ, মাংস কিংবা প্রাণীজ খাবার ছেড়ে দিয়েছিলেন ছোটবেলার মাছধরার ঘটনা দেখে।
একটি ইন্টারভিউতে ফিনিক্স বলছিলেন, খুব ছোটবেলায় তিনি এবং তার বোনেরা মাছধরা দেখতে যেতেন। সেখানেই তারা দেখেছেন কী ভয়ানক নিষ্ঠুরতায় মানুষ বড় বড় মাছগুলোকে ধরে এবং মারে। ঐ দৃশ্য দেখেই হোয়াকিন ফিনিক্স নিশ্চিত হয়ে গেছিলেন যে, কোনভাবেই তিনি এই নৃশংস প্রক্রিয়ার অংশ হতে চান না। তার ভাষায়, “আমি এই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত যে, আমি কোনভাবেই আরেকটি জীবন্ত, অনুভূতি সম্পূর্ণ প্রাণীর কষ্টের কারণ হতে চাই না। আমি তাদের কাছ থেকে সন্তান ছিনিয়ে নিতে চাই না, জোর করে খাঁচায় আটকে একদিন জবাই করবো বলে হৃষ্টপুষ্ট বানাতে চাই না।”
১৯৭৪ সালের ২৮ অক্টোবর পুয়ের্তো রিকোতে বটম পরিবারের ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে আগমন করেন ওয়াকিন ফিনিক্স। তার বড় ভাই রিভার ছিলেন হলিউডের উঠতি অভিনেতা, ড্রাগ ওভারডোজের কারণে আকস্মাত মৃত্যুবরণ করেন। শিশুশিল্পী থেকেই হোয়াকিন ফিনিক্সের অভিনয় যাত্রা শুরু হলেও ভাইয়ের মৃত্যুতে সাময়িকভাবে অভিনয়ে বিঘ্ন ঘটে। দুই বছর পর অভিনয়ে ফেরেন। গ্ল্যাডিয়েটর সিনেমার মাধ্যমে মূলত লাইম লাইটে আসেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক দুর্দান্ত অভিনয়ে নিজেকে নিয়ে এসেছেন আজকের পর্যায়ে।
অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী হোয়াকিন ফিনিক্স তার সাবলীল ব্যবহার দিয়ে মুগ্ধ করেন সবাইকে। কেমন যে একটা এস্থেটিক ব্যাপার আছে তার আচরণে। সিনেমা হোক কিংবা বাস্তব জীবন, মানুষটা একটার পর একটা অর্জন দিয়ে ভারী করছেন নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি। আর সেই ঝুলির ঝলক আমরা দেখে যেতে চাই অপলক। প্রিয়, হোয়াকিন ফিনিক্স। ভালোবাসা নিরন্তর।