জেসমিন মুসা: শারীরিক নির্যাতন, বৈবাহিক ধর্ষণ, খুনের চেষ্টাও যাকে দমাতে পারেনি!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েটা বিয়ের পরে শিকার হয়েছিল ম্যারিটাল রেপের। পরিবার জোর করেই আবারও বিয়ে দিলো, দ্বিতীয় স্বামীও নির্যাতন চালাতো নিয়মিত। সেই অত্যাচারী স্বামীকে ছেড়ে এসে জেসমিন ঘুরে দাঁড়ালো এবার...
জেসমিনের জন্ম কেরালার রক্ষণশীল এক মুসলিম পরিবারে। পিতৃতান্ত্রিক এমন পরিবারে জন্ম, যেখানে সংসারের পুরুষদের কথাই শেষ কথা। নারীরা সেখানে 'মূক-বধির-প্রতিবন্ধী'র মতন প্রানী। তার পরিবারে জেসমিনও সেরকমই এক প্রানী ছিলো। আমি সজ্ঞানেই 'প্রানী' লিখেছি। জেসমিনের আঠারো বছর বয়স তখন, তার মতামত ছাড়া, তার সম্মতি ছাড়া এমনকী চোখের দেখা ছাড়াই জেসমিনকে বিয়ে দেয়া হয় এক অপরিচিত ছেলের সাথে।
বিয়ের দিনে ছেলেটি যখন জেসমিনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে, জেসমিন বাধা দেয়। বাধা দেয়াটাই স্বাভাবিক। যাকে এখনো চেনাও হয়নি, জানাও হয়নি, এমনকি কথাও হয়নি, সে যদি প্রথম দেখাতেই মানব-জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্কটি স্থাপনের জন্যে জোর-জবরদস্তি শুরু করে, সেটা মেনে নেওয়া একটু কষ্টকর অবশ্যই৷ কিন্তু জেসমিনের সেই তথাকথিত স্বামী (!) জেসমিনের এই ব্যবহার মেনে নিতে পারেন না৷ তার কাছে জেসমিন তো সম্পত্তি। সে যখন ইচ্ছে ব্যবহার করবে, এতে বাধা আসবে কেন? যদি বাধা আসেই, এ মেয়ে তো অবাধ্য, অসভ্য। জেসমিনকে এরপর পাঠিয়ে দেয়া তার বাপের বাড়িতে। বাপের বাড়িতেও একপ্রস্থ অপমান করা হয় তাকে। কেন সে স্বামীর পরিবারের সাথে মানিয়ে চললো না? কেন সে বেয়াদবি করলো? জেসমিন চুপ রইলো এবং শেষে জানিয়ে দিলো- সে ডিভোর্স চায়৷
পরে ডিভোর্স আদায়ও করে নেয় সে। তবে ডিভোর্সের পরে যতটা স্বাধীনতা সে পাবে আশা করেছিলো, তা আর হয়না৷ তার একটাই নাম হয়ে যায় 'ডিভোর্সি।' যেকোনো বিয়ের সম্বন্ধ এলেই ছেলেপক্ষ প্রথমে জানাতো, এই মেয়ে তো ডিভোর্সি। এর সাথে ছেলের বিয়ে দেয়া হবে না। তবে এরমধ্যেই জেসমিনকে এক ছেলে গ্রহণ করতে সম্মত হয়। পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়ে যায় এরপর। ছেলেটি জেসমিনের সব খুঁত মেনে নিয়েই তাকে বিয়ে করে।
কিন্তু, কী ভাবছেন? হ্যাপি এন্ডিং? গল্প শেষ? গল্প তো এখনো শুরু হলোইনা। আবার গল্পে ফিরি। বিয়ে হওয়াতে জেসমিন নিজেও খুশি হন। অবশেষে একজন ভালো মানুষকে পেয়েছেন স্বামী হিসেবে। বাসররাতে একবুক উত্তেজনা নিয়ে জেসমিন অপেক্ষা করছেন স্বামীর জন্যে। স্বামী রুমে এলেন। দরজা আটকালেন। এবং জেসমিন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে সজোরে চড় মেরে মাটিতে ফেলে দিলেন। জেসমিন এই আকস্মিক আক্রমনে হতচকিত হয়ে গেলেও ধীরেধীরে সাহস সঞ্চয় করে বললেন যে কেন তাকে মারা হলো। তার স্বামী তখন তার চুল টেনে ধরে বললেন-
তুই আর কী আশা করিস? তুই তো সেকেন্ডহ্যান্ড
এভাবেই শুরু হলো জেসমিনের দ্বিতীয় জীবন। তার স্বামী বাইরে নিপাট ভদ্রলোক থাকতেন। আর জেসমিনের সামনে এলেই 'হিংস্র' হয়ে যেতেন। যৌন নির্যাতন তো আছেই, শারিরীকভাবেও নিয়মিত অত্যাচার করতো জেসমিনকে। তাছাড়া অন্যান্য নারীর সাথেও যৌনসম্পর্ক ছিলো জেসমিনের স্বামীর। জেসমিনের পরিবার ভাবতো, জেসমিন সুখেই আছে৷ কিন্তু ওদিকে জেসমিন ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন, ওজন কমছিলো, তার স্বামী তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছিলো।
জেসমিন যখন গর্ভবতী, তখন তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে স্বামী। জেসমিন তখন বাধা নেয়। তার স্বামীকে জেলে নেওয়ারও ব্যবস্থা করে। এরপর এই স্বামীর সাথেই সে চুক্তি করে। সে মামলা উঠিয়ে নেবে, কিন্তু তার স্বামীর তাকে ডিভোর্স দিতে হবে। এবং তার গয়নাগাটি ও কাগজপত্র ফেরত দিতে হবে। জেসমিনের স্বামী সব মেনে নেয়। জেসমিনের কথামত সব কাজ করে। ডিভোর্স হয়ে যায়।
জেসমিন শুরু করে আরেক নতুন জীবন। সে জীবনে এসে সে বুঝতে পারে, সে আসলে সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট। সে বুঝতে পারে, সে সমকামী। সে বডিবিল্ডিং করে নিজেকে শারীরিকভাবে অনেকটাই পরিবর্তন করে। এমনকী তার নিজের প্রেমিকাও আছে। যার সাথে সে গত ছয়বছর ধরে আছে। সুখেই আছে। জেসমিন একটা চাকরীও করছে এখন, স্বাবলম্বী এখন সে। কারো উপর নির্ভরশীল নয়। নিজের জীবন নিয়েই সুখী সে।
এ ঘটনার উপসংহারে কিছুই বলবো না। তবে এই ঘটনাকে আপনি সেভাবেই সংজ্ঞায়িত করবেন, যেভাবে আপনার মস্তিষ্ক সুগঠিত হয়েছে, যেভাবে আপনি বড় হয়েছেন। তাই, দিনশেষে জেসমিন ঠিক কী ভুল, জেসমিন যা করেছে, ঠিক করেছে কী না, জেসমিন অন্য কিছু করতে পারতো কী না... বিতর্কের ময়দান উন্মুক্ত। সিদ্ধান্তে আসার ভার পাঠকের উপরেই রইলো৷ তবে সে সাথে একটাই প্রশ্ন রইলো আপনার কাছে, আপনি যদি জেসমিনের অবস্থানে থাকতেন, আপনি কী করতেন?
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন