শুধু পদ্মাসেতু নয়, বাংলাদেশে যেসব বড় বড় ভৌত অবকাঠামো হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই যুক্ত ছিলেন স্যার। যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল- কয়টার নাম বলব?
দিনটা শুরু হলো বাংলাদেশের আরেকজন কর্মদক্ষ মানুষের মৃত্যুর খবরে। বাংলাদেশের অগ্রগণ্য প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার গতরাতে মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। স্বজনরা জানান, সোমবার রাত ২টার পর ঘুমের মধ্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
আমার খুব পছন্দের মানুষ ছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার। সবসময় একটা মিষ্টি হাসি লেগে থাকত মুখে। দারুন জটিল বিষয়গুলো তিনি সহজ করে বলতে পারতেন। প্রথম আলো থাকাকালে বেশ কিছুদিন আমাকে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিষয়ক নিউজগুলো করতে হয়েছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে এমন একটা নিউজ করতে হবে। স্যারের সাথে যোগাযোগ করলাম। স্যার তখন বিশ্ববিদ্যালয় আসতে বললেন। দীর্ঘ সময় ধরে স্যার আমাকে বোঝালেন। কিভাবে নদীর গভীরে গিয়ে পিলার বসাতে হবে, কিভাবে নদী ব্যবস্থাপনা হবে এমন অনেক কঠিন বিষয় তিনি বেশ সহজ করে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এমন কীর্তিমান মানুষদের মৃত্যুতে বুকের ভিতর এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। অনেক স্মৃতি মাথায় আসে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামিলুর রেজা স্যারের হাত ধরে গড়ে ওঠে সেখানকার ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য। পরে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। অবশ্য শুধু পদ্মাসেতু নয়, গত তিন যুগে বাংলাদেশে যেসব বড় বড় ভৌত অবকাঠামো হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন স্যার। যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্পে তিনি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
অত্যন্ত গুণী, বিনয়ী ও দেশপ্রেমিক এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন। পরপারে ভালো থাকবেন স্যার।