মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী! আজ থেকে রোজা শুরু। আপনার কাছে অনুরোধ, দয়া করে আর মিথ্যা বলবেন না। কুযুক্তি দেবেন না‌। এরচেয়ে বরং মুখ বন্ধ রাখুন।

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত প্রায় ৯ লাখ মানুষ। অথচ হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংখ্যার দিক থেকে সব দেশকে ছাড়িয়ে গেলেও, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুহার এখনো অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কম। ওদিকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির আজব সব উপায় বাতলাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

আমি রোজ যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাটা দেখি আর মনে মনে ভাবি সিনেমা আর বাস্তবতার মধ্যে কত ফারাক। হলিউড সিনেমায় দেখায় সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্র কোন না কোন ভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। অথচ বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। এখন দেখা যাচ্ছে না আছে তাদের চিকিৎসা দেবার মুরোদ, না আছে সত্য স্বীকার করার সদিচ্ছা। 

মার্কিন নাগরিকদের দুর্ভাগ্য এই ভয়াবহ দুর্যোগ মুহূর্তে তাদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প‌। শরীরে ইনজেকশন, বেগুনি রশ্মি থেকে আরম্ভ করে হাস্যকর সব কথাবার্তা বলছেন তিনি। এমন লোক যাদের প্রেসিডেন্ট সেই দেশের লোকেদের আকাশের দিকে তাকিয়ে উপরওয়ালার উপর বিশ্বাস আনা ছাড়া আর কি উপায় আছে! তবে একই সাথে তাদের অনুশোচনা করা উচিত এমন লোককে ভোট দিয়ে তারা প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে।

একই অবস্থা যুক্তরাজ্যের। একসময়ের সারা পৃথিবী শাসন করা দেশটার দৈন্যদশা দেখে খারাপই লাগে। প্রায় ২০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে সেখানে। আমি জানিনা বরিস জনসনকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করায় যুক্তরাজ্যের এখন অনুশোচনা হচ্ছে কিনা।

বিদেশ থেকে দেশে ফিরে। বাংলাদেশ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেছেন ১৩১ জন। একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে।‌ মোট শনাক্তের সংখ্য প্রায় পাঁচ হাজার হতে চলল। মাস্ক, পিপিই, হাসপাতাল-ডাক্তার এসব নিয়ে এখানে কি চলছে আমরা সবাই কম বেশি জানি। অথচ আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেনের তুলনায় বাংলাদেশের ভালো। 

আমি ঠিক জানিনা আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ক্রিপ্ট কে লিখে দেন। ট্রাম্প না থাকলে করোনা ব্যর্থতায় সেরা পুরস্কারটা তাকেই হয়তো আমি দিতাম। আমি জানিনা আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথায় কথায় কেন ইউরোপ-আমেরিকার কথা টানেন। ইউরোপ-আমেরিকায় যেভাবে কোটি কোটি পর্যটক যায় বাংলাদেশে কী ততো পর্যটক আসে? 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক

মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর দিক থেকে আমাদের চেয়ে পৃথিবীর অন্তত ১৫০ দেশের অবস্থান এখন ভালো। কয়েকটা নাম বলি শুনেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া কিংবা আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুন ঘানা, নাইজেরিয়া, কঙ্গো সুদান, রুয়ান্ডা এমনকি উগান্ডার অবস্থাও আমাদের চেয়ে ভালো। 

সারা পৃথিবীর কথা বাদ দেই। প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকেই তাকাই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার হার বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। অথচ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এ দেশে বেশি। আমি জানিনা মাত্র দুই হাজার কিট দিয়ে আর কোন দেশ কোন পরীক্ষা শুরু করেছিল কি না। দেখেন ১১০ কোটি লোকের দেশ ভারতে ২২ হাজার লোক আক্রান্ত। মারা গেছে মাত্র ৬৮৬ জন। পাকিস্তানি ১১ হাজার আক্রান্ত, মারা গেছেন মাত্র ২৮৮ জন। বাংলাদেশে সাড়ে হাজার আক্রান্ত হয়ে তাহলে কেন ১৩১ জন মরবে? পাকিস্তানে ১১ হাজার আক্রান্তের মধ্যে আড়াই হাজার যেখানে সুস্থ সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১০৮ জন সুস্থ কেন? মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের আমাদের চেয়ে ভালো কেন? শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ কি করে আমাদের চেয়ে ভালো আছে? 

মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী! কথায় কথায় আমেরিকা-ইউরোপের উদাহরণ দিয়ে নিজেদের দুর্বলতা ঢাইকেন না। করোনা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আপনি বা আপনারা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো শুনলে বিবেক থাকলে নিজেই লজ্জা পেতেন। ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড দেখে আপনাকে গালি দিয়েছে এখন মায়া লাগে। কারণ আপনি তো শুধু বাংলাদেশের ক্ষতি করছেন। আর ট্রাম্প গোটা দুনিয়ার বারোটা বাজাচ্ছে। 

মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী! মনে রাখবেন, হলিউড সিনেমা আর বাস্তবতা যে বিভিন্ন সেটা শুধু আমেরিকাবাসী নয় গোটা দুনিয়া বুঝতে পেরেছে। একইভাবে আমরাও করোনার চেয়ে কতোটা শক্তিশালী সেটার মানে আমরা যেমন বুঝতে পেরেছি, তেমনি আপনার বলা আমাদের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়ে গেছে কথার মানেও আমাদের বোঝা হয়ে গেছে।

মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী! আজ থেকে রোজা শুরু। আপনার কাছে অনুরোধ, দয়া করে আর মিথ্যা বলবেন না। কুযুক্তি দেবেন না‌। এরচেয়ে বরং মুখ বন্ধ রাখুন। পারলে অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো একটু কমানোর ব্যবস্থা করেন। দেশে এখনো যেহেতু কিছু লড়াকু মানুষ আছে, লড়াইটা চলুক। আমরা জানি আল্লাহ ছাড়া আমাদের বাঁচানোর কেউ নাই। কাজেই সেই ভরসায় লড়াইটা চলুক। শুভদিন আসবেই। হলিউড মুভির মতো হয়তো সেটা হবে না, হয়তো হবে খুব সাধারন, তবুও সুদিন আসবেই।

কথা বলুন নিঃসংকোচে

প্রিয় পাঠক, করোনার এই দিনগুলিতে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হতেই পারেন আপনি। সেটা হতে পারে অর্থনৈতিক, মানসিক- বা অন্য কিছু। আপনার সমস্যার কথা জানান আমাদের, আমরা চেষ্টা করব সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করার, যাতে বেরিয়ে আসে সমাধানের পথ।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা