বলিউড-হলিউড মিলিয়ে বিখ্যাত সব সিনেমায় কাজ করেছেন। অথচ এক ফোঁটাও কি গর্ব ছিল তার মাঝে? তার এই সাদাসিধে জীবন মনে করিয়ে দেয় সেই আপ্তবাক্য- "যত বড় হবে, তত নত হবে।"

লিখছি আসলে নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য। একা হাতে একটা লোক অফ বিট সিনেমাকে কত দূর এগিয়ে নিয়েছিলেন তার কি হিসেব রাখা যায়? খোদ নাসিরউদ্দিন শাহ তার সাথে ইন্টারভিউ তে বলেছিলেন, ইরফান যখন ইন্ড্রাস্ট্রিতে আসে তখন কমার্শিয়াল সিনেমার জয়জয়কার চলছে। এই অবস্থায় টিকে থেকে নিজের জাত চেনানো কম কথা নয়। রত্না পাঠকও বলেছিলেন যদি নাসিরের লিগেসি আমি কারো মধ্যে দেখি তাহলে সেটা ইরফান।

লোকটার পুরো নামও বেশ সাহেবি। শাহাবজাদে ইরফান আলী খান। অথচ নিজের ব্যক্তিত্বের মতই নিজেকে সাধারণ রাখতে শুধু ইরফান নামেই পরিচিত হতে চাইতেন। বলিউডে খানদের দাপট চলে। তাই তাদের থেকে নিজেকে আলাদা করতেই হয়তো পদবী বাদ দেয়া। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে যে কি দাপট চালিয়েছেন তাবত দুনিয়ার দর্শকদের বুকে, সে খবর কি রাখতেন ইরফান? বলিউড হলিউড মিলিয়ে এমন সব মুভিতে কাজ করেছেন যার বেশ কয়েকটা অ্যাকাডেমি এওয়ার্ড প্রাপ্ত। অথচ এক ফোঁটাও কি গর্ব ছিল তার মাঝে? তার এই সাদাসিধে জীবন আবার মনে করিয়ে দেয় আমাকে সেই আপ্তবাক্য- "যত বড় হবে, তত নত হবে।"

ক্রিস্টোফার নোলানের সাথে ইন্টারস্টেলারে কাজ করা কথা ছিল, কিন্তু লাঞ্চবক্সের জন্য ছেড়ে দেন নোলানের সাথে কাজের সুযোগ। প্রখ্যাত ডিরেক্টর রাইডলি স্কট তাকে এপ্রোচ করেন 'বডি অফ লাইস'- এ অভিনয়ের জন্য, কিন্তু চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় সেটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাইডলি আবার তাকে এপ্রোচ করেন দি মার্শিয়ানের জন্য। কিন্তু তখন পিকুতে কাজ করছিলেন বিধায় সেটাও করা হয়নি। স্পিলবার্গের সাথে নতুন প্রজেক্ট রোবোএপোকেলিপ্সে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেটাকেও অসুস্থতার জন্য না করতে হয়েছে।

ইরফান খান

বাবা ছিলেন টায়ার ব্যবসায়ী। ইরফান ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ক্রিকেটের পোকা। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটেও নাকি খাতা খুলেছিলেন। ভাগ্যিস তার মাথায় সিনেমার পোকাটা ছিল বলে। ভাগ্যিস এনএসডিতে ভর্তি হয়েছিলেন বলে। ভাগ্যিস তার সময়ে আমার জন্ম হয়েছিল বলে।

আংরেজী মিডিয়ামের টিজারে বলেছিলেন যে, সবাই বলে যে "when life gives you lemon, you make a lemonade" -বলতে ভালোই লাগে; কিন্তু বাস্তবে যখন জীবন আপনার হাতে লেবু ধরিয়ে দেয়, তখন সেটাকে স্কুইজ করে রস বের করা বেশ কঠিন হয়ে যায়।

আসলেই তাই সত্যি ইরফান। প্রতিদিন হাজারো মৃত্যু খবর দেখা হয়। আপনিও একদিন চলে যাবেন সেটাও নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আপনি চলে যাবার খবরটা এতটা কষ্ট দেবে সেটার আন্দাজও ছিল না। আপনার মৃত্যুর খবর লেমোনেড হয়ে গলা দিয়ে নামবে না। অযুত বছর গলার কাছে কষ্ট হয়ে জমে রইবে। ওপারে ভালো থাকবেন শিল্পী!

-ইতি, আপনার গুণগ্রাহী...

আরও পড়ুন- 


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা