শোকে স্তব্ধ বলিউড, ইরফানকে স্মরণ করছেন তারকারা
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
তার নামে কখনও কোন স্ক্যান্ডাল শোনা যায়নি, কোন বিতর্কে জড়াননি, গুজব রটেনি, কারো নামে কতুকথা বলেননি। বলিউডে বন্ধুত্বটা ওপরে ওপরে, ভেতরে ভেতরে কমবেশি সবাই সবার শত্রু- এমন প্রবাদবাক্যকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন ইরফান খান...
প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ার, অথচ তার নামে কখনও কোন স্ক্যান্ডাল শোনা যায়নি, কোন বিতর্কে জড়াননি, গুজব রটেনি, কারো নামে কতুকথা বলেননি। বলিউডে বন্ধুত্বটা ওপরে ওপরে, ভেতরে ভেতরে কমবেশি সবাই সবার শত্রু- এমন প্রবাদবাক্যকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন ইরফান খান। বন্ধুত্ব হয়তো ইন্ডাস্ট্রিতে খুব অল্প লোকের সঙ্গেই ছিল তার, কিন্ত তাকে অপছন্দ করেন- এমন মানুষ বলিউডে একটাও থাকার কথা নয়।
সেটারই প্রমাণ পাওয়া গেল তার অকালমৃত্যুর পরে। বলিউড সেলিব্রেটিদের মোটামুটি সবাই শোকাহত হয়েছেন ইরফানের এমন আকস্মিক বিদায়ে, সবার কাছেই খবরটা এসেছে বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে। শুধু তো বলিউড নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকার বা বিরাট কোহলি সহ অন্যান্য অঙ্গনের মানুষজনও টুইটারে জানিয়েছেন শোকবার্তা, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন ইরফানকে।
শাহরুখ খান নিজের টুইটে ইরফানকে উল্লেখ করেছেন তার সময়ের সেরা অভিনেতা হিসেবে। ফিল্মি ক্যারিয়ার প্রায় একই সময়ে শুরু হয়েছিল দুজনের, শাহরুখ পরিণত হয়েছেন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতায়, ইরফান খ্যাতি পাননি অতটা, তবে অভিনয় ছাপিয়ে গেছেন বাকীদের, সমানতালে কাজ করেছেন হলিউড-বলিউড সব জায়গায়। সেই সম্মানটা তাকে দিতে ভোলেননি বলিউড বাদশা।
অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে পিকু সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ইরফান, সেই অমিতাভ বাকরুদ্ধ হয়েছেন ইরফানের এমন বিদায়ে। ঘটনাটাকে আজকের দিনের সবচেয়ে বেদনার খবর হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিগ বি, লিখেছেন, ইরফান তার দেখা সবচেয়ে ‘ইনক্রেডিবল ট্যালেন্ট’! অভিষেক বচ্চনও টুইতে সমবেদনা জানিয়েছেন ইরফানের পরিবারের প্রতি। ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের সঙ্গে ‘জজবা’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ইরফান, সাবেক বিশ্বসুন্দরীর কণ্ঠেও শোনা গেছে বেদনার সুর।
সালমান খান এক অ্যাওয়ার্ড শোয়ের ফটোশুটে ইরফানের সঙ্গে তার তোলা একটা ছবি আপলোড করেছেন টুইটারে, লিখেছেন, ‘বলিউডের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল ইরফানের বিদায়ে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে ইরফানের পরিবারের, ওরা যা হারিয়েছে, সেটার কোন তুলনা হয় না। স্রষ্টা ওদের শোক সইবার শক্তি দিন।’ ইরফানকে অসাধারণ এক প্রতিভা উল্লেখ করে তার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা আর সহমর্মিতা জানিয়েছেন। বলেছেন, অভিনয়ের দ্যুতিতে যে মুগ্ধতা ইরফান ছড়িয়েছেন, সেটার বিনিময়ে তাকে শুধু ভালোবাসাই উপহার দেয়া যায়।
টুইট করেছেন বিরাট কোহলি, ইরফানকে বিস্ময়কর এক অভিনেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি, খবরটা তার জন্যে ভীষণ শকিং ছিল বলেও উল্লেখ করেছেন টুইটে। ইরফানকে নিজের প্রিয় অভিনেতা হিসেবে উল্লেখ করে শচীন টেন্ডুলকার লিখেছেন, ইরফানের প্রায় সব সিনেমাই তার দেখা। প্রিয় অভিনেতার বিদায় কোনভাবেই মানতে পারছেন না তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টুইটার একাউন্ট থেকেও লেখা হয়েছে ইরফানের ব্যাপারে, সেখানে বলা হয়েছে, ইরফানের বিদায়ে বিশ্ব চলচ্চিত্রের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তার আত্মার শান্তিও কামনা করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
অনুরাগ বসুর লাইফ ইন অ্যা মেট্রো সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ইরফান, সেখানে তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন কঙ্কনা সেন শর্মা। দুজনেই আজকের দিনে ইরফানকে স্মরণ করেছেন। অনুরাগ তো সেই টেলিভিশন সিরিয়ালের দিনগুলো থেকেই জানতেন ইরফানকে, তিনি লিখেছেন, ইরফানের মতো প্রতিভাবান অভিনেতার সাথে কাজ করাটা একইসঙ্গে আনন্দের, এবং ঝুঁকির ছিল। তার প্রতিভাটাকে ক্যামেরায় ধারণ করাটা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। কঙ্কনা লিখেছেন, ইরফানের সঙ্গে কাজ করতে গেলে ‘ওর প্রতিভার ঔজ্জ্বল্যে আমরাও আলোকিত হয়ে যেতাম, নিজেদের আর বাড়তি কিছু করতে হতো না। ওর মতো সততা আর বিশুদ্ধতা নিয়ে বাস করা আরেকটা অভিনেতা কি আমরা কখনও পাব?’
ইরফানের সঙ্গে কখনও কাজ করা হয়নি ঋত্বিক রোশানের, কয়েকবার সামনাসামনি কথা হয়েছে শুধু। তাতেই ইরফানের বিদায়ের খবর শুনে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি ঋত্বিক। ইরফানকে বিরল প্রজাতির ভালো মানুষ হিসেবেই দেখেছেন ঋত্বিক। শাহরুখের মতো অক্ষয় কুমারও ইরফানকে দেখেছেন নিজের সময়ের সেরা অভিনেতা হিসেবেই। ফারহান বলেছেন, ওর অভিনয়ে অদ্ভুত একটা জাদু ছিল। এমন কাউকে আমরা আর কখনও পাবো না।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর কাছে ইরফান খান নামটা ভীষণ স্পেশাল। ইরফানের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকতা সিনেমায় কাজ করেছেন, ইরফানের উত্তরসূরি হিসেবেই তাকে ভাবা হতো একসময়, সেটা যে ভুল ধারণা ছিল না, নওয়াজ তা প্রমাণও করেছেন নিজের যোগ্যতায়। তাছাড়া ইরফানের পরিচালনায় একটা সিনেমাতেও অভিনয় করেছিলেন নওয়াজ। সেসব কথা টুইটে উল্লেখ করে আবেগাপ্লুত হয়েছেন নওয়াজউদ্দিন। পিকু সিনেমায় ইরফানের সঙ্গে অভিনয় করা দীপিকা পাড়ুকোন কিছু লেখেননি, তিনি শুধু নিজের ফেসবুক আর টুইটার প্রোফাইল পিকচারে শোকের কালো আবরণ ঝুলিয়ে ইরফানের নাম লিখে দিয়েছেন।
দ্য লাঞ্চবক্স সিনেমায় ইরফানের সহ-অভিনেত্রী নিমরাত কৌর বলেছেন, এত বড় ধাক্কা তিনি জীবনে পাননি। যে সুজিত সরকার ইরফানকে নিয়ে পিকু বানিয়েছিলেন, ইরফানকে লিড রোলে রেখে উধম সিংয়ের বায়োপিক বানানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন, শুটিং শুরু হবার কথা ছিল কয়েকদিন পরেই- সেই সুজিত সকালবেলায় বুকে পাথর চেপে সবাইকে জানিয়েছেন প্রিয় বন্ধু ইরফানের বিদায়ের খবর!
এর বাইরে ইরফানের জন্যে শোকের মিছিলে বাদ যাননি কেউই। এ আর রেহমান, অনিল কাপুর, শাবানা আজমি, অনুপম খের, শ্রদ্ধা কাপুর, সোনম কাপুর, শিল্পা শেঠি, শ্রেয়া ঘোষাল, মাধুরী দীক্ষিত, বিপাশা বসু, কপিল শর্মা, বিদ্যা বালান, ইমরান হাশমি, অর্জুন রামপাল, নিখিল আদভানি- সবাই শোক জানিয়েছেন ইরফানের জন্যে, করেছেন স্মৃতিচারণ।
ইরফান খান অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন। গত ত্রিশ বছরে ভারতে যতো অভিনেতা এসেছেন, তাদের মধ্যে সেরা। কিন্ত অসাধারণ একজন মানুষও যে ছিলেন তিনি, গ্ল্যামার জগতের পঙ্কিলতা যে তাকে স্পর্শ করতে পারেনি- সেটা জানা গেল তার চিরবিদায়ের পরেই। অন্য ভূবনে এই মানুষটা খুব ভালো থাকবেন, চারদিনে আগে মারা যাওয়া মায়ের সঙ্গে সময় কাটাবেন- এটাই আমাদের কামনা। মায়ের শেষযাত্রায় থাকতে পারেননি, তাই হয়তো এত জলদি মায়ের কাছেই চলে যাওয়ার তাড়া ছিল তার…
আরও পড়ুন-
- মানুষটার চোখ আলাদা অভিনয় জানতো...
- ইরফান, আপনি কেন আমার কান্নার কারণ হবেন?
- সাধারণের মাঝেই অনন্য অসাধারণ এক ইরফান খান!