কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে বলছি, একজন ইন্টার্ন ডাক্তার বলছি!

কুর্মিটোলা হাসপাতালকে করোনার জন্য সিলেক্টেড হাসপাতাল হিসেবে বলা হয়েছে উচ্চ মহল থেকে, সেটায়  সমস্যা নেই। জাতীয় ক্রাইসিসে ডাক্তারদেরই এগিয়ে আসতে হয়, আমরা আসি। আমজনতা গালি বুঝে দেয়, না বুঝে দেয়, দিক। ঐসব নিয়ে ভাবার সময় নাই। আপনাদের বাঁচানোতেই আমাদের দুঃখ ভুলে যাই আমরা। আমরা শপথে বলি, I solemnly pledge to consecrate my life to the service of humanity. এটা আমরা যেমন বলি, ঠিক তেমনি পালনও করে যাই। কিন্তু তাই বলে নিজেদের ন্যূনতম সেইফটি ছাড়া? 

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

কিন্তু কিন্তু কিন্ত কথা হচ্ছে.... এমন একটা হাসপাতালে ডাক্তারদের সুরক্ষার জন্য নূন্যতম মাস্কের সাপ্লাই নাই, হেক্সিসল নাই! নার্সদের কাছে বলতে বলতে হঠাৎ বের হয় একটা করে, আর আজকে তো স্পিরিট ভরে দিলো হেক্সিসলের বোতলে! PPE নামক বস্তুর চেহারা আজ পর্যন্ত কেউ এই হাসপাতালে দেখে নাই! ছোট-বড় কোনো লেভেলের ডাক্তারই নূন্যতম প্রোটেকটিভ কিট হাসপাতাল থেকে সাপ্লাই পাচ্ছেন না। উর্ধ্বতন একজন বরং বলেছেন, 'ডাক্তার বা নার্সরা মাস্ক পড়বেন না, রোগীরা আতঙ্কিত হবে! এত ভয় পেলে চলবে তোমাদের!'

জানের মায়া সবারই আছে, ফেরেশতা না আমরা। আমাদের ও মা-বাবা, ভাই-বোন আছে। ডাক্তার হয়ে সবার পরিবারের জন্য এটম বোমা হব নাকি আমরা? কল দিয়ে মায়ের, বোনের মনের উৎকন্ঠা শুনি, যুদ্ধ করে বলি- আম্মা দোয়া করো, ভালো আছি! আর কে আমাদের জন্য দুই অক্ষর ভাবে বলতে পারেন? এত যে ডাক্তারের দোষ ধরেন, কই, কোন পেশার লোক পাশে পেয়েছেন? সব পেশার মানুষ নিজের আখের গুছিয়ে পেটে ছুড়ি মেরে দিচ্ছে আর হাসপাতালে ঠিকই পড়ে আছে ঐ ডাক্তাররাই। 

তিন মাসের মতো প্রস্তুতির সময় পেয়েছি দেশ হিসেবে। তাও কোনো কন্ট্রোল নেই, প্রয়োজনীয় প্রোটেকটিভ কিট নেই! এমনকি আই ই ডি সি আর থেকেও গুটিকয়েক মানুষ সেবা পাচ্ছে। হোয়াটস দ্যা রিয়েল পিকচার- কেউ বলছে না! যদি আই ই ডি সি আর এর ঘোষণা অনুযায়ী কমিউনিটি স্প্রেড হওয়া শুরু হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেটি মোকাবিলার ব্যবস্থা আসলে কি আছে? কোথায় নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা? কোথায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা? কোথায় কিটের যোগাড়? 

টাকা কোথায় খরচ হয়, হচ্ছে, হাজার-কোটি টাকা, সেসব নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই! সক্ষমতা নেই! সাহস নেই! উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!

আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই। সাধারণ মানুষ আর ডাক্তার আলাদা না, সবাই আমরা এটম বোমের উপর বসে আছি! কখন কীভাবে ফাটবে, কে মরবে আর বাঁচবে, কেবল আল্লাহই জানেন।

নিরাপত্তা চাই, 

নাগরিক হিসেবে
ডাক্তার হিসেবে
মানুষ হিসেবে।

লেখক- আশিকুর রহমান মিয়া, ইন্টার্ন চিকিৎসক, কুর্মিটোলা হাসপাতাল।     


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা