বাজাজ ভি নামে একটা বাইক এসেছে বাজারে। দেখতে সুন্দর, সিটি কমিউটার হিসেবে ভাল। দেখলাম বেশ সুন্দর বাইক। একটু সার্চ করতেই দেখি এই বাইকের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অংশ। কীভাবে?

মেজবাহ উল আজিজ

বাজাজ ভি নামে একটা বাইক এসেছে বাজারে, বেশ অনেকদিন আগে। দেখতে সুন্দর, সিটি কমিউটার হিসেবে ভাল। আমি দেখলাম বেশ সুন্দর বাইক। একটু সার্চ করতেই দেখি এই বাইকের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অংশ। কীভাবে? তা জানার জন্য আগে জানতে হবে আইএনএস বিক্রান্তের গল্প। 

আইএনএস বিক্রান্ত ছিল ইন্ডিয়ান নেভীর প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার জাহাজ, একে নেভীর লোকেরা বলত Majestic-class aircraft carrier। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার এই জাহাজ তৈরী শুরু করে, তখন এর নাম ছিল "হারকিউলিস"। ১৯৫৭ সাথে ভারত এটাকে অসম্পূর্ণ অবস্থায় কেনে। ১৯৬২ সাথে তৈরী শেষ হয়। সংস্কৃত শব্দ Vikranta থেকে বিক্রান্ত শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ সাহসী, সেই নামে নতুন নামকরণ হয়ে হারকিউলিস পরিণত হয় আইএনএস বিক্রান্ত-এ। 

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এই আইএনএস বিক্রান্তের ভূমিকা ছিল অবিস্মরনীয়। মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধবিমান নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ঢুকে উপকূলের দিক থেকে আক্রমণ চালাতে শুরু করে বাংলাদেশের মধ্যে। প্রবল পরাক্রমে সমুদ্রসীমা আগলে রাখা বিক্রান্তকে ডোবানোর জন্য পাকিস্তান গাজী নামের একটি সাবমেরিন প্রেরণ করে। কিন্তু বিশাখাপত্তনমের কাছে এসে অজানা কোন কারণে গাজী ডুবে যায়। ভারতীয় আর্মি দাবী করে আইএনএস রাজপুতের গোলাবর্ষণে গাজী ডুবে যায়, পাকিস্তান আর্মি এই দাবী অস্বীকার করে। তাদের মতটা খুবই হাস্যকর, তারা বলে, গাজী ভুল করে নিজের মাইনফিল্ডে ঢুকে পরে এবং নিজের মাইনের আঘাতে নিজেই ডুবে যায়! সাধে সাধে তো এদের ছাগল বলে না! (The Ghazi attack মুভিতে হয়তো কারণ কিছুটা বলা আছে, কিন্তু এইটা ইতিহাসাশ্রিত মুভি, সরাসরি ইতিহাস নয়, তাই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।)

আইএনএস বিক্রান্ত

এই বিক্রান্ত থেকেই উড়ে আসা এলিজ বিমান দিয়ে ভন্ডূল করে দেয়া হয় পাকিস্তানীদের গোপন নৌযান, যার কোড নেম ছিল RK623। পাকিস্তানী একটি রেডিও ইন্টারসেপশনে জানা যায় যে, কয়েকটি ছোট ছোট নৌযানে করে পাকিস্তানী সেনারা তাদের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহ রাজাপুরের দিক থেকে পালিয়ে যাবার প্ল্যান করেছে, যে অপারেশনের কোডনেম RK623। এই অপারেশন ঠেকানোর জন্য বিক্রান্ত থেকে ১১ ডিসেম্বর সকালে এলিজ বিমান আকাশে ওড়ে। টহলের সময়ে তাদের চোখে পরে যে, সমুদ্রের মাঝে একটূ দ্বীপ নড়াচড়া করছে। সন্দেহ হওয়াতে কাছে যেতেই স্পষ্ট হয় যে এইটি আসলে কয়েকটা টাগবোট আর বার্জ সহযোগে একটি বহর, যার মধ্যে একটি ছিল পিএনএস যশোর। ধরা পরে যায় RK623। গুলিবর্ষন করে পালিয়ে যাওয়া ভন্ডূল করে দেয়া হয়। 

আবার ফিরে আসি বাজাজ ভি বাইকের কাছে। বিক্রান্তের সাথে এর যোগাযোগ কোথায়, তাই ভাবছেন তো? ২০১২ সাল পর্যন্ত আইএনএস বিক্রান্তকে মিউজিয়ামে রাখার পরে ভারত সরকার একটি জাহাজ ভাংগা কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে যে স্টিল বের হয়, তা গলিয়েই তৈরী হয়েছে এই বাজাজ ভি বাইক। অর্থাৎ আজ যারা যারাই এই বাইক কিনেছেন, তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক নিজের সাথে বহন করে চলেছেন। আপনাদের কাছে কেমন লাগছে জানি না, তবে ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ থ্রিলিং।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা