প্রোপাগান্ডা চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে ভারতীয় কর্পোরেট হাউজ, বলিউড এবং জনগণ যেভাবে ফুসে উঠছে তাতেই প্রমাণিত হয় শরীরের জোর আর গলাবাজিতে সাংবাদিকতা হয় না। জনগণ ঠিকই প্রোপাগান্ডা চ্যানেলকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

আজ ভারতের হলুদ টিভি সাংবাদিকতার কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হচ্ছে!

বিগত কয়েক বছর ধরেই ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে নির্লজ্জভাবে চলছিল ঘৃণার চাষাবাদ। চলছিল মিডিয়া ট্রায়াল। সুশান্তের আত্মহত্যাকে  নিয়ে চলছিল জমজমাট টিআরপি বিজনেস। 

সরকারের সমর্থনপুষ্ট বেশ কিছু ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টুডিওতে অতিথিদের আমন্ত্রণ করে যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করত।

লাগাতারভাবে তারা জাতীয় মাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছিল, করোনার সময়ে তাবলীগ জামাতকে  দায়ী করেছিল ভারতে করোনা বিস্তারে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা, তাদের জঙ্গি অপবাদসহ  চলছিল ইসলাম  ধর্মকে কুটুক্তি করে টিভি ডিবেট। 

বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা সংবাদে ভারতে মাসখানেক আগে এনআরসিকে  ঘিরে সাম্প্রদায়িক  দাঙ্গার সূত্রপাত হতে যাচ্ছিল। একের পর এক মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে পাবলিক ফিগারদের অপমান করছিল।

অরনাভ গোস্বামীর রিপাবলিকান টিভি, টাইমস নাউ, জিটিভিসহ আরও বেশ কিছু ভারতীয় টিভি চ্যানেল সরাসরি পরিণত হয়েছিল ভারতীয়  সরকারের  দালালী চ্যানেলে। 

তারা পরিকল্পিতভাবে বিরোধীদলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার  চালাচ্ছিল। টেলিভিশনগুলো প্রোপ্যাগান্ডা মেশিনে পরিণত হয়েছিল।

('উগান্ডা'র কিছু কিছু টিভি চ্যানেলগুলোর সাথে কি ভারতীয় প্রোপাগান্ডা চ্যানেলগুলোর মিল খুঁজে পাচ্ছেন? খুঁজে দেখুন, পেয়ে যাবেন। )

চিৎকার করেই  ভিউয়ার বাড়ানোর  মিশনে ভারতে সত্যিকারের সাংবাদিকতা হারতে বসেছিল। এনডিটিভির রাভিশ কুমারের মতো বলিষ্ঠ সাংবাদিকরা হয়ে পড়েছিল একঘরে। অবশেষে হয়তো সেই ঘৃণার হয়তো পরিসমাপ্তি হতে চলছে।

এই চার সাংঘাতিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে মামলা

ভারতের বৃহৎ মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান Bajaj (দুনিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম মোটরসাইকেল রপ্তানিকারন প্রতিষ্ঠান) ভারতের এক নাম্বার বিস্কুট তৈরি প্রতিষ্ঠান Parle-G  ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠান ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রচারকারী কোন টেলিভিশন চ্যানেলে  আর বিজ্ঞাপন দিবে না।

এমনিতেই সোশ্যাল মিডিয়ার সময়ে টিভি চ্যানেল ধুঁকতে বসেছিল। তার উপর বড় বড় কোম্পানির বিজ্ঞাপন ছাড়া টেলিভিশন অচল। ধ্বংস। মৃত প্রায়।

কেবল তাই নয়, বলিউডও  ইয়োলো জার্নালিজমের বিপক্ষে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। বগত কয়েক দিন ধরে এইসব টিভি চ্যানেল লাগাতারভাবে বলিউডের বিভিন্ন অভিনেতাদের সম্মানহানি করছিল। 

তারই ফলশ্রুতিতে সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খান, করণ জোহরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারতীয় হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিয়েছে।

ফুঁসে উঠছে ভারতীয় টিভি দর্শক। তারা টেলিভিশন চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, এইসব প্রোপাগান্ডা চ্যানেলে যেসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদেরকেও বয়কটের ডাক দিচ্ছে। 

তদন্তে নামছে এইসব চ্যানেলের অর্থের উৎস নিয়ে। উল্লেখ্য ভারতের অনেক খারাপের মধ্যেও ওদের বিচার বিভাগ আর নির্বাচন কমিশন এখনও পুরোপুরি স্বাধীন। 

ফলে টিভি টিআরপি কমে যাচ্ছে। টিআরপি কমলে অটো বিজ্ঞাপন কমে যায়। অর্থের অভাবে  ভেঙ্গে যাচ্ছে প্রোপাগান্ডা টিভি চ্যানেলের কোমর।

ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলের এমন দৃশ্য কয়েকমাস আগেও ছিল কল্পনাতীত। হলুদ সাংবাদিকতার হুমকিতে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া সাংবাদিকতা আবারও প্রাণ ফিরে যাচ্ছে যেন। জনপ্রিয় হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেল- নিউজলন্ড্রি, দা ওয়্যার, দেশ ভকত, কুনাল কামরাসহ আরও অনেকেই। 

প্রোপাগান্ডা চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে ভারতীয় কর্পোরেট হাউজ, বলিউড এবং জনগন যেভাবে ফুসে উঠছে তাতেই প্রমাণিত হয় শরীরের জোর আর গলাবাজিতে সাংবাদিকতা হয় না। জনগণ ঠিকই প্রোপাগান্ডা চ্যানেলকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। জনগনের আদালতই সবচাইতে বড়  আদালত। টিকে থাকতে চাইলে সত্য ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার বিকল্প নেই।  

ভারত থেকে 'উগান্ডা'র টিভি চ্যানেলগুলো কি কোনো শিক্ষা নিবে?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা