চল্লিশ লাখ টাকায় 'আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ' ক্রয়: মানুষ এত বোকাও হয়!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ভারতের মীরাটের এক ডাক্তার ৩৩ লাখ রূপি দামে কিনলেন আরব্য রজনীর সেই 'আশ্চর্য প্রদীপ'। যেটা ঘষলে নাকি এখনো বের হয় দৈত্য, পালন করে হুকুম! তারপর ঘটনা গড়ালো থানা-পুলিশ পর্যন্ত...
আমি হলফ করে বলতে পারি, আপনি জীবনে নিশ্চিতভাবেই অনেক রকম প্রতারণা দেখেছেন বা অনেক রকম প্রতারণার গল্প শুনেছেন। তবে এখন যা লিখছি, এরকম প্রতারণার কথা হয়তো কখনো শোনেননি, যেখানে নিছক ভণ্ডামি করে কেউ কাউকে 'আলাদিনের প্রদীপ' বলে 'রদ্দিমাল' গছিয়ে দিচ্ছে! আপনি শুনে নিশ্চিতভাবেই হাসবেন। হাসারই কথা। এরকম মানুষ এখনো আছে নাকি, যার সামনে এসে গড়পড়তা এক প্রদীপ দেখিয়ে আরব্য রজনীর 'আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ' এর ধুনো তুললেই সে সুড়সুড় করে সেই প্রদীপ কিনে নেবে? কিন্তু শুনতে অবাস্তব মনে হলেও সম্প্রতি এরকম এক ঘটনাই ঘটেছে ভারতে। যে খবরটা শুনে সবারই মোটামুটি চক্ষু চড়কগাছ, ছানাবড়া, গোলগোল ইত্যাদি!
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের মীরাটে। মীরাটের এক ডাক্তারকে টার্গেট করে দুই জন প্রতারক। তারা ফন্দি এঁটে একদিন এসে ডাক্তারকে জানান, তাদের কাছে আরব্যোপন্যাস এর সেই জাদুর প্রদীপটি রয়েছে, যেটি ঘষলেই উপস্থিত হবে দৈত্য। যদিও প্রথমে ডাক্তার সেটি বিশ্বাস করতে চাননি। স্বাভাবিক। কেউই চাইবে না। প্রথমে যে ডাক্তার বিশ্বাস করবেন না, তা এই প্রতারকেরাও জানতেন। পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে এবার এই প্রতারকেরা প্রদীপ ঘষে দৈত্য আনার ব্যবস্থা করেন এবং ডাক্তারকে সেই দৈত্য দেখান। বলাই বাহুল্য, মোটেও আসল দৈত্য ছিলো না তা। সাজিয়েগুছিয়ে, রঙ মাখিয়ে এক মানুষকে 'দৈত্য' বানিয়ে হাজির করা হয়েছিলো ডাক্তারের সামনে।
এখানেই শেষ নয়, এই প্রতারকেরা এসে ডাক্তারকে বলেন, তাদের বাড়িতে এক বাবা এসেছেন, যিনি সাথে করে নিয়ে এসেছেন এই প্রদীপ। ডাক্তারকে তারা একরকম জোর করেই নিয়ে যান সেই বাবার কাছে। বাবা তখন ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে ছিলেন। ঐশ্বরিক দ্যুতি বেরোচ্ছিলো নাকি তার গা থেকে! এই বাবা আর প্রতারকেরা মিলে ডাক্তারকে মগজধোলাই করা শুরু করলেন।
এভাবেই প্রতারকেরা ডাক্তারকে এক পর্যায়ে বোঝাতে সক্ষম হন, এই বাবা একজন আধ্যাত্মিক পুরুষ। এবং এই প্রদীপও আরবোপন্যাসের সেই 'আশ্চর্য প্রদীপ।' ডাক্তার তখন গাঁইগুঁই করলেও প্রদীপটি কিনতে রাজি হন। প্রতারকেরা প্রদীপটির দাম হাঁকান পনেরো কোটি রূপি! ডাক্তার মুলোমুলি করে শেষমেশ তেত্রিশ লাখ রূপিতে কিনে নেন প্রদীপটিকে! এরপর প্রদীপ বগলদাবা করে হাসিমুখে ফেরেন বাড়ি।
ওদিকে প্রতারকেরাও দিয়েছে তখন চম্পট। যাবার আগে ডাক্তারকে বলে গিয়েছে, এই প্রদীপ যেন দুই বছরের মধ্যে না ব্যবহার করা হয়। তাহলে ঘটতে পারে পরিবারের অমঙ্গল। যদিও সেই অপোগণ্ড ডাক্তার বাড়িতে এসে দুই বছর আর অপেক্ষা না করে সঙ্গে সঙ্গেই অজস্রবার ঘষা দিলেন সেই আশ্চর্য (!) প্রদীপের গায়ে। কিন্তু প্রদীপ যেভাবে থাকার, ঠিক সেভাবেই রইলো। কোনো দৈত্য আর বেড়োলো না কোথাও থেকে। যেন অদৃশ্যভাবেই ডাক্তারের গালে থাপ্পড় কষিয়ে বললো-
ওরে বোকা, এটা কী ফাজলামি হচ্ছে? আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ কিনেছো তুমি, ইয়ার্কি হচ্ছে?
এরপরেই ডাক্তার বুঝলেন, কত বড় অপোগণ্ড তিনি। পড়িমড়ি করে ছুটে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করলেন। পুলিশেরাও এরপর থেকে চেষ্টা করে ধরেও ফেলেছে এই প্রতারকদের। এই প্রতারকেরা এরকম অভিনব কায়দায় আরো অজস্র মানুষকে ঠকিয়েছেন। পাওয়া গিয়েছে সেগুলো নিয়ে তথ্যও। তবে এই ঘটনা সম্পর্কে জানার পরে অনেক আগে দেখা অনীক দত্তের সিনেমা 'আশ্চর্য প্রদীপ' এর কথা মনে পড়ে গেলো, যদিও সিনেমার গল্পের সাথে বাস্তবের এ ঘটনার কোনোই মিল নেই। তবে ভাবলে সত্যিই অবাক লাগে, মানুষের কত লোভ! শর্টকাটে সাকসেসের মুলো দেখিয়ে মানুষকে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে সর্বস্ব লুটে নেয়া কতটাই সোজা!
আসলেই পৃথিবী বিচিত্র।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন