এই জায়গায় যদি অন্তত ভারতকে অনুসরণ করতাম আমরা...
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
বাঁ পাশের ছবিটা কলকাতার, ডান পাশেরটা আজকে ঢাকার। আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি, অথচ ভারত ঠিকই লকডাউন জারি রেখেছে জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। তারা অফিস-আদালত বা গণপরিবহণ খুলে দেয়নি, লড়াইটা শেষ করেনি এখনও...
বাংলাদেশে যেদিন করোনাভাইরাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লকডাউন নামের 'সাধারণ ছুটি' শেষ হয়েছে, ঠিক সেদিনই ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা লকডাউন জারী রাখবে জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। গতকাল একদিনে প্রায় আড়াইশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভারতে, কাজেই কোনরকম ঝুঁকি নেয়ার পথে যায়নি ভারত সরকার। ৮ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দির-মসজিদ এবং শপিং মল খুলবে বলেও জানিয়েছে ভারত। অথচ আমরা এই কাজ করেছি আরও অন্তত মাসখানেক আগে! কমবেশি সবকিছুতেই ভারতকে অনুকরণ করা আমরা এই জায়গায় ভারতকে পেছনে ফেলেছি বেশ বড়সড় ব্যবধানেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অর্জন কি গর্ব করার মতো?
শনাক্তের অঙ্কে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে, চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধানে আড়াই হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে একদিন আগেই। শুরু থেকে প্রোপার লকডাউন নিশ্চিত করা গেলে আজ হয়তো এই অবস্থাটা দেখতে হতো না। আমরা দু'দিন আগে সাধারন ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে ঢাকা ছাড়ার সুযোগ করে দিয়েছি, মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করতে পারিনি। অথচ পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা নিয়ে হাজারো সমালোচনা হলেও, ভারত কিন্ত লকডাউনটা নিশ্চিত করতে পেরেছে।
ভারতে শত শত মাইল হেঁটে দিনমজুর বা দরিদ্র্য মানুষজন বাড়ি ফিরেছে, কেউ হয়তো পথেই প্রাণ হারিয়েছে- কিন্ত তারা ব্যাপক হারে গাড়ি রাস্তায় নামতে দেয়নি, এমনকি ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রেও আইন শিথিল করেনি খুব একটা। অথচ আমাদের ঢাকা শহরে লকডাউনের এক।মাসের মাথায়ই রাস্তায় জ্যাম দেখেছি আমরা। ঈদের আগে ঢাকা থেকে বের হবার পয়েন্টগুলোতে লাখো মানুষের ভীড় হয়েছে। সরকার হাস্যকর সিদ্ধান্ত নিয়েছে- ব্যক্তিগত গাড়িতে ঈদে বাড়ি যেতে দেয়ার! এই সুযোগে মানুষজন গাড়ি ভাড়া করে ঢাকা ছেড়েছে, স্বপ্নের বদল্র করোনাভাইরাস গেছে বাড়ি।
ভারতের দিকে একবার তাকাই। ভারতে কেন্দ্রীয়ভাবে লকডাউন শুরু হয়েছে ২৫শে মার্চ থেকে। এর আগেই কয়েকটা রাজ্য অবশ্য লকডাউনে চলে গিয়েছিল করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায়। সেই লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে ধাপে ধাপে। প্রতিবারই মেয়ার শেষ হবার বেশ আগেভাগে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ছে। অথচ শুরুর দিকে আমরা সাধারণ ছুটির একদম শেষ ধাপে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছুটি বাড়ানোর। এটার সুযোগ নিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা দফায় দফায় শ্রমিকদের আনা-নেয়া করিয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক পায়ে হেঁটে শত শত মাইল পাড়ি দিতে বাধ হয়েছে শুধু চাকরি বাঁচানোর মায়ায়!
এমন নয় যে ভারত খুব সফলভাবে করনা মোকাবেলা করতে পেরেছে। রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে সেখানে, চীনের চেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ভারতে। তবুও তারা চেষ্টা করছে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রেখে করোনা মোকাবেলার। তারা মন্দির-মসজিদ খুলছে, কিন্ত অফিস-আদালত খুলে দেয়নি, গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে রাস্তায় নামায়নি। তারা আরেকটু সময় নেয়ার পথে হেঁটেছে। জীবন আর জীবিকার মধ্যে তারা জীবনটাকে দামী ভেবেছে, দুই মাসের ওপরে লকডাউন পালন করা হয়েছে, তবুও তারা হাল ছাড়তে চাইছে না এত জলদি।
অথচ আমরা হাল ছেড়ে দিলাম! দুই মাসের এই সাধারণ ছুটির আসলে দরকার ছিল না। একটা মাস, শুধু একটা মাস কঠোরভাবে কারফিউ দিলে, আর্মি-র্যাব-পুলিশকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দিয়ে মাঠে নামালে, সবার জন্যে খাবার এবং প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো সরকারের তরফ থেকেই সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হলে এক মাসেই করোনার সংক্রমণটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারতো। কিন্ত সরকার এবং জনগন- দুই পক্ষই উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছি, তারই ফলাফল এখন ভোগ করছে পুরো দেশ।
করোনা যখন সবচেয়ে বেশি আকারে ছড়াচ্ছে, তখন আমরা গণপরিবহন খুলে দিলাম, অফিস-আদালত সব চালু করে দিলাম। এখন সবাই ছুটে আসতে বাধ্য হবে ঢাকার দিকে। এখন দিনে আড়াই হাজার শনাক্ত হচ্ছে। পাবলিক বাসে চড়ে অফিসে যাওয়া বা অফিস-আদালতে স্বাভাবিক ব্যস্ততা ফিরে এলে এই সংখ্যাটা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে- সেই সম্পর্কে নীতি-নির্ধারকদের ধারণা নেই সম্ভবত। হার্ড ইমিউনিটির অলীক কল্পনায় বিভোর আমরা জানিনা, জীবিকা ধরে রাখতে গিয়ে কত জীবন আমাদের বিসর্জন দিতে হবে। সব বিষয়ে ভারতে অন্ধভাবে অনুকরণ করা আমরা যদি এখানেও ভারতের পথটা একটু অনুসরণ করতে পারতাম...