ইমরান খানের কথা উঠলেই সবার আগে মনে পড়ে জানে তু ইয়া জানে না’র কথা, ‘কাভি কাভি অদিতি’ কিংবা ‘পাপ্পু ক্যান্ট ড্যান্স সালা’ গানগুলো যেন অটোমেটিক কানে বাজতে থাকে...

তার আগমনটা ঘটেছিল একদম সাড়া জাগিয়ে। আমির খানের ভাগ্নে নায়ক হিসেবে বলিউডে এন্ট্রি নিচ্ছেন, এটা নিয়ে তখন মিডিয়া আর দর্শকদের উৎসাহ ছিল প্রচুর। প্রথম সিনেমাটা খুব প্রশংসিত হয়েছিল, হাততালি পেয়েছিল তার অভিনয়ও। ‘জানে তু ইয়া জানে না’ নামের সেই সিনেমা দিয়ে বি-টাউনে অভিষেকের পর স্ততির বন্যায় ভেসেছিলেন ইমরান খান। একটা সময় তাকে ভাবা হচ্ছিলো বলিউডের নেক্সট বিগ থিং। সেই ইমরান এখন রাডারের অনেক বাইরে হারিয়ে গেছেন, হয়তো বলিউডও তাকে ভুলে গেছে। কিন্ত আমরা যারা কৈশরে বলিউডি সিনেমার পোকা ছিলাম, তারা কি এত সহজে ইমরানকে ভুলে যেতে পারি? 

বলিউডে ইমরানকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল প্রায় চার বছর আগে। বিনোদন পাতা থেকে হারিয়েই গিয়েছিলেন প্রায়, সম্প্রতি ইমরান শিরোনাম হয়েছেন স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির খবর দিয়ে। অবন্তিকা মালিকের সাথে বছর দশেক চুটিয়ে প্রেম করার পরে বিয়ে করেছেন ২০১১ সালে, তিন বছর পরে দুজনের ঘর আলো করে এসেছে কন্যাসন্তানও। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইমরান এবং তার স্ত্রী প্রায় বছরখানেক ধরেই আলাদা থাকছেন, তাদের ডিভোর্সের আনুষ্ঠানিকতাও নাকি শুরু হয়ে গেছে। 

খবরটা শুনে খারাপ লাগলো খুব। ইমরান এবং অবন্তিকার জুটিটা ছিল বলিউডের সবচেয়ে কিউট কাপলদের মধ্যে একটা। সেটা এভাবে ভেঙে যাবে, এমনতা ধারণায় ছিল না। ইমরানের ফিল্মি ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে, ব্যক্তিগত জীবনটাও তিনি এখন পার করছেন বিপর্যস্ত অবস্থায়। অথচ তার যাত্রাটা যখন শুরু হয়েছিল, তখন কেউ কি ভাবতে পেরেছিল যে একযুগ পরে এমন বিধ্বস্ত একটা অবস্থায় এসে দাঁড়াবেন তিনি?

ইমরান-অবন্তিকা

‘জানে তু ইয়া জানে না’র সেই জয় সিং রাঠোর চরিত্রটা দিয়েই আমাদের মনে ছোট্ট একটা জায়গা করে নিয়েছিলেন ইমরান। আমিরের ভাগ্নে তিনি- এই পরিচয়টা গৌন হয়ে গিয়েছিল তখন। এই ইমরানই যে শিশু চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কেয়ামত সে কেয়ামত তাক কিংবা জো জিতা ওহি সিকান্দারের মতো সিনেমায়, সেগুলো তখনও আমরা জানি না। ইমরান আমাদের ভালোবাসা অর্জন করে নিয়েছিলেন  নিজগুণে। জেনেলিয়া ডি-সুজার সঙ্গে তার জুটিটা দর্শকের পছন্দ হয়েছিল ভীষণ, সিনেমাটাও কমার্শিয়ালি সাকসেস পেয়েছিল দারুণভাবে। চকলেট বয় ইমেজটা তার জনপ্রিয়তায় বাড়তি ভূমিকা রেখেছিল তখন। 

সঞ্জয় গান্ধীর ‘কিডন্যাপ’ সিনেমাতেই আবার একটু রাফ এন্ড টাফ লুকে হাজির হলেন, এরপরে করলেন ‘লাক’, সিনেমাটা ফ্লপ হলো। পরের বছর নিয়ে এলেন আই হেট লাভ স্টোরি। ইমরানের এই সিনেমাটা আমার খুবই পছন্দের, ধর্ম প্রোডাকশনের ব্যানারের এই রোমান্টিক কমেডিতে যেভাবে বলিউডি রোমান্টিক সিনেমার ট্রেডিশনাল ধারণাটাগুলোর সমালোচনা করা হয়েছিল, সেটা বেশ উপভোগ্য ছিল। সেই সিনেমায় ইমরানের করা ‘জয় ঢিঙরা’ নামের চরিত্রটাও আমার অসম্ভব প্রিয়। যদিও তার অভিনয়প্রতিভা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন উঠেছে।

একই বছরে এসেছিল ‘ব্রেক কে বাদ’, দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে একবারই জুটি বেঁধেছেন ইমরান, সেটা এই সিনেমায়। বক্স অফিসে অ্যাভারেজ ভার্ডিক্ট পেয়েছিল সিনেমাটা। পরের বছর ইমরান এলেন তুফান সঙ্গে নিয়ে, সিনেমার নাম দিল্লি বেলি। বলিউডের সর্বকালের সেরা ব্ল্যাক কমেডি ফিল্মের নামের তালিকা যদি আমাকে করতে বলা হয়, সেই তালিকায় সবার ওপরে আমি দিল্লি বেলিকেই রাখবো। নিজের চকলেট বয় ইমেজটা ভেঙেচুড়ে এখানে হাজির হয়েছিলেন ইমরান, নিজেকে ভেঙেই অভিনয় করেছেন এই সিনেমায়। ইমরানের ক্যারিয়ারের সেরা সিনেমা বেছে নিতে বললেও দর্শকদের বেশি ভোট দিল্লি বেলির বাক্সেই পড়বে। 

দিল্লি বেলি সিনেমায় ইমরান খান

একই বছর মেরে ব্রাদার কি দুলহান করলেন যশরাজের ব্যানারে, ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে তার জুটিটাও পছন্দ করেছিল দর্শক। এরপরেই আসলে পতনের শুরু। কারিনা কাপুরের সঙ্গে তার ‘এক ম্যায় অর এক তু’ সিনেমাটা দর্শকের ভালো লাগেনি, অসম বয়েসী জুটিটা গ্রহণ করেনি তারা। ‘মাতরু কি বিজলি কা মান্ডোলা’ নামের একটা অখাদ্য টাইপের সিনেমা করলেন আনুশকা শর্মার সঙ্গে, সেটাও ফ্লপ। অক্ষয় কুমারের সঙ্গে তাকে দেখা গেলো ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’তে- ফলাফল একই, ফ্লপ। কারিনা কাপুরের সঙ্গে আরও একবার জুটি হলো তার, ভাগ্য বদলালো না। 

বলা হয়, বলিউডে নাকি প্রতি শুক্রবারে স্টারদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। দর্শক গ্রহণ করলে এক শুক্রবারেই কেউ তারকা হয়ে যেতে পারে। আবার কেউ তারকাখ্যাতি হারিয়েও ফেলতে পারে। ইমরান খানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টাই হয়েছে। টানা ফ্লপ সিনেমা উপহার দেয়ায় তাকে নিয়ে প্রযোজকদের মধ্যে আগ্রহ কমেছে, পরিচালকেরাও তাকে আর নিতে চাননি। কঙ্গনা রনৌতের বিপরীতে কাট্টি বাট্টি নামের একটা সিনেমায় তাকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালে, সেই সিনেমাটা বক্স অফিসে ডিজাস্টারের খেতাব পেয়েছিল। এরপরে রূপালী পর্দার সঙ্গে আড়ি।

মাঝে অনেকবার খবর এসেছে, অভিনয় আর নয়, সিনেমা পরিচালনা দিয়ে আবার বলিউডে কামব্যাক করবেন ইমরান খান। ক্যামেরার সামনে টানা ব্যর্থতাই হয়তো তাকে ক্যামেরার পেছনে টেনে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তবে পরিচালক হবার বাসনা তার মধ্যে আগে থেকেই ছিল, এটাও সত্যি। কিন্ত সেই খবরগুলোর সত্যতাও প্রমাণীত হয়নি আর। ইমরান আড়ালেই থেকেছেন। কিছুদিন আগে তার একটা ছবি ভাইরাল হলো, সেখানে তাকে দেখা যাচ্ছিল রুগ্ন অবস্থায়, শরীরের ওজন কমে গেছে আশংকাজনক হারে। বোঝাই যাচ্ছিলো, মানুষটা ভালো নেই। 

ইমরান খানের কথা উঠলেই সবার আগে মনে পড়ে জানে তু ইয়া জানে না’র কথা, ‘কাভি কাভি অদিতি’ কিংবা ‘পাপ্পু ক্যান্ট ড্যান্স সালা’ গানগুলো যেন অটোমেটিক কানে বাজতে থাকে। শাহরুখ বা সালমানের মতো আমরা ইমরানের ভক্ত ছিলাম না, কিন্ত তিনি আমাদের পছন্দের নায়ক ছিলেন। রনবীরের সঙ্গে তার উপস্থাপনা করা ফিল্মফেয়ারের আসরগুলোর খণ্ডাংশ এখনও হয়তো ইউটিউবের হোমপেজে পেলে দেখা হয়। সেই মানুষটা এখন আর কোথাও নেই, যেন ভোজবাজীর মতো মিলিয়ে গেছেন সবকিছু ছেড়ে…


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা