একজন সাধারণ অটোরিক্সাচালক হওয়া সত্বেও এই করোনাকালে নিরাপত্তাটাই ইলিয়াস মোল্লার কাছে অগ্রগণ্য, মানুষের সুস্থতার জন্যে তিনি অটোরিক্সার মধ্যে রাখেন হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, আস্ত বেসিন!

আমাদের দেশের মানুষ যেকোনো একটি নির্দিষ্ট টপিকে খুব বেশিদিন থাকতে পছন্দ করে না। এত অজস্র ঘটনার ভীড়ে কোনো একটি নির্দিষ্ট টপিকে থাকাটাও তো আসলে বিলাসিতা। সেকারনেই হয়তো মানুষজন মহামারী করোনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না আর। প্রায় কেউই আর থাকতে চাইছে না ঘরের মধ্যে। সামাজিক দূরত্ব আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সবাই যে যার মত করেই স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করা শুরু করেছে। সরকারও ঢিমেতালে খুলে দিয়েছে প্রায় সবকিছুই। এদিকে করোনার প্রকোপ কিন্তু খুব একটা কম নেই এখনো, তবু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আস্তে আস্তে সবকিছুই হয়ে যাচ্ছে আগের মতন।

অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করি, গণপরিবহনগুলোর ক্ষেত্রে। হ্যাণ্ড স্যানিটাইজারের বালাই নেই, এক সীট পরপর বসার যে নিয়ম ছিলো, কিছুদিন আগে বাতিল হয়েছে সে নিয়মও। গাদাগাদি করে মানুষ বসা, হৈচৈ, ভীড়... গণপরিবহন দেখে বোঝারই উপায় নেই, মহামারী এখনো আছে এ দেশে। মানুষজন দেদারসে উঠছেও এসব গণপরিবহনে। মাস্ক নেই, সতর্ক থাকার ন্যূনতম চেষ্টা নেই এসব যাত্রীদেরও।

এরমধ্যেও ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা লক্ষ্য করি এক অটোরিক্সাচালকের ক্ষেত্রে। তার নাম- ইলিয়াস মোল্লা। পেশায় অটোরিক্সাচালক। তবে তার অটোরিক্সাটি অন্যসব অটোরিক্সার চেয়ে একটু ভিন্ন। তার অটোরিক্সায় ঢুকলে সীটের সামনে প্রথমেই নজরে পড়বে একটি বেসিন। যে বেসিনে হাত ধুতে পারবেন যাত্রীরা। বেসিনের পানি আসে, চালক-সীটের পাশে রাখা একটা সিলিন্ডার থেকে। এছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও স্প্রেও আছে তার অটোরিক্সায়।

ইলিয়াস মোল্লা, ছবি কৃতজ্ঞতা- বিবিসি বাংলা

হাতকে জীবানুমুক্ত করে আপনি বসলেন। চাইলে একটু পাউডার, ক্রিমও লাগাতে পারবেন মুখে, হাতে। সে ব্যবস্থাও আছে। হুট করেই আপনার হয়তো মনে হলো, আজ আপনি মাস্ক আনেননি। ঘাবড়াবেন না, ইলিয়াস মোল্লার অটোরিক্সায় আছে মাস্কেরও ব্যবস্থা। আপনার প্রয়োজনমতোই আপনি মাস্ক ব্যবহার করতে পারবেন এখান থেকে। স্বাস্থ্য-সুরক্ষার জন্যে ইলিয়াস মোল্লা তার বাহনকে এভাবেই তৈরী করেছন, মহামারীর কথা ভেবে, মানুষের সুস্থতার কথা ভেবে।

ইলিয়াস মোল্লা কেউকেটা কেউ নন। সমাজ, আশপাশ বদলে রাখার ক্ষমতাও তিনি রাখেন না৷ তবে যতটুকু পরিবর্তন করার সামর্থ্য তিনি রাখেন, যতটুকু করা গেলে মানুষকে একটু হলেও সুস্থ রাখা যায়, সেটুকু তিনি করে যাচ্ছেন আপ্রাণ চেষ্টায়। এখানেই ইলিয়াস আলী হয়ে গিয়েছেন সবার থেকে আলাদা।

ইলিয়াস মোল্লা হয়তো সেরকমভাবে শিক্ষিত নন। কিন্তু যে মানসিকতা ও যে শিক্ষায় তিনি ভেতর থেকে শিক্ষিত, সে শিক্ষা নেই আমাদের মত অজস্র তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরই। হয়তো অটোরিক্সার মধ্যে নেয়া এ উদ্যোগগুলো খুব একটা পার্থক্য ফেলবে না দিনশেষে। তবু এটি হয়ে থাকবে আমাদের গালে একটি চপেটাঘাত! অনেক কিছুই করার ছিলো আমাদের। করিনি তো কিছুই। এদিকে এই শ্রমজীবী মানুষটি মহামারীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝে মানুষের নিরাপত্তার জন্যে নিজস্ব গণ্ডির মধ্য থেকেই করে যাচ্ছেন সবটুকু। কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা না করেই।

ইলিয়াস মোল্লা এভাবেই জিতে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা