হাত ধোয়ার কথা বলায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিলো যাকে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
হয়তো মনে মনে ভাবছেন, কী এমন করেছেন তিনি, সামান্য হাত ধুতেই তো বলেছেন! কিন্তু না, তিনি এর থেকেও বড় কিছু করেছেন, অনেক বড় কিছু! যার মূল্য দিতে হয়েছিল জীবন দিয়ে!
সিডাটিভ হিপনোটিক্স: একটা সময়ে হাত ধোয়ার প্রচলনটা ছিলো সেরেমোনিয়াল। অন্যসব ক্ষেত্রে, যেমন বাথরুম থেকে এসে, খাবার আগে, কোন নোংরা জিনিস ধরার পরে, এমনকি ডাক্তাররাও হাত ধুতো না কোন ক্লিনিক্যাল প্রসিডিউর কিংবা ওটির আগে। ডক্টর ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ, হাঙ্গেরিয়ান এই ডাক্তার পিউপেরাল ফিভার, যেটা চাইন্ড বেড ফিভার নামে পরিচিত ছিলো, সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন।
১৮৪৬ সালে তিনি একজন ফিজিশিয়ানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পিউপেরাল সেপসিস এর মধ্যে কানেকশন খোঁজার চেষ্টা করেন। তিনি দেখেন, যে সব ডাক্তাররা পারসোনাল হাইজিন মেনে চলছেন তাদের অধীনে থাকা গর্ভকালীন মায়ের মৃত্যুর হার কমছে। ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ তার ইন্টার্নদের জানিয়ে দিলেন, সবার হাত ধুয়ে নিতে হবে যে কোন ডেলিভারির আগে। আর ডেলিভারিতে ব্যবহৃত ইন্সট্রুমেন্ট ক্লোরিনেটেড লাইমে ধুতে হবে।
ব্যাপারটা এখন খুব সিম্পল লাগছে শুনতে। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, কী এমন করেছেন তিনি, সামান্য হাত ধুতেই তো বলেছেন! কিন্তু না, তিনি এর থেকেও বড় কিছু করেছেন। কারণ তখনও জীবাণু তত্ত্ব সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সায়েন্টিফিক সোয়াসিটির লোকজন তখনও বিশ্বাস করতো রোগ বালাই হয় খারাপ আত্মা দিয়ে, কিছু ভর করলে রোগীর উপর ইত্যাদিতে। সেখানে ডক্টর ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ শুধু মাত্র তার ডাক্তারদের হাত ধুইয়ে গর্ভকালীন মৃত্যুর হার ১০% থেকে ১% এ নামিয়ে ফেললেন।
এবার আসি গল্পের টুইস্টে। অবশ্যই টুইস্ট আছে, নয়তো এই ঘটনা লেখার ইন্টারেস্ট পেতাম না। আপনারাও পড়তেন না। ডক্টর ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ চাইল্ড বেড ফিভারে মায়ের মৃত্যু ১ পারসেন্টে নামিয়ে আনলেন। কি আশা করছেন, তাকে খুব সম্মান দেয়া হয়েছে তারপর? ভূষিত করা হয়েছে কোন হায়েস্ট অনারে?
না, তাকে পাঠানো হয় মেন্টাল এসাইলামে, মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। অপরাধ? তিনি মরিয়া হয়ে সকল গাইনি এন্ড অবসের ডাক্তারদের চিঠি লিখতে শুরু করেছিলেন যেন তারা হাত ধুয়ে, ইনস্ট্রুমেন্টস ধুয়ে কাজ করেন। এতে জীবন বাঁচবে। তার হাত ধোয়া নিয়ে হাসাহাসি করা লোকজনদের তিনি ইরেসপনসিবল মার্ডারার বলতেন। যে কোন আড্ডাতে সাথের ডাক্তার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি এই হাত ধোয়ার থিওরির কথা তুলতেন। সবাই বিরক্ত হত। আস্তে আস্তে তিনিও ডিপ্রেশনে পড়তে লাগলেন। সবাই তাকে পাগল মনে করেছিলো। তাকে দেয়া হলো মেন্টাল এসাইলামে।
কেউ বললো তার নিউরোসিফিলিস হয়েছে, কেউ বললো বদ আত্মা ভর করেছে। মাত্র ১৪ দিন পর, মেন্টাল এসাইলামের গার্ডরা তাকে প্রচন্ড পেটালো। পেটানোর ফলে তার হাতে-শরীরে ক্ষত থেকে পচন ধরে। সেখান থেকে তার মৃত্যু হয় মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। তার কাছে হাত ধোয়া ছিলো ক্রুসেডের মত। আজ আমরা স্ক্রাব নেই ওটির আগে, এই কথা বলতেই তিনি পাগল প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন।
তার মৃত্যুর পর দুই থেকে তিনজন তার শেষকৃত্যে আসেন। তার মৃত্যুর কথা হাংগেরিয়ান মেডিক্যাল সোসাইটি প্রকাশও করেনি তাদের পেপারে। জীবাণু তত্ত্ব, অর্থাৎ রোগের উৎপত্তি জীবাণু থেকে হতে পারে আবিষ্কারের অনেক বছর পর তার স্বীকৃতি মেলে। তাকে আজ এন্টিসেপসিসের পাইওনিয়ার বলা হয়। তার অনেক বড় স্তম্ভও গড়া হয়েছে আজ।
মূল যেই জিনিসটা আমার কাছে ভালো লেগেছিলো হাংগেরিয়ান এই ডাক্তারের তা হলো তার ভাবনা। তৎকালীন রীতিনীতির বাইরে গিয়ে, সব কিছুর বাইরে গিয়ে ভাববার ক্ষমতা। হাত ধোয়া, কতটা সাধারণ ব্যাপার আজ এটা। কিন্তু এই কথাটা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে একজন জীবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন, ভাবতেই জিনিসটা কেমন লাগে যেন।