দেশের বাজারে আইফোন-১২ এর দাম হতে পারে প্রায় সোয়া লক্ষ টাকারও বেশি। এত টাকা একটা মোবাইলের পেছনে না ঢেলে আর কী কী ভালো কাজ করা যায় চলুন দেখা যাক...

খুব শীঘ্রই বাজারে আসতে চলেছে অ্যাপল আইফোনের নবীনতম সংস্করণ আইফোন-১২। আগামী অক্টোবরের ১৬ তারিখ থেকে চলবে প্রি-অর্ডার নেয়া। এরপর ২৩শে অক্টোবর প্রথম গ্রাহকের হাতে উঠবে আইফোন-১০। আইফোন-১২ প্রো ম্যাক্সের প্রি-অর্ডার শুরু হবে ৬ নভেম্বর থেকে, বাজারে আসবে ১৩ই নভেম্বর। আরেকটা ভার্সন আইফোন-১২ মিনিরও একই শিডিউল। 

বাংলাদেশের বাজারে আইফোন-১২ এর দাম ঠিক কত হতে পারে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে টাকার অঙ্কে এর সম্ভাব্য দাম হয়ত হবে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার মত। তবে দাম যত চড়াই হোক না কেন, তারপরও যে অনেকেই এটি কেনা থেকে পিছপা হবেন না, তা তো বলাই বাহুল্য। কেননা আইফোনের সর্বশেষ সংস্করণ অন্যদেরকে দেখিয়ে ব্যবহার করার যে অনুভূতি, এবং এতে তথাকথিত 'সামাজিক মর্যাদা' যতটা বৃদ্ধি পায়, বর্তমান দুনিয়ায় আর খুব বেশি দ্রব্যের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়।

তবে যারা আইফোন-১২ কিনবেন তারা তো কিনবেনই, কিন্তু যারা এখনো দোটানায় ভুগছেন যে আইফোন-১২ কিনবেন কি কিনবেন না, তারা এক নজরে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন নিচের তালিকায়। জেনে যাবেন আইফোন-১২ কিনে আপনার কষ্টের টাকা জলে না ফেলে, সেই টাকার কেমন সদ্ব্যবহার করা যায়!

ভ্রমণ- মোবাইল অবশ্যই আমাদের বর্তমান জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির একটি। কিন্তু তাই বলে একটি মোবাইলের পেছনেই এই এত টাকা খরচ করা? না, সেটি একদমই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এই টাকায় আপনি বরং প্রিয়জনের সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারেন। এটি এমন অসাধারন একটি অভিজ্ঞতা হবে, যে স্মৃতি আপনি বাকি সারা জীবন রোমন্থন করতে পারবেন।

সোয়া লাখ টাকায় হয়ত আপনি ইউরোপ ট্যুরের মত বিলাসবহুল, উচ্চাবিলাসী কোন পরিকল্পনা করতে পারবেন না, কিন্তু এই টাকায় আপনি খুব সহজেই ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভূটান, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ার মতো তুলনামূলক সস্তা কিন্তু নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত দেশে বেড়িয়ে আসতে পারবেন। বাড়িতেই করতে পারেন।

এক নজরে আইফোন-১২

জিম: জীবন তো একটাই। এই ছোট্ট পরিসরের জীবনে শো-অফ করতে এত টাকা কেন খরচ করবেন? তারচেয়ে বেশি বেশি শরীরচর্চা করুন, শরীর সুস্থ থাকবে ও আয়ু যেমন বাড়বে, তেমনি আপনি হয়ে উঠবেন আগের চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষনীয়ও। আর এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে দরকার একটা ভালো জিম। তো, আইফোন-১২ না কেনার বদৌলতে আপনার যে টাকা বেঁচে যাবে, সে টাকা দিয়ে খুব সহজেই বাড়িতে গড়ে তুলতে পারবেন নিজের মত একটা জিম।

বিনিয়োগ: একবার মন দিয়ে ভেবে দেখুন তো, ঝোঁকের বশে এত টাকা খরচ করে একটা আইফোন-১২ না হয় কিনলেন, কিন্তু যে এক্সাইটমেন্ট থেকে কাজটি করবেন, সে এক্সাইটমেন্ট তো মাস কয়েক পরই বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। অথচ ওই টাকাটা দিয়ে যদি আপনি একটা ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে যেমন বছর শেষে বেশ ভালো লাভের মুখ দেখবেন, তেমনি টাকাটা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট বা মিউচুয়াল ফান্ডে রাখলেও বছর কয়েকের মধ্যে আপনার একাউন্ট ফুলে-ফেঁপে উঠবে।

সমাজসেবা: দেশে এখন যেমন রোহিঙ্গা সমস্যার মতো মানবঘটিত দুর্যোগ বিদ্যমান, তেমনি আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যাও। আর এই দুইয়ের ফলে দেশে এখন লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন মৌলিক মানবাধিকার বঞ্চিত হয়ে, নিতান্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই এত এত মানুষকে অভুক্ত রেখে আপনি একটা মোবাইল এত দামে কিনে মজা লুটবেন? এ কেমন বিচার! তারচেয়ে দুঃস্থদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন, দেখবেন কি অনাবিল মানসিক প্রশান্তি লাভ করছেন।

কল্যানকর শখ পূরণ: আইফোন-১২ কেনাও অবশ্যই একটা শখই বটে। কিন্তু এ শখ কি খুব একটা কল্যানকর? মোটেই না। অথচ একটা আইফোন কিনতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করবেন, সেই টাকা দিয়ে আপনি আপনার দীর্ঘদিনের লালিত কোন শখ মিটিয়ে ফেলতে পারেন, যেটা শুধু শখই না, বরং দীর্ঘস্থায়ী উপকারের রাস্তাও প্রশস্ত করতে পারে। যেমন আপনার হয়তো অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল একটা পারিবারিক লাইব্রেরি তৈরি করবেন, বা বাসার সামনে বিরল প্রজাতির গাছ-গাছালি দিয়ে বাগান করবেন। এতদিন 'টাকার অভাবে' কাজটা করতে পারেননি। আইফোন-১২ কেনার পরিকল্পনা বাদ দিন। দেখবেন শখ মেটানোর টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে!

বস্তুতঃ টাকা পয়সা চাইলে অনেক কাজেই খরচ করা যায়। কিন্তু আমাদের আগে ভেবে দেখা উচিৎ কোন কাজে টাকা খরচ করলে সেটা মঙ্গলজনক হবে। এবং দিন শেষে আমাদের রক্ত পানি করা টাকা সেই কাজেই ব্যয় করা উচিৎ। খামোকা একটা মোবাইলের পেছনে গুচ্ছের টাকা ব্যয় করলে সেটা তো নিছকই অপব্যয় হবে, তাই না?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা