ট্রাকের মধ্যে স্যারকে জড়িয়ে ধরে আছি। ট্রাক চলছে। স্যারের হা করা মুখ দিয়ে আমি রাস্তা দেখছি। স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'বাবা আমাকে কই নিয়ে যাও'?

২৭ ফেব্রুয়ারি এলে বা অন্য সময়েও অ‌নে‌কে দে‌খে থা‌কেন প্র‌থিতযশা ও বহুমা‌ত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদকে রক্তাত্ব অবস্থায় জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছে এক‌টি ছে‌লে। ছ‌বির সেই ছে‌লেটা আমি। এটি ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘটনা। ২০০৪ সালের‌ এইদি‌নে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হ‌য়ে‌ছিল। চলুন সে‌দি‌নে ফি‌রি। 

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফএস) সদস্য। আমার বিশ্ববিদ্যালয় মানেই তখন এই সংগঠন। ক্লাস শেষ করেই কলা ভবন থেকে ছুটে যাই টিএসসিতে। সেখানেই আড্ডা, সেখান থেকে খেতে যাওয়া, আবার ফিরে আসা। রাতে এখান থেকে নয়টা সাড়ে নয়টা কখনো কখনো ১০ টায় হলে ফিরি।

ঘটনার শুরু: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। তখন শীতকাল। বইমেলা চলছে। টিএসসি জমজমাট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন একটি গানের উৎসব হবে। টিএসসির নিচে সন্ধ্যা থে‌কে তার মহড়া চলছে। গিটারে গান। আমি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেই গান শুনছি। রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে। হঠাৎ একটি বোমা ফাটার মতো শব্দ হলো। মাঝারি ধরনের শব্দ। আমার আবার সব কিছুতেই ব্যাপাক কৌতুহল। খুব সাহসী আমি সেটি বলবো না, তবে ভয়-ডর নেই এটুকু বলতে পারি। তো কোথা থেকে এলো সেই শব্দ সেটি জানতে আমি টিএসসি থেকে হাঁটা শুরু করলাম বাংলা একাডেমির দিকে। রাস্তার মাঝে যে ডিভাইডার সেটি ধরে আমি আনমনে হাঁটছি। মনে হলো সোহরাওয়াদী উদ্যান দিয়ে কেউ দৌড়ে পালাচ্ছে। একটু দূরে যেতেই দেখি এক জায়গায় জটলা। গেলাম সেখানে। দেখলাম চাঁর-পাঁচজন পুলিশ সদস্য, কিছু লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে পড়ে আছে রক্তাক্ত একটি দেহ। কিন্তু কেউ ধরছে না। বরং সবাই যেন তামাশা দেখছে। কিংবা হয়তো ঝামেলার ভয়। 

আমি দ্রুত সেখানে গিয়ে উপুড় হওয়া লোকটিকে তুললাম। রক্তে ভেজা। মুখ দেখে চিৎকার করে উঠি এ তো হুমায়ুন আজাদ। আমি যখন স্যারকে তুলি স্যারের এক পাশের গাল দুই ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গিয়েছিলো। পুরো মুখটা হা হয়ে ছিল। আমি দুই পাশে চাপ দিয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করলাম। 

হুমায়ুন আজাদের‌ সাথে আমার সরাস‌রি প‌রিচয় নেই। কিন্তু তাঁর অনেক বই পড়েছি। আমার স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক প্রণয় কা‌ন্তি নাথ স্যার, যি‌নি আমাকে মানুষ হওয়ার দীক্ষা দিয়েছেন, যি‌নি গত বছর ইহ‌লোক ত্যাগ ক‌রে‌ছেন আমার সেই স্যা‌রের কাছ থেকে জেনেছি হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে। অনেক বই পড়েছি আজাদ স্যারের। বই‌য়ের ব্যাক কাভারের সেই ছবি আর সেই চুল দেখে তাই স্যারকে চিনতে পারলাম। রক্তাক্ত স্যারকে হাসপাতালে নিতে হবে। কী করবো? আমি আমার মোবাইল ফোন থেকে একটি ফোন করলাম বিটু ভাইকে। বললাম-বিটু ভাই, হুমায়ুন আজাদকে বোমা মারছে। আপনি বাংলা একাডমেরি সামনে আসেন। (আমি তখন ভেবেছিলাম স্যারকে বোমা মারা হয়েছে। আসলে তা নয়, তাকে কোপানো হয়েছিল। দুস্কৃতিকারীরা পরে পালানোর সময় বোমা ফাটায়)। 

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু ভাই বর্তমা‌নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস স‌চিব। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় চলচ্চিত্র সংসদের অর্থ সম্পাদক এবং আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ বড় ভাই। তাঁর তখন মোবাইল আ‌ছে, আর নম্বরটা আমা‌দের মুখস্থ। বিটু ভাইকে ফোন করে আমি রক্তাত্ব হুমায়ুন আজাদকে হাপাতালে নেওয়ার জন্য একটি রিকশায় উঠানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু রিকশায় উঠানো সম্ভব হলো না। স্যারকে কোনভাবেই রিকশায় রাখতে পারছিলাম না।

আমি তখন দৌড়ে টিএসসির দিকে আসলাম। সাদা একটি প্রাইভেট কার এদিকেই আসছিলো। আমি তাকে বললাম ভাই আমাদের এক স্যার হুমাযুন আজাদকে কেউ বোমা মেরেছে। হাসপাতালে নিতে হবে। একটু আসেন। সে কিছুতেই রাজি হলো না। বরং গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো দিকে চলে গেল। আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এদিক ওদিক তাকিয়ে কোন দিশা পাচ্ছিলাম না। ছটফট করছিলাম। হঠাৎ দেখি পুলিশের বিশাল এক ট্রাক দাঁড়িয়ে টিএসসির সামনে। আমি তখন চিৎকার দিয়ে তাদের বললাম ভাই স্যারকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি এখানকার ছাত্র। প্লিজ আপনাদের গাড়িটা নিয়ে আসেন। একই সঙ্গে বললাম স্যারকে হাসপাতালে না নিতে পারলে ছাত্ররা আপনাদের ওপর খেপবে। চেঁচামেচি করলাম। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা রাজি হলো। তারা এলো গাড়ি নিয়ে।

লোকজনের সহায়তায় আমি স্যারকে পুলিশের সেই ট্রাকে তুললাম। স্যারকে গাড়িতে তুলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কারণ শরীরের ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। এদিকে স্যারকে আমি ট্রাকে উঠানোর আগেই সেখানে হাজির হলো সাংবাদিক পাভেল ভাই। (সে বোধহয় নিউ ন্যাশন বা কোন একটা ইংরেজি কাগজে কাজ করতো। মাঝে মাঝে আমাদের সংগঠনে আসতো। তাই তাকে চিনতাম।) স্যারকে পড়ে থাকা অবসস্থা থেকে উঠানোর সময় থেকে পাভেল ভাই তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একের পর এক ছবি তুলছে স্যারের সঙ্গে আমার। যখন ট্রাকে উঠাচ্ছিলাম তখনো ছবি তুলছে। আমি তখন তাকে গালি দিয়ে বলছি, পাভেল ভাই এখন ছবি তোলার সময়? [পরে বুঝেছিলাম সে তাঁর কাজ করেছে। তাঁর তোলা এই ছবিগুলোই পরের দিন সব ফটো সাংবাদিকরা নেয়। পরে সিআইডিও তাঁর ছবিগুলো নিয়েছিল এবং তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল।] 

যাই হোক, স্যারকে পুলিশের ট্রাকে তুললাম অনেক কষ্টে। কী করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এত ভীড়, চেঁচাচেমি, আমি খুব অস্থির বোধ করছি। পরিচিত কাউকে খুঁজছিলাম। পুলিশের ট্রাক ছাড়ার আগে দেখলাম আমার পাশে বিটু ভাই আছে। চরম স্বস্তি বোধ করলাম। যাক, চেনাপরিচিত কেউ আছে। ট্রাকের মধ্যে স্যারকে জড়িয়ে ধরে আছি। ট্রাক চলছে। স্যারের হা করা মুখ দিয়ে আমি রাস্তা দেখছি।স্যার আমাকে জিঞ্জাসা করলেন, 'বাবা আমাকে কই নিয়ে যাও'? আমি বললাম, স্যার হাসপাতালে। আপনার কিছু হয়নি। স্যার বললেন, 'আমার চশমা কই'? আমি বললাম, স্যার আছে। স্যার বললেন, 'আমি পুলিশের গাড়িতে যাবো না'। আমি বললাম ঠিক আছে স্যার, আমরা নেমে যাবো এখনই। 

আহত রক্তাক্ত অবস্থায় আমি কোন মানুষকে এতো শক্ত থাকতে দেখিনি। অন্য কেউ হলে এত ব্যথা নিয়ে চিৎকার করতো, ভয় পেতো। কিন্তু স্যার খুব শক্ত দৃঢ়চিত্তে বসে আছে; যেন কেউ ভুল করে তাঁকে কুপিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি যেন খুব কষ্ট পেয়েছেন। আমি আজও স্যারের সেই শক্ত মুখ মনে করতে পারি। 

ট্রাক চলছে। আমরা যাচ্ছি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাংলা একাডেমি থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ গেলে দোয়েল চত্ত্বর পেরিয়ে সোজা চলে গেলেই হয়। কিন্তু পুলিশের ভ্যান দোয়েল চত্ত্বর হয়ে আবার ডানে স্টেডিয়ামের দিকে চলে গেলো। আমি চিৎকার করলাম। পুলিশকে বললাম ভাই আপনারা ঢাকা মেডিকেল চেনেন না? পুলিশের এই সময় নষ্টে মেজাজ খারাপ হলো। ট্রাক ঘুরে শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের সামনে গিয়ে থামলো। আমি আর বিটু ভাই অনেক কষ্টে স্যারকে নামালাম ট্রাক থেকে। জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে যে কোন রোগীর জন্য পাঁচ টাকা দিয়ে স্লিপ কাটতে হয়। সেটা কাটলাম। এরপর স্যারকে নিয়ে ট্রলিতে করে রওয়ানা দিলাম সম্ভবত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসককে বললাম উনি আমাদের স্যার। ডাক্তার স্লিপ চাইলো। আমি স্লিপ বের করতে গিয়ে দেখি সেটি রক্তে ভিজে গেছে। অামার ভীষণ কান্না পেল। ডাক্তার আবারো স্লিপ আনতে বললেন। ছুটলাম আবার।

এরপর শুরু হলো স্যারের চিকিৎসা। আমরা স্যারের হাত পা জড়িয়ে ধরে আছি। রক্ত থামানোর চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে ডাক্তাররা প্রাথমিক কিছু ওষুধ আনতে বললো। আমি আর বিটু ভাই নিজেদের টাকায় সেই ঔষুধ আনালাম। এরপর দেখি আমাদের টাকা শেষ। ছাত্র মানুষ। কতো টাকাই বা আমাদের পকেটে থাকে। যাই হোক, আমরা সেখানে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বললাম, এই ওষুধগুলো আনার ব্যবস্থা করতে। আমাদের টাকা নেই। তিনি তাই করলেন। 

এদিকে স্যারের চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরপরই আমি মোবাইলে শুভকে বললাম ঢাকা মেডিকেল আয়। শুভ আসলো। (শুভ মানে আমার বন্ধু। ও তখন প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক) এরপর শুভ, তখনকার ভিসি ফায়েজ স্যারসহ আরো অনেকেই আসলো। আমাদের চলচ্চিত্র সংসদের বড় ভাইরাও আসলো। সবাই বললেন, আমি যেন এখন হলে গিয়ে রক্তে ভেজা এসব ড্রেস চেঞ্জ করি। আমার হাসপাতাল থেকে চলে আসতে ইচ্ছে করছিল না। তবুও এলাম। 

এদিকে স্যারকে নিয়ে আমি যখন ট্রলিতে করে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে যাচ্ছিলাম, সেটি চ্যানেল আই তাদের খবরে দেখায়। আমার বাবা-মা আমার রক্তে ভেজা সে ছবি টেলিভিশনে দেখে ভাবলো আমার কিছু একটা হয়েছে। আমি তাদের ফোন করে ঘটনা জানালাম। বললাম ভালো আছি। কোন সমস্যা নেই। আমার কিছু হয়নি। তারা নিশ্চিন্ত হলো। এরপর আমি বিটু ভাইয়ের সাথে তার ফজলুল হক হলে এলাম। আমার হল জহরুল হক হল অনেক দূরে। তাই তার হলেই আমি গোসল করলাম। ড্রেস চেঞ্জ করে বের হলাম। ততক্ষনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল শুরু হয়ে গেছে। হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা কেন? বিচার চাই- এই দাবি। জয়দেব নন্দী'দা সহ চেনা অ‌নে‌কেই সেই মি‌ছি‌লে। আমিও যোগ দিলাম সেই মিছিলে। অনেক রাতে হলে ফিরলাম। ঘুমালাম।

একটি বিষয় ভেবে খুব ভালো লাগে এখনো। পরে জেনেছিলাম, ঘটনা ঘটার মাত্র ১০ থে‌কে ১৫ মিনিটের মাথায় স্যারকে আমি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেছিলো, কোনভাবে স্যারকে হাসপাতালে নিতে আরেকটু দেরি হলে রক্তক্ষরণের কারণে বাঁচানো যেতো না। এজন্য খুব ভালো লাগছিল আমাদের; যে স্যারকে বাঁচাতে পারবো।

রাতে ৩ টার দিকে ঘুমাতে গেলাম। সারাদিনের ক্লান্তি, পরিশ্রম, উত্তেজনায় দীর্ঘক্ষন ঘুমালাম। পরদিন দুপুর ১২ টায় আমার ঘুম ভাঙ্গলো। দ্রুত টিএসসি গেলাম। জানতে পারলাম স্যারকে রাতেই সিএমএইচ নেওয়া হয়েছে। এদিকে পরদিনের প্রায় সব দৈনিকে আমার ছবি। আমি রক্তাত্ব স্যারকে ধরে আছি। সেই ছবি। জনকণ্ঠ বিরাট করে খবরটা ছাপছে। একটা জনকন্ঠ কিনলাম। খবরটা পড়লাম। 

যাই হোক, সারাদিন আমি মনে মনে বারবার প্রার্থনা করছি- স্যার আপনি সুস্থ্য হয়ে উঠেন। কিন্তু সারাদিন নানা গুজব। একবার শুনি স্যার বেঁচে নেই। আবার শুনি বেঁচে আছেন। এসবরে মধ্যে সময় কাটছে। এর মধ্যে বিকেলে কলকাতার তারা বাংলা বা অন্য কোন চ্যানেলের কল্যানে টিএসসিতে খবর শুনলাম স্যার নাকি মারা গেছেন! কথাটা শুনেই আমার প্রচন্ড মন খারাপ হলো। টিএসসির দোতলায় চলচ্চিত্র সংসদের রুমে এসে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। এরপর আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম। বমি করলাম। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমি ব্যর্থ। স্যারকে বাঁচাতে পারলাম না। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই আবার জানতে পারলাম- না, স্যার বেঁচে আছেন।

ইন্ডিয়ার টেলিভিশন ভুল খবর দিয়েছে। এও জানলাম স্যারকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া হচ্ছে। আমি স্বস্তি ফিরে পেলাম। স্যারকে ক'দিন পর যথারীতি দেশের বাইরে নেওয়া হলো। এদিকে স্যারের উপর হামলার ঘটনার বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হলো তীব্র আন্দোলন। সব জায়গায় পোষ্টার টানানো হয়েছে। তাতে একটিই ছবি-আমি স্যারকে ধরে আছি। ক্যাম্পাসের যেদিকেই তাকাই আমার ছবি। আমার হাঁটতে বিব্রত লাগে। মনে হয় সবাই আমাকে দেখছে। টিএসসিতে গেলে মনে হয় পুলিশ আমাকে ফলো করছে। ইনকিলাব সে সময় নিউজ করলো ঘটনা ঘটার কিছুক্ষনের মধ্যেই যে দুই ছাত্র স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো, তাদের গ্রেপ্তার করা হোক। তাহলেই সব জানা যাবে। কেউ সে‌দি‌নের ছবিটা খেয়াল করুন। দেখুন আমি চিৎকার করছি। কিন্তু কেউ কেউ ভুল করে ভাবেন, আমি হাসছি। সংগ্রাম ইনকিলাব্ সেই কথা বলে তাই নিউজ করলো এই ছেলে হাসে কেন? পরে জানতে পারলাম যথাসময়ে হাসপাতালে নেওয়ায় সংগ্রাম খুবই বিরক্ত। সে সময় স্যারের রাজাকারদের বিরুদ্ধে বই নিয়ে সংগ্রাম ক্ষেপে আছে। 

এদিকে ঘটনার পর থেকে আমার খালি মনে হয় পুলিশ আমাকে ফলো করে। কেমন একটা ভয় ভয়। সবাই বললো বাসা থেকে ঘুরে আয়। ভয় কেটে যাবে। ভালো লাগবে। আমি চট্টগ্রাম গেলাম। মাস খানেক পর স্যার সম্ভবত দেশে আসলেন সুস্থ্য হয়ে। মুখে একটা দাগ হয়ে থাকলো। স্যারের ফেরা উপলক্ষ্যে অপরাজেয় বাংলার সামনে অনুষ্ঠান। সবাই সেখানে বক্তৃতা করছে। আমি দর্শকের মতো শুনছি। স্যার বক্তৃতা করা শুরু করলো। আমি স্যারের কথাগুলো শুনলাম। মুগ্ধ হয়ে দেখছি। খুব তৃপ্ত লাগছে। মনে মনে বলছি স্যার আপনি কি জানেন রাস্তায় যখন আপনি পড়ে ছিলেন, কেউ যখন আপনাকে ধরেনি, তখন এই আমিই আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমিই আপনাকে বাঁচিয়েছি।

আমার মধ্যে তখন সাফল্যের আনন্দ। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল স্যারের সঙ্গে দেখা করতে। শুভকে নিয়ে আমি একদিন স্যারের বাসায় যাওয়ার চেষ্টাও করলাম সেদিনের ঘটনা বলতে। কীভাবে স্যারকে হাসপাতালে নিলাম সেই কাহিনী। একদিন গেলামও স্যারের বাসায়। কিন্তু জানানো হলো, স্যার বাসায় নেই। স্যারের সঙ্গে আমার সেই আলাপ আর কখনোই করে ওঠা হয়নি। স্যার কখনো জানতেও পারিনি কে তাকে হাসপাতালে নিয়েছিলো, স্যার তখন কী বলেছিলেন।

এদিকে স্যার দেশে ফেরার পর এই ঘটনা নিয়ে দায়ের করা মামলার তদন্ত নিয়ে শুরু হলো আন্দোলন। পুলিশের বদলে মামলার তদন্তভার পড়লো সিআইডির ওপর। ইতিম‌ধ্যে এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা আব্বাস ভাই‌কে ফাঁসা‌তে তা‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে নির্যাতন করা হ‌চ্ছে। একদিন আমি ক্লাস করে বের হচ্ছি আমাদের জহরুল হক হলের এক কর্মচারী এসে জানালো, প্রভোষ্ট স্যার আপনাকে এখুনি তাঁর বাসায় যেতে বলছে। আমি বুঝলাম না এতো সকালে স্যার কেন আমাকে ডাকছে? সন্দেহ হলো। শুভকে জানালাম আমি প্রভোষ্টের বাসায় যাচ্ছি। কোন সমস্যা হলে খবর নিস। সে সময় আমাদের হলের প্রভোষ্ট ছিলেন আমিনুর রহমান মজুমদার। আমি সকাল ১০ টার দিকে স্যারের বাসায় গেলাম। স্যার নানান তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমার সাথে গল্প শুরু করলো। কিছুক্ষন পর দেখি সেখানে দু'জন লোক এসে ঢুকলো। এরপর প্রভোষ্ট স্যার চলে গেলো।

তারা দেখি কতোগুলো ছবি দেখছে। পাভেল ভাইয়ের তোলা সেই ছবিগুলো যেখানে আমি স্যারকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। আমি শুনছিলাম পাভেল ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি ধরে নিয়েছে। যাই হোক, অনেকক্ষন তারা আমার ছবিগুলো দেখলেন। এরপর নিজেদের পরিচয় দিলেন। জানালেন তারা সিআইডির কর্মকর্তা। একজনের নাম মনে আছে আব্দুল মালেক। তারা আমাকে নানান বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন সেদিনের ঘটনা নিয়ে। জানতে চাইলেন স্যার কি সে সময় কারো নাম বলেছিলেন কিনা, স্যার শেষ পর্যন্ত কী বলেছিলেন এসব।

বললো আপনার সঙ্গে আরেকটা ছেলে ছিলো ও কই। আমি মোবাইলে বিটু ভাইকেও আসতে বললাম স্যারের বাসায়। বিটু ভাই এল। মালেক ভাই আমাদের দু'জনের সঙ্গে কথা বললেন। সিআই‌ডি কর্মকর্তা মালেক সাহেব আমাকে বললেন, আব্বাস‌কে গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে। আপনাকে আমাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। কিন্তু আপনার প্রভোষ্ট স্যার বলছে সে আপনাকে চেনে। আপনি তার হলের মেধাবী ছেলে। তাই আপনাকে অ্যারেস্ট করা হলো না। কিন্তু আপনি আর বিটু কাল সিআইডির মালিবাগ অফিসে আসবেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এরপর মালেক ভাই দেখালেন, গত এক মাসে আমি কখন কোথায় গেছি সব রিপোর্ট তাদের কাছে আছে। আমি দেখলাম। আমি কবে চট্টগ্রাম গেছি, কখন কী করি সব সেখানে লেখা। 

সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করবে শুনে ভালোই ভয় পেলাম। বুঝতে পারলাম না আমি কী করলাম। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করবে। কেন অ্যারেষ্ট করবে। রাতে আমি আমার বিভাগের এক শিক্ষকের বাসায় গেলাম। পুলিশের সাবেক আইজি এনামুল হক তাঁর ঘনিষ্ঠ। তাই তাকে দিয়ে ফোন করানোর চেষ্টা করলাম। লাভ হলো না। ভয় নিয়েই কাটলো বাকি রাত। পরদিন সকাল ১১ টায় কিছুটা ভয়েই বিটু ভাইকে নিয়ে পৌছালাম মালিবাগে সিআইডির প্রধান অফিসে। কোথায় গ্রেপ্তার আসা‌মীদের রাখা হয়, কোথায় জিজ্ঞাসাবাদ এসব ব‌লে ভয় দেখা‌নো হ‌চ্ছে। কিছুক্ষন পর মালেক সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন সিআইডির উর্ধ্বতন এক অফিসারর রুমে। তিনি সম্ভবত বড় কোন পোষ্টে। দাড়িওয়ালা ভদ্রলোক। এখন আর নাম মনে করতে পারছি না। বড় কর্মকর্ত‌া আমাকে ভালো করে দেখলেন।

তারপর বললেন, ঘটনার পরদিন যখন আপনার এই ছবিটা পত্রিকায় ছাপা হলো, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ সাহেব আমাকে বলেছিলেন এই ছেলেটা রক্তাত্ব স্যারকে জড়িয়ে ধরে আছে। তাকে অ্যারেস্ট করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু আমি সেটা করি নাই। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, যারা হামলা করে, তারা কখনোই তাকে উদ্ধার করে না। সেখানকার সব পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, সবাই বলেছি, স্যারকে যে ছেলেটা জড়িয়েছিলো ছবিতে সেই স্যারকে উদ্ধার করেছেন। কাজেই আপনাকে আমি গ্রেপ্তার করি নাই। আমি সব জানতাম। 

এরপর তিনি নানান বিষয়ে জানতে চাইলেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এক কথা। স্যার শেষ মুহুর্তে কী কী বলেছিলেন মনে করার চেষ্টা করেন। স্যার কারো নাম বলেছেন কিনা মনে করার চেষ্টা করেন। আমি একই ঘটনা বললাম। এরপর তিনি বললেন, আপনি সব বর্ণনা একটা লিখিত স্টেমেন্ট হিসেবে দিয়ে যান। আমি সেটা দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম। আর মনে মনে ভাবলাম এসব কারণেই মানুষ বোধহয় মানুষের উপকার করে না। একজন মানুষকে আমি বাঁচালাম, আর এজন্য আমাকে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মেজাজ খারাপ হলো হুমায়ুন আজাদ এবং তার পরিবারের প্রতিও। কারণ তারা গত দুই মাসে একবারও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করে নাই কে স্যারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলো। উল্টো তারাও সংগ্রাম পত্রিকার সুরে বলছেন এমনকি স্যারও নাকি বলেছেন, এই ছেলেটা হাসছে কেন?

স্যার চাইলেই হয়তো খোঁজ নিতে পারতেন। কথা বলে সেদিনের ঘটনা জানতে পারতেন। কিন্তু তাদের সেই ইচ্ছাটাই হয়নি। উল্টো আমাকে স্যারের বাসায় গিয়ে না পেয়ে ঘুরে আসতে হয়েছে। প‌রেও এই ঘটনায় তা‌দের ভূ‌মিকা আমা‌কে হতাশ ক‌রে‌ছে। 

আরেক অধ্যায়: আজাদ স্যারকে জড়িয়ে আমার গল্পটা এখানেই শেষ হলো ভালো হতো। কিন্তু হলো না। গল্প আরো জড়িয়ে আছে। ২০০৪ সালেরই আগস্ট মাস। আমি তখন একটি দৈনিকের সাংবাদিক। ১১ বা ১২ আগষ্ট শুনতে পেলাম জার্মানে স্যার মারা গেছেন। সেদিন সম্ভবত শুক্রবার ছিলো। খুব মন খারাপ হলো। স্যারের সঙ্গে আমার আর কথা বলা হয়ে উঠল না। সেদিন অফিসে ক্রাইমের কেউ ছিলো না। তখন চীফ রিপোর্টার ছিলেন আশরাফ ভাই। তিনি কী করবেন, কীভাবে লিখবেন এই স্টোরি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আমি তাকে বললাম ভাইয়া, আমি স্টোরিরা লিখে দিচ্ছি। আমার পুরো ঘটনা জানা। আমি লিখলাম। আশরাফ ভাই বললেন, আমি তারিখ, সময়সহ স্যারের ওপর হামলার ঘটনার এতো বিস্তারিত জানলাম কী করে? তাঁকে বললাম আমি তখন ঘটনাস্থলে ছিলাম। পরদিন এই স্টোরিটা লিড হলো। এরপর টানা কয়েকদিন আমি স্টোরিটা ফলোআপ করলাম। আমার কাছে মালেক ভাইয়ের নাম্বার ছিল, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলার সব তথ্য দিলাম। সব মিলিয়ে আশরাফ ভাই খুব খুশি ছিলেন স্টোরিগুলো দেখে। 

যাই হোক, পরে যখন একটি জঙ্গি সংগঠনের হত্যার লিষ্টের তালিকায় হুমায়ুন আজাদের নাম এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়া গেলো, তখন প্রমাণিত হলো জঙ্গিরাই স্যারকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সে সময় আমি প্রথম আলোতে। সেবারও আজাদ স্যারের নিউজে পুরোনো ঘটনার ইতিহাস টানলাম। আমি দীর্ঘদিন রক্তে ভেজা ক্যাটস আইয়ের সেই গেঞ্জিটা, যেটি ভিজে গিয়েছিল আজাদ স্যারের রক্তে সেটি সংরক্ষন করে রেখেছিলাম। এ ঘটনায় দা‌য়ের করা মামলার অন্যতম স্বাক্ষী আমি। জ‌ঙ্গিরা আমার সাম‌নে থা‌কে, আমা‌কে স্বাক্ষী দি‌তে হয়। আদালত মা‌নে আ‌রেক ভোগা‌ন্তি। তাও কয়েকজন বিচারক বন্ধুর কার‌ণে ভোগা‌ন্তি কমে‌ছিল কিছুটা। 

ত‌বে একটা কথা বলতে পা‌রি এতো ভোগান্তির প‌রেও আমার কখ‌নো ম‌নে হয়‌নি ভুল ক‌রে‌ছি। আবার ম‌নে হয়‌নি বড় কিছু ক‌রে ফে‌লে‌ছি। প্রধানমন্ত্রীর বি‌শেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল হক ভাই এক‌দিন অ‌নেক রা‌তে আমা‌কে ব‌লে‌ছি‌লেন, আ‌মি নি‌জে থে‌কে কেন তা‌কে ঘটনাগু‌লো ব‌লি‌নি।‌ সে সম‌য় নেত্রী শেখ হা‌সিনা স্যা‌রের‌ জন্য কী কী ক‌রে‌ছি‌লেন আম‌া‌কে জানান।‌ শা‌কিল ভাই‌কে সে‌দিন ব‌লে‌ছিলাম, আমার মা আমা‌কে শিখিয়েছেন নিজের শত সমস্যা হ‌লেও মানুষের পা‌শে থাক‌বে। বারবার মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পাই, তবুও মানুষকেই ভালোবাসি। চেষ্টা করি মানুষের পাশে থাকার। আমি জানি মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর কী আনন্দ। কিন্তু আফসোস স্যারকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কালে শামসুন্নাহার আন্দোলন, দুর্ঘটনায় হ্যাপির মারা যাওয়া এবং এ নিয়ে আন্দোলন, ২০০৭ সালের আগস্টের আন্দোলন, শিক্ষকদের গ্রেপ্তার ও মুক্তি, বিডিআরের ঘটনাসহ আরো অনেক ইতিহাসের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী আমি। সর্বশেষ বকরের মৃত্যুর ঘটনার নিউজগুলো করলাম। প্রায়ই ভাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনাগুলো নিয়ে একটা বই লিখি। হয়ে উঠে না আলসেমিতে কিংবা সারাদিনের ব্যস্ততায়। ত‌বে এক‌দিন লিখ‌বো।

ত‌বে আমার কিছু কষ্ট আ‌ছে। আ‌মি যখন দে‌খি মানু‌ষের বিপদ দে‌খেও আরেকজন এড়ি‌য়ে যায় আমার খুব কষ্ট লা‌গে। বছর পাঁচেক আগে একদিন ফেসবুকজুড়ে যখন দেখেছি রক্তাক্ত অভিজিৎ রায় অচেতন হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে, সারা শরীরে রক্ত নিয়ে অসহায় স্ত্রী রাফিদা বেপরোয়াভাবে কারো সাহায্য চাইছে, অথচ সেই আকুলতা দেখেও কেউ এগিয়ে আসছে না, তখন আমার প্রচণ্ড লজ্জা লেগেছে। প্রায়ই এই ধর‌নের ঘটনা শু‌নি এদে‌শে। মান‌বিক মূল্যবোধ আমার কা‌ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আ‌মি যখন শু‌নি চোখের সামনে ছিনতাই বা কাউকে খুন করতে দেখলেও আমরা প্রতিবাদ করিনা, অসহায় মানুষটিকে যথাসময়ে হাসপাতালে নেওয়ার দায়িত্বটুকুও পালন ক‌রি না আমার কষ্ট লা‌গে।

এই যে দেশের দারিদ্র, যানজট, দুর্নীতি, এতো এতো সংকট-কোন কিছু নিয়েই আমার কখনো কষ্ট ছিলো না, আমার কষ্ট কেবল একটাই-আমরা আর মানুষ থাকছি না। কারণ মানুষ হলে তো আমরা মানুষের বিপদে পাশে থাকতাম। এই যে মানুষের পাশে না থাকা-এটাই এখন এই দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট, অন্তত আমার চোখে। আ‌মি আমার নিজের বি‌বেক থে‌কে বল‌তে পা‌রি নানা দুর্ভোগের পরেও আমার কখ‌নো মনে হয়নি কোন বিপদক্রান্ত মানুষকে ফেলে চলে যাবো। বরং বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আজ পর্যন্ত আমার চোখের সামনে কোন বিপদে অাক্রান্ত মানুষকে দেখে ভীতুর মতো দাঁড়িয়ে থাকিনি, পালিয়ে আসিনি, কোনদিন আসবোও না। কারণ আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মানুষ। আর আমার ধর্ম আমাকে শিখিয়েছে, বিপদে আক্রান্ত মানুষের পাশে থাকতেই হবে। আর তাই শত সংকটেও আমি মানুষের পাশে থা‌কি থাকবো। সত্য বলার চেষ্টা ক‌রি কর‌বো। 

ম‌নে আ‌ছে কিছুদিন আগে মোবাশ্বার হাসান সিজার ভাই‌য়ের নি‌খোঁজ হওয়ার‌ প‌রে যখন এ নিয়ে চিৎকার কর‌ছি অনে‌কেই ব‌লে‌ছে, চুপ থা‌কো। তোমা‌কেও গা‌য়েব ক‌রে দে‌বে। আ‌মি ব‌লি, কী কর‌বে? স‌র্বোচ্চ মে‌রে ফেল‌বে? কিন্তু মরার আগে মর‌তে চাই না। আমি যখন যা নি‌য়ে লড়াই ক‌রি বি‌বে‌কের দায় থে‌কেই ক‌রি। আ‌মি জা‌নি যে‌দিন মৃত্যু আস‌বে কেউ ঠেকা‌তে পার‌বে না। আর আমার কা‌ছে মানুষ, দেশ অনেক বড়। কো‌টি তরুণের কষ্ট আমা‌কে কাঁদায়।

আ‌মি আমার ছোট ছে‌লেটার জন্য, আগামী‌দি‌নের ‌সব শিশুর জন্য একটা মান‌বিক পৃ‌থিবী, একটা সুন্দর বাংলা‌দেশ দেখতে চাই। তাই সবসময় ব‌লি- চলুন, সবাই মি‌লে একটা মান‌বিক বাংলা‌দেশ, একটা মান‌বিক পৃ‌থিবী গ‌ড়ি।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা