জীবন দিয়ে মানবতার জয়গান গাইতে পারে কয়জনা?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
শুধুমাত্র করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য চীনারা মাত্র এক সপ্তাহে তৈরি করেছে হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। আমরা হলে তো বছরজুড়ে শুধু ঝগড়াই করতাম কার ঘাড়ে দোষ চাপানো যায় এই ভেবে।
শ্রদ্ধা আসলেই এই মানুষটার প্রাপ্য। চাইলে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারতেন তার দায়িত্ব থেকে। করতে পারতেন অবহেলা। কোন দরকার ছিলো না, এভাবে নিজের জীবনটা বিলিয়ে দেয়ার। ৬২ বছর বয়সী মানুষটার নাম লিয়াং উডং। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হুবেই জিঞ্জুয়া হাসপাতালের একজন ডাক্তার। আক্রান্ত রোগীদের সেবা করতে গিয়ে নিজের জীবনটাই হারালেন। প্রাণ হারিয়েছেন, তবে তার আগ পর্যন্ত একনিষ্ঠভাবে পালন করে গেছেন নিজের দায়িত্ব। এভাবেই মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা লিয়াং উডং হচ্ছেন প্রথম ডাক্তার, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করলেন।
চীনা সরকারের বর্তমানে প্রায় ১২০০ অতিরিক্ত মেডিকেল পার্সোনের প্রয়োজন পড়ছে আক্রান্ত উহান শহরে। আর নিজের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে কাজ করতে হচ্ছে প্রত্যেককে। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ১৫০ জন, নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০০০, সন্দেহভাজন আক্রান্তের সংখ্যা ৯০০০ অতিক্রম করেছে। সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছে ১৬টি দেশ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যখন বাড়ছে, চীনের উহান শহরে তখন লাখ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই কঠিন সময়েও অনেক মানুষ একে অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভয়াবহ রোগটির প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এমন সময় যখন চীনের সবচেয়ে বড় উৎসব চন্দ্রবর্ষ উদযাপন চলছে। ক্রিসমাস এবং থ্যাংক্সগিভিং পালনের কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় চীনা নতুন বর্ষ, যা সবমিলিয়ে চীনাদের জন্য অনেক আনন্দের ব্যাপার। অনেকের কাছে বছরের এটাই একমাত্র সময় যখন তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীনা নববর্ষের সরকারি ছুটি ৩ দিন বাড়ানো হয়েছে।
ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে উহানের বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে থাকার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু শহরের একটি এলাকার কিছু ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নিজেদের আনন্দে ভরিয়ে তুলতে একটি পথ খুঁজে বের করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষজন তাদের জানালা থেকে ''উহান জিয়ায়ু'' বলে চিৎকার করছেন, অনুবাদ করলে যার অর্থ হয় ''শক্ত থাকো উহান'' অথবা ''চালিয়ে যাও উহান।'' এই বাক্যগুলো একটি ব্লক থেকে আরেকটি ব্লকে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাসিন্দাদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। এই বাক্যটি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে এই বাক্য ''উহান জিয়ায়ু'' এখন একটি ট্রেন্ডিং বাক্য। এটা তাদের মনোবল বাড়ানোরও চমৎকার কৌশল বটে।
শুধুমাত্র করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য চীনারা মাত্র এক সপ্তাহে তৈরি করেছে হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। আমরা হলে তো পুরো বছরজুড়ে শুধু টকশোতে ঝগড়াই করতাম কার ঘাড়ে দোষ চাপানো যায় এই ভেবে। এদিকে, উহানের নতুন একটি রেস্তোরার মালিক নতুন বছর উদযাপন করেছেন শহরের চিকিৎসা কর্মীদের জন্য ২০০ খাবারের প্যাকেট তৈরি করে। করোনাভাইরাসের ভীতি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চীন জুড়ে হাজার হাজার মানুষ মাস্ক কিনে পড়তে শুরু করেছেন, ফলে অনেক স্থানে মাস্কের সংকট তৈরি হয়েছে। মাস্ক এতোটাই দামী বস্তুতে পরিণত হয়েছে যে, অনেকে মজা করে বলছেন নতুন বছরে তারা টাকা পয়সা চাননা। দামী কিছুর চাইতে মাস্ক উপহার পেলেই বেশি খুশি হবেন তারা। উহান যে হুবেই প্রদেশে অবস্থিত, তার পার্শ্ববর্তী চ্যাঙ্গডির একজন গ্রামবাসী হাও জিন সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি প্রায় ১৫ হাজার মাস্ক দান করবেন। আর এভাবেই মানবতার জয়গান গেয়ে চলেছেন তারা। মৃত্যু হয়তো খুব বেশি ভয়ঙ্কর, কিন্তু জীবনও তো কম সুন্দর নয়।