প্রাকৃতিক সম্পদহীন, কৃষিকাজের অনুপযোগী জমি নিয়ে শুধুমাত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিনিয়োগ ও যথাযথ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যদি পৃথিবীর সেরা দেশের কাতারে আসতে পারে, বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি, একদিন আমরাও পারবো...

ঝা-চকচকে মেট্রোরেল কিংবা দর্শনীয় উড়ালসেতু। জনবান্ধব পাবলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা টেলিকমিউনিকেশন ও ইলেকট্রনিক ব্যবসা। সব দিক থেকেই বিশ্বে এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া। কী করে এতো উন্নতি করলো দেশটি? উত্তর, শিক্ষাব্যবস্থা এবং নিত্য নতুন গবেষণা।

ডেইলি স্টারের প্রবাসে পাতায় আজ পিএইচডি গবেষক বিকাশ রায়ের একটা লেখা পড়ে মুগ্ধ হলাম। তিনি লিখেছেন, গত ৬০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিনত হয়েছে। একেবারে শূন্য অবস্থা থেকে আজ বিশ্বের ১১তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ! 

ভেবে দেখেন, পাশাপাশী দুটি দেশ উত্তর কোরিয়া মেতে ছিল অস্ত্র আর একনায়কতন্ত্র নিয়ে। আর দক্ষিণ কোরিয়া কট্টরপন্থী কোন নীতিকে আকড়ে ধরে না থেকে উদারপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সযত্নে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র বানিয়েছে। ফলে কৃষিতে ন্যুনতম অবদান কিংবা অন্যান্য কোন প্রাকৃতিক সম্পদহীন হয়েও দেশটি শুধুমাত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় পৃথিবীর অন্যতম সম্পদশালী দেশে পরিণত হয়েছে। 

শুনে অবাক হলাম, বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ১০০০ জন কর্মঠ মানুষের মধ্যে ১৪ জন সরাসরি গবেষণার সঙ্গে জড়িত। এর ফলেই স্যামসাং, এলজি, হুন্ডাই মোটরস, কিয়া, এসকে, পোস্কোসহ দক্ষিণ কোরিয়ার অসংখ্য কোম্পানি বিশ্বব্যাপী দাপটের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে। 

দক্ষিণ কোরিয়ায় স্যামসাংয়ের সদর দপ্তর

আন্তর্জাতিক সব তথ্য বলছে, জ্ঞানবিজ্ঞানে বিনিয়োগে পৃথিবীর মধ্যে যে দেশটি সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে সেটি হলো ইজরায়েল। দক্ষিণ কোরিয়া তাদেরও পেছনে ফেলে দিয়েছে! প্রচন্ড পরিশ্রমী এই জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে কাজ ও সততাকেই তাদের ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। 

একবার ভাবেন, কৃষিতে ন্যুনতম অবদান কিংবা অন্যান্য কোন প্রাকৃতিক সম্পদহীন না হয়েও দেশটি শুধুমাত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় পৃথিবীর অন্যতম সম্পদশালী দেশে পরিণত হয়েছে। একসময় যে কোরিয়ানই কাজ কিংবা উপর্জনের জন্য বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে পাড়ি জমিয়েছিল আজ তারাই শিক্ষা ও গবেষণায় যথাযথ বিনিয়োগ করে পৃথিবীর সেরা দেশের কাতারে। আর আমরা এখনো মেতে আছি আমলাতন্ত্র আর নোংরা রাজনীতি নিয়ে।

আমি মনে করি  বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অনেক কিছু শেখার আছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে। প্রাকৃতিক সম্পদহীন, পাহাড়ি ও কৃষিকাজের প্রায় অনুপযোগী জমি নিয়ে শুধুমাত্র জ্ঞানবিজ্ঞানে বিনিয়োগ ও যথাযথ নীতির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া যদি পৃথিবীর সেরা দেশের কাতারে আসতে পারে, সুজলা-সুফলা প্রিয় বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি, একদিন আমরাও পারবো। প্রয়োজন শুধু যথাযথ পদক্ষেপের। প্রশ্ন হলো সেটি কবে হবে?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা