এক ভবনে, একই ছাদের নিচে মসজিদ, গীর্জা, সিনাগগ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
'হাউজ অফ ওয়ান' নামের এই ভবনে মুসলমানদের মসজিদ, খ্রিস্টানদের গীর্জা ও ইহুদিদের সিনাগগ থাকবে একই ছাদের নীচে৷ একসাথেই প্রার্থনা করবেন এই তিন ধর্মের অনুসারীরা। তিন ধর্মের তিন ঈশ্বরের আরাধনা হবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে...
ভাবুন তো একবার, এক ছাদের নীচে মন্দির এবং মসজিদ নির্মিত হয়েছে। সেই মন্দির এবং মসজিদে স্ব স্ব ধর্মের অনুসারীরা নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ ও পূজার পরে একত্রিত হয়ে ধর্মবিষয়ক কথাবার্তা বলছে, নিজেদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, গঠনমূলক তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, সেখান থেকে ধর্মের নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে...ভাবতে অন্যরকম লাগছে না? অন্যরকম লাগলেও এরকম ইউটোপিয়ান সমাজ, রাষ্ট্র ঠিক কবে তৈরী হবে, কবে মানুষের মানসিকতা একটু হলেও উন্নত হবে, আদৌ হবে কী না... সেটা আমরা কেউ জানি না৷ এ নিয়ে কথা বললেও কেউ রক্তচক্ষু দেখাতে পারেন। সে ভয়ও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না মোটেও।
তবে জার্মানির বার্লিনে এক উপাসনালয় তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যেখানে এক ছাদের নীচে ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের প্রার্থনার জন্য আলাদা অংশ বরাদ্দ থাকবে৷ ‘হাউজ অফ ওয়ান’ নামের এই ভবনে তিন ধর্মের অনুসারীরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারবেন। এরকম চিন্তাভাবনা কেন? তিন ধর্মের উপাসনালয় অর্থাৎ মসজিদ, গীর্জা ও সিনাগগ কেন এক ছাদের নীচেই করতে হবে? এ প্রসঙ্গে এই ভবনের প্রোটেস্ট্যান্ট যাজক গ্রেগর হোব্যার্গ, রাব্বি টোফিয়া বেন-চোরিন ও ইমাম কাদির সানচি জানান,
তিন ধর্মের মূল কথা একই। তাই পাশাপাশি থেকে ধর্মচর্চা করলে সৌহার্দ্য বাড়বে, সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে৷ ধর্মেরও নতুন নতুন দিক আবিষ্কৃত হবে।
'হাউজ অফ ওয়ান' এর জন্য ‘ক্রাউডফান্ডিং’-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের কাজও চলছে এখন। পুরো ভবনের কাজ শেষ করতে ৪৩ মিলিয়ন ইউরো লাগবে। সেটির জন্যে এই তিন ধর্মের মানুষই চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও প্রথম প্রথম মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন এই 'হাউজ অফ ওয়ান' এ যুক্ত হতে চাচ্ছিলেন না। পরে ‘ফোরাম ফর ইনটেলেকচুয়াল ডায়ালগ’ নামের তুর্কিভাষী সুন্নি মুসলিমদের একটি সংগঠন এর সঙ্গে যুক্ত হয়৷ আস্তে আস্তে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বাড়ে এখানে।
এই কনসেপ্ট দেখে ভালো লাগলো। যদিও বার্লিনের আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতেও নির্মিত হওয়া শুরু হয়েছে মসজিদ, গির্জা ও সিনাগগ সমন্বিত একটি কমপ্লেক্স। যেটির কাজও শেষ হবে অচিরেই। এই অসাধারণ কনসেপ্ট নিয়ে ভাবতে ভাবতেই মাথায় চলে এলো, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আমার দেশে এরমধ্যেই প্রতিমা ভাঙ্গাভাঙ্গির উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে সংখ্যালঘু নিধনের উৎসবও চলছে। কোরবানির পরে মন্দির ঘেঁষে গরুর বর্জ্য ফেলাও এ দেশে সাম্পদায়িক সম্প্রীতির অংশ।
ভারতে আবার উল্টো দৃশ্যপট। গরু ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাবরি মসজিদ, রাম মন্দির নিয়ে কিছু না ই বা বললাম। এই উপমহাদেশে এরকম উপাসনালয়ের চিন্তাভাবনা করতে গেলেও যে কী পরিমান হাস্যকর লাগে কল্পনাটি, সেটা ভেবেই বার বার চমকাচ্ছি।
অথচ নিরপেক্ষভাবে ভাবলে, এর চেয়ে সুন্দর জিনিস আর হয় না। এরকমটা হলে কতই না ভালো হতো!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন