সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার কোন অ্যাওয়ার্ড থাকলে সেটা আমরাই পেতাম প্রতি বছর!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
গুলশানে আজ দুটি ফার্মেসী সিলগালা করে দেয়া হয়েছে মাস্ক এবং স্যনিটাইজারের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে ফেলার অপরাধে। বিশেষ অভিযান চালিয়ে ফার্মেসি দুটি সিলগালা করে দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এই দেশে একেকটা বিপদ আসে, আর এক শ্রেণীর মানুষ সেটার ফায়দা তোলে পুরোপুরি। যখন মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর কথা, তখন জনগনকে জিম্মি করে তারা ব্যবসা করে নেয় কয়েকগুণ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে দেশে, সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক- এই সময়েও কিছু অমানুষ যে বাকীদের গলা চেপে ধরে নিজেদের মুনাফা লুটে নেবে- এতে আর অবাক হবার কী আছে! সেরকমটাই ঘটছে এখন। ঢাকার অনেক জায়গাতেই তৈরী হয়েছে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর হ্যান্ডওয়াশের সংকট। লোকজন দেদারসে কিনছে এগুলো, ব্যবসায়ীরাও সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে এসব পণ্যের, মজুদ করে তৈরী করছে কৃত্রিম সংকটের।
ঢাকার গুলশানে আজ এমনই দুটি ফার্মেসী সিলগালা করে দেয়া হয়েছে মাস্ক এবং স্যনিটাইজারের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে ক্রেতাদের ভোগান্তিতে ফেলার অপরাধে। বিশেষ অভিযান চালিয়ে ফার্মেসি দুটি সিলগালা করে দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আল নূর ফার্মেসি ও সাফাবি ফার্মেসি। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অপরাধে আল মদিনা ফার্মেসিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তিনি বলেছেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি রাখি। তারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্রেতার কাছে মাস্কের দাম বেশি রাখে। এসব তথ্য আমরা ভিডিওতে ধারণ করেছি। পরে আমরা যখন তাদের কাছে মাস্ক কিনতে যাই তখন প্রতিষ্ঠানগুলো বলে যে তাদের কাছে মাস্ক নেই। অথচ এর আগে তারা বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করেছে; যার প্রমাণ অধিদফতরের কাছে রয়েছে।”
মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আরও বলেছেন- “জাতির এ ক্রান্তিকালে অনৈতিকভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মাস্কের দাম বেশি নেয়া আইনত দণ্ডনীয়। এ অপরাধে দুটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর আরও কয়েকটি জায়গায় মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কৃত্রিম সংকটকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। যারাই অনৈতিক উপায় পণ্যের দাম বেশি নেবে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।”
গত বছর যখন ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল, তখন হুট করেই বাজার থেকে ওডোমস ক্রিম উধাও হয়ে গিয়েছিল, ফার্মেসিগুলোতে বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে এই ক্রিম, অনেক জায়গাতেই তৈরী হয়েছে কৃত্রিম সংকটের। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সঙ্গেও এই কৃত্রিম সংকট তৈরীর সিন্ডিকেটটা জড়িত ছিল, তাদের জন্যেই আড়াইশো টাকায় মানুষকে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে একটা সময়ে। একেকটা দুর্যোগ আসে, জাতি সর্বনাশের মুখে ধাবিত হয়, আর এই অমানুষদের পৌষ মাস শুরু হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে।
বিশ্বের একশোর বেশি দেশে করোনাভাইরাস পৌঁছে গিয়েছে, চীনের কয়েক জায়গায় তো মহামারীর আকার নিয়েছে, সেখানেও মাস্ক বা স্যানিটাইজারের সংকট আছে, কিন্ত দাম বাড়িয়ে মানুষকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করতে পারছে না কেউ। ইউরোপ-আমেরিকা বলুন কিংবা আমাদের পাশের ভারত-মিয়ানমার, কোথাও এরকম করোনার ঘোষণা আসামাত্রই পাঁচ টাকার জিনিসের দাম পঞ্চাশ টাকায় উঠে যাওয়ার কথা শুনবেন না আপনি। এমন নজির দেখা যাবে কেবল বাংলাদেশেই। মানুষকে জিম্মি করার ওপরে কোন অ্যাওয়ার্ড থাকলে সেটা প্রতি বছর বাংলাদেশীরাই জিততো, তাতে কোন সন্দেহ নেই।