পিরোজপুরে দুর্নীতি মামলায় এক আওয়ামী লীগ নেতার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। এক ঘন্টার মধ্যে সেই বিচারকের বদলির আদেশ চলে এসেছে, কয়েক ঘন্টা পরে আসামীর জামিনও হয়ে গেছে! সবাই করোনাভাইরাসের ভয়ে অস্থির, অথচ সৎ থাকাটা যে একটা ভয়াবহ রোগ, সততা যে একটা প্রাণঘাতি ভাইরাস- সেটা নিয়ে আমাদের কোন ভাবনাই নেই!
শুভদীপ চন্দ: আর যাই করুন, বাবা মায়ের ভুল করবেন না। ছেলেমেয়েদের মাথায় সততার ভাইরাস ঢুকাবেন না। এ প্রজন্ম যে জিনিসটা অনেক কষ্ট করে আয়ত্ত্ব করেছে- 'ঘাড় গুঁজে পড়ে থাকা'- সে ট্রেনিংটা তাদের ছোটবেলা থেকে দিন।
দেখুন এক বিচারকের কী পরিণতি হলো। এক রায়ের জন্য এজলাস থেকে নামতে না নামতেই ট্রান্সফার। ধরুন আপনি হাসপাতালে ইমার্জেন্সি ডিউটি করছেন। মারামারি করে এক রোগী এসেছে। কোনো নেতা ফোন দিল 'গ্রিভিয়াস ইনজুরি' লিখে সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে, পাঁচ হাজার টাকা পাবেন। বুঝে নিবেন সেই নেতা অনেক ভাল মানুষ। আপনাকে ওখানে বসানোই হয়েছে ওই কাজ করার জন্য। এরপরে টাকা সাধছে, এই-ই অনেক!
আপনার একটি পরিবার আছে, ছেলেমেয়ের স্কুল আছে, একটি ফ্রেন্ড সার্কেল গড়ে উঠেছে, হয়তো চেম্বারে এক দুইটা রোগী হয়। এসব ছেড়ে বান্দরবান যাওয়ার কোনো মানেই হয় না। সবচেয়ে বড় কথা কাউকে পাবেন না। কোনো এসোসিয়েশন, কোনো ফোরাম, কোনো কলিগস সমিতি কিছুই পাবেন না। এমনকি ফেসবুকেও কাউকে পাবেন না। যে লোক কবিতা নিয়ে লেখে আপনি অনেক পছন্দ করেন, উনি 'কবিতা' নিয়েই লিখবেন। আপনাকে মেরে ফেললেও তার ভাবান্তর ঘটবে না। আপনার বন্ধুরাও কোথাও কিছু বলবে না। অন্যায় হচ্ছে জেনেও চুপ করে থাকবে। কারন সবার ঘাড়ে একটি করে মাথা। সে মাথা কেউ খোয়াবে না।
২১ শে ফেব্রুয়ারী, ২৬ শে মার্চ- খুব আবেগী লেখা লিখছে, বা উচ্চকণ্ঠে নীতিকথা বলছে- তাকেও বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আপনার বিপদ মানে আপনিসহ আপনার পরিবারের বিপদ। আর কারো না। আপনি যতই সততা দেখান, দেশের জন্য ভাবেন- আপনার সাথে কাউকে পাবেন না।
তাই ছেলেমেয়েদের নিজেকে ভালোবাসতে শেখান। স্রোতে ভেসে যেতে শেখান। মুখে নীতি কথা বলতে শেখান। কাকে তেল দিলে লাভ হবে বুঝে তাকে তেল দিতে শেখান। সব ইস্যু নিয়ে কথা না বলতে শেখান। যে উপকার করতে পারবে তারজন্য 'জীবন দিয়ে দেয়া'র ভাব ধরাটা শেখান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণঃ হিপোক্রেসিটা খুব ভাল করে শেখান। এটি বেস্ট সাবজেক্ট। এ এক জ্ঞানই যথেষ্ট- নাম, যশ, ক্যারিয়ার গড়ে দিতে।
মনে রাখবেন করোনা ভাইরাস মারাত্মক না, মারাত্মক সততা ভাইরাস। সততা ভাইরাস শুধু একজনকে না, পুরো পরিবারকেই শেষ করে দিতে পারে৷ সততা ভাইরাস সহজে শরীর থেকে বেরও হয় না। আরো মনে রাখবেন- কোনো টেবিলে নয়জন পাগল আর একজন সুস্থ মানুষ বসলে; সমাজের চোখে ওই নয়জন মানুষ সুস্থ, বাকি একজন পাগল।
কিছু লোক তালি দিবে। সে কলোসিয়ামের যুগেও দিতো, যখন মানুষ হিংস্র জানোয়ারের সাথে প্রকাশ্যে লড়তো। অথচ মরার সময় কেউ এগুতো না। মানুষ কোনদিনই জানোয়ারের সাথে যুদ্ধে পারে না।
তাই পাগল হয়ে লাভ নেই।