হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা ফটকাবাজির দেশে এই গল্পটা আসলেই বিরল। করোনার মাঝেও এতগুলা টাকা তার সততায় আঁচ লাগাতে পারেনি...

এক লোক ব্যাংক থেকে টাকা তুললেন। অল্পস্বল্প নয়, বেশ মোটা অংকেরই। এক দুই লাখ নয়, পুরো ৬১ লাখ টাকা। এই পরিমাণ টাকা একটা ব্যাগে নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় ওঠেন তিনি। তারপরের গল্পটা আরেকটু ইন্টারেস্টিং। সেই টাকার ব্যাগ ‘ভুলে’ ফেলে রেখে চলে যান তিনি। সেখান থেকে নিজের গন্তব্যে পৌঁছানোর পর তার মনে পড়ে ব্যাগটার কথা। ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কোনো উপায় নেই সেটা উদ্ধার করার।

তারপরেও সেই এলাকায় ফেরত এসে ঐ অটো চালককে খুঁজতে থাকেন লোকটা। তার অবস্থা তখন পাগল প্রায়। এরপর যোগাযোগ করেন পুলিশের সাথে। পুরো ঘটনাটা জানাতেই তৎপর হয় উক্ত জেলা পুলিশের গোয়ন্দা শাখা। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানের সিসি টিভি ফুটেজের বিশ্লেষণ।

এদিকে প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করেও যখন দেখে ব্যাগের মালিক ফিরে আসছেন না, তখন অটো রিকশাচালক বুঝতে পারেন খুব বড় ধরণের একটি ভুল করেছেন তার যাত্রী। তখন  সোজা গ্যারেজে চলে যান তিনি। সেখানে তার অটোটা রেখে, স্থানীয় জেলা আওয়ামীলীগ অফিসের সহকারীকে অভিহিত করেন। এদিকে সেই সহকারী ইতিমধ্যেই পুলিশের প্রচারণায় জেনে গেছেন হারানো টাকার কথা।

তাই তারা দুইজন মিলে সরাসরি যোগাযোগ করেন পুলিশের সাথে। এদিকে পুলিশও ততোক্ষণে সিসি টিভি ফুটেজে খুঁজে বের করে অটোচালককে। তারা দেখতে পায় চালকটি সত্যিই সেখানে টাকার ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। আর এভাবেই বিকেলে হারানো টাকা সন্ধ্যার মধ্যেই উদ্ধার হয়ে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় 

এতোদূর পড়ে নিশ্চয়ই মনে করছেন এটা কোনো বানানো গল্প। কিংবা নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে এতো টাকা কেউ ভুল করে কীভাবে ফেলে যায়? আর হতদরিদ্র কেউ এই টাকা পেয়েও কীভাবে ফেরত দেয়? সে কি রক্ত মাংসের মানুষ না? তার মধ্যে কি লোভ লালসা নেই?

নাটক সিনেমার মতো বানানো গল্প মনে হলেও, পুরো ব্যাপারটি একটি সত্য ঘটনা। ঘটনাটা চাঁদপুরের, ঘটেছে গতকাল। যিনি টাকাটা হারিয়েছেন, তিনি পেশায় একজন বিকাশ এজেন্ট, নাম আলামগীর হোসেন জুয়েল। আর যিনি টাকাটা পেয়েছে্‌ তিনি পেশায় একজন অটোরিকশা চালক, নাম সজীব সর্দার।

হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা ফটকাবাজির দেশে, এই গল্পটা আসলেই বিরল। একে তো একসাথে এতোগুলো টাকার হাতছানি, তার ওপর করোনার ক্রান্তিকাল। কোনোকিছুই তার সততায় বিন্দুমাত্র আঁচ লাগাতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় সজীব নামের এই ছেলেটার বয়স মাত্র আঠারো। এই বয়সটাতে নিজের লোভ সংবরণ করা আসলেই বেশ কষ্টসাধ্য। সে কঠিন কাজটাই অবলীলায় করে ফেললো সে। সাথে সুকান্তের এই কবিতাটাও মনে করিয়ে দিলো:

আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ, র্স্পধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,

আঠারো বছর বয়সেই অহরহ, বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।

আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়, পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,

এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়- আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।

এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য, বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,

প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য, সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।

আঠরো বছর বয়স ভয়ঙ্কর, তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,

এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর, এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।

আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার, পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,

দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার, ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।

আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে- অবিশ্র্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,

এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে, এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।

তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি, এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,

বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী, এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।

এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়- পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,

এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়- এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে... 

আরও পড়ুন- সৃজিতের অপরাধটা কি বলবেন?

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা