আপনার গে/লেসবিয়ান/বাই সেক্সুয়াল হতে ইচ্ছা না করলে আপনি হবেন না। তবে, অন্য কেউ হতে চাইলে তাকে আপনি বাধাও দিবেন না। লিভ অ্যান্ড লেট লিভ- এটাই জীবনের মূল প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত।

সাজিদ রাহাতবাংলাদেশের এক তরুণ অক্সফোর্ডে পড়তে গিয়ে সেখানে আবিষ্কার করলো যে সেখানকার পরিবেশ সমকামী বান্ধব এবং সেটাকে সাধুবাদ জানালো। আর তাতেই ধর্মান্ধ (মোটেই ধর্মপ্রাণ নয়) জনগণের/ তৌহিদী জনতার পিত্তি জ্বলে উঠলো। সমস্বরে মাতমধ্বনি বেজে উঠলো তাদের শোকার্ত কণ্ঠে 'হায় হায় এই বার বুঝি রসাতলে গেল দেশ'।

কেন ভাই, কেউ সমকামী হলে দেশ কেন রসাতলে যাবে? কোন ইন্ডিভিজুয়ালের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টশান কি কাউকে কোনভাবে আহত করছে, কারো ক্ষতিসাধন করছে? কোন ব্যক্তি লেসবিয়ান কিংবা গে হলে কি সেটা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলে নাকি কূটনৈতিক কলা-কৌশলে বিপর্যয় সাধিত হয়? একটাও যদি না হয়, তবে আসলেই তো কেউ যদি গে কিংবা লেসবিয়ান কিংবা বাইসেক্সুয়াল হয় তাতে আপনার কী? সে তো আপনাকে জোর জবরদস্তি করছে না তার মতো হবার জন্য বা তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। আপনি আপনার মতো থাকেন, তাকে তার মতো থাকতে দেন।

কিন্তু না। আপনি তো আবার ধর্মান্ধ পাবলিক। আপনার তো অন্যের জীবনে ও চয়েজে নাক না গলালে থামবে না। তাই, আপনি এখন বলবেন 'না না, এটা আমাদের ধর্মে হারাম। ইসলামে নাই এসব। আল্লাহ এক লুত জাতিকে সমকামের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছিল' ইত্যাদি।

আচ্ছা, আপনার বিশ্বাস আপনার কাছে, আরেকজনের বিশ্বাস আরেকজনের কাছে। সে যদি তার মতো করে বিশ্বাস করে, বা বিশ্বাস করেও না মানে, সেটা আপনার দেখার বিষয় না। আল্লাহ কি আপনাকে কে কী করলো তার উপর রিপোর্ট বানিয়ে সাবমিট করার দায়িত্ব দিয়েছে? না দেননি। সুতরাং, স্টে আউট অব আদার্স বিজনেস।

আপনি নিজে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মানেন পুরোপুরি? আপনি মদ খান, সুদ খান, পর্ণ দেখেন, হস্তমৈথুন করেন, পর্দা করেন না, বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে চেক আউট করেন। সুতরাং, নিজে পাপিষ্ঠ বান্দা হয়ে আরেকজনের বেহেশতগমণের বন্দোবস্ত করার চাইতে নিজের চরকাতে তেল দেয়াই শ্রেয় বোধহয়। তাছাড়া, ধরলাম ধর্মে আছে, কিন্তু আমি বা কেউ সেটা মানলো না। এখন আপনি কি মানতে বাধ্য করবেন? জোর করে ধর্মীয় বিধি নিষেধ আরোপ করবেন? আপনি উপরে উপরে না বললেও আপনার অন্তর বলছে হ্যাঁ। হ্যাঁ, আপনি বাধ্য করতে চান। আধুনিক যুগ হওয়ায়, আপনার মতো কুচিন্তাপূর্ণ মানুষের দৌরাত্ম্য না থাকায় আপনি সেটা করতে পারছেন না।

যদি এই দেশের তখতে মোল্লারা থাকতো তখন আপনি বাধ্য করতেন, মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতেন, সবাইকে নিজেদের মতবাদ দ্বারা পরিচালিত করতে চাইতেন, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন। আর এই কারণেই আপনাদেরকে মৌলবাদী, উগ্রপন্থী বলা হয়। এই কারণেই উঠতে বসতে আপনারা গালি খান। এমনি এমনি না তো। আপনি নিজে ধর্ম পালন করার চাইতে অন্যেরা পালন করলো কি না তার তদারকিতেই ব্যস্ত। কারণ, এটাই আপনার ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি। আপনি ধর্মকে একটা রাজনৈতিক দল বা আদর্শ হিসেবে দেখেন, যার টিকে থাকা জরুরি এবং সবাইকে সেই আদর্শ মানতে বাধ্য করতে চান যেটা খুবই বর্বর একটা ধারণা।

আপনার গে/লেসবিয়ান/বাই সেক্সুয়াল হতে ইচ্ছা না করলে আপনি হবেন না। তবে, অন্য কেউ হতে চাইলে তাকে আপনি বাধাও দিবেন না। Live and let live- এটাই জীবনের মূল প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত।

কেউ এলজিবিটিকিউ রাইটস্ এর পক্ষে কথা বলা মানেই সে গে কিংবা লেসবিয়ান না। আমি এই রাইটস্-এর পক্ষে বলছি। কিন্তু, আমি তো এর কোনটাই না। আমার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশান স্ট্রেইট। এই স্ট্যাটাস পড়ার পর অনেকেরই আমার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশান নিয়ে কৌতূহল জাগতে পারে, তাই আগেই পরিষ্কার করে দিলাম।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা