ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় সে বিকল্প পথে দেখায়। বিকল্প পথে যেতে চিৎকার করে ডাকে। যদি কারো সাথে গাইড না থাকে, তাহলে কুকুরটিই তার গাইড। জলপ্রপাতে একজন পর্যটক থাকলেও হামি একা ফিরবে না। শেষ পর্যটক হামহাম থেকে চলে এলে হামিও লোকালয়ের পথে হাঁটে।

অচেনা শহর। কিছু কুকুর আড্ডা দিচ্ছে। পাশ দিয়ে একটি মেয়ে ভয়ে ভয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কথা বলতে পারলে হয়তো কুকুরগুলো বলে উঠতো, ‘ভয় পাবেন না আপু। আপনার কোনো ক্ষতি করবো না। আমরা মানুষ নই।’

নিজের জীবন দিয়ে মানুষকে বাঁচানোর মতো উদার এ প্রাণীকে আমরা গালি হিসেবেই ব্যবহার করি। পান থেকে চুন খসলেই আমাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কুত্তারবাচ্চা। অথচ, কুকুরের মতো বিশ্বাসী বন্ধু এ জগতে খুঁজে পাওয়া দায়। এমনই এক মানববান্ধব কুকুরের গল্প আলোচনায় এসেছে সম্প্রতি। চলুন জানা যাক কী সে গল্প!

সিলেটের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কুরমা বনবিট এলাকায় রয়েছে হামহাম জলপ্রপাত। গহীন পাহাড়ি ও ঝিরি পথের কারণে বিখ্যাত এটি। পায়ে হাঁটা পথে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। একটু অন্য পথে গেলে পথ হারানোর সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া কাছেই ভারতের সীমান্ত। তাই প্রাণহানীর ঝুঁকিও আছে। পাশের গ্রামেই জন্মেছে ‘হামি’। এই হামি হচ্ছে সে কুকুরের নাম যে কিনা পথ হারানো পর্যটকদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। হামহাম জলপ্রপাতের নামানুসারে তার নাম রাখা হয়েছে হামি।

হামি

অনেক সময় জলপ্রপাত ফেরার পথে সন্ধ্যা হয়ে আসে। তখন বিভিন্ন পশু-পাখির আওয়াজ আর পানির শব্দ মিলে ভীতিকর অবস্থা হয়। ঠিক তখনই পর্যটকদের ভরসা দেয় হামি। বন থেকে বের হয়ে লোকালয় পর্যন্ত আসা পর্যন্ত হামি পথ দেখায়। কখনো সামনে থেকে, কখনো পেছনে থেকে আগলে নিয়ে আসে পর্যটকদের।

ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় হামি বিকল্প পথে দেখায়। বিকল্প পথে যেতে চিৎকার করে ডাকে। যদি কারো সাথে গাইড না থাকে, তাহলে কুকুরটিই হয়ে যায় তার গাইড। জলপ্রপাতে একজন পর্যটক থাকলেও হামি একা ফিরবে না। শেষ পর্যটক হামহাম থেকে চলে এলে হামিও লোকালয়ের পথে হাঁটে।

এলাকাবাসী জানায়, ‘কুকুরটি প্রায় ২ বছর ধরে পর্যটকদের সাথে প্রতিদিন সকালে হামহাম জলপ্রপাতে যায়। সেখানে সারাদিন থাকে। পর্যটকদের দেওয়া বিভিন্ন খাবার খায়। হামির সাথে আরেকটি কুকুর আছে। সেটার নাম ‘মামি’। তবে হামিই দায়িত্বশীল। যতক্ষণ পর্যটক থাকবে; ততক্ষণ হামি থাকবে। এ কুকুর তাদেরই গ্রামে বেড়ে উঠেছে। হামি প্রতিদিন সকালে হামহামের রাস্তায় পা ফেলে। দিন শেষে যারা হামহাম থেকে ফিরে আসেন, তাদের সাথে ফিরে আসে। কুকুরটি কারো সঙ্গে থাকলে এ বনে চলতে তার আর গাইড লাগে না।’

চারপাশে এতো অমানুষের ভিড়ে। হামির মতো কুকুরই নাহয় জন্মাক এ দেশে। পথ দেখাক পথ হারানো বাংলাদেশকে।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা