আজকের কথাগুলো আপনার ভাল লাগবে না, কিন্তু এই কথা হয়ত আপনাকে আগামীকাল খুন হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেবে। আপনার ও আপনার পরিবারের স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস হওয়া থেকে বাঁচাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখে প্রবাসী শ্রম বাজার এবং গার্মেন্টস সেক্টর। করোনাভাইরাসের প্রকোপে এই দুই সেক্টরই প্রায় অচলাবস্থায় আছে। আর সেই সাথে লক্ষ লক্ষ পরিবারের চাকাও থেমে গেছে। যদি দ্রুততম সময়েও মেডিসিন আবিষ্কার হয়, তবুও ২ বছর লেগে যাবে মানুষের হাতে পৌছতে। সেই হিসেবে মানুষের কর্মজীবন স্বাভাবিক হতে আসলে কত বছর লাগবে, সেটা এখনি বলা সম্ভব না।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণ ৬৭ হাজার টাকা। এবং দুর্নীতিতে আমাদের রেকর্ড আছে। যেহেতু আমাদের অর্থনীতি ভঙ্গুর এবং যা আছে তাও কিছু লোকের পকেটে , সেহেতু বাংলাদেশ সরকার, তাদের এই ত্রাণ কার্যক্রম, খুব বেশি দিন টানতে পারবে না। তারপর কী হবে?
পরশু একটা ইন্টার্ভিউ দেখছিলাম। সদরঘাটের এক কুলি বলছে, 'পেটে যতদিন খাবার আছে, ততদিন বুঝ দিতে পারমু, তারপর পেটের জন্য চুরি করতে হইলে করমু, খুন করতে হইলে করমু, বাঁচতে তো হইব। আমি তো অন্য কিছু দেখমু না, যা করা লাগবে তাই করমু।'
সংবাদ মাধ্যমের চিপায় যে খবরগুলো হারিয়ে যায়, সেটা হলো- শুধু দারিদ্রের বোঝা বইতে না পেরে, গত এক মাসে ৩ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। শুনলে মনে হতে পারে, এ আর এমন কী, এই দেশে রোজ কত মানুষ মরে যায়। জ্বী না, এই বিষয়টা ভয়ংকর। শুধু খাবারের জন্য যখন একটা রাষ্ট্রের একজন মানুষও আত্মহত্যা করে, তার মানে, সে রাষ্ট্রের একটা বিরাট অংশ এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরা বাঁচার জন্য মরিয়া হচ্ছে। বেঁচে থাকার উপায় খুঁজছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা কোনো আইন, কোনো এথিক্স মানবে না।
শুধু নিজের স্বার্থে হলেও এই মানুষগুলোর বেঁচে থাকা নিশ্চিত করুন। প্রশ্ন হলো- কী করতে পারেন?
প্রথমত ত্রাণ চোরদের ঠেকান, এর কোনো বিকল্প নেই, যেখানে পাবেন, সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। ফেসবুকে ছবি দিন, পুলিশকে জানান। আপনার চারপাশে কোন অভাবী মানুষ আছে কিনা খেয়াল করুন। রোজ বাসার নিচে কেউ ভাত দেন বলে চিৎকার করলে তার কথা শুনুন, তাকে খাবার দিন। আপনার বুয়া-দারোয়ানের বেতন দিয়ে দিন। তারা কীভাবে আছে, খবর নিন। আপনার বাসার ভাড়াটিয়া যে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তার খবর নিন।
খাবার নষ্ট করবেন না, কম রান্না করুন, পারলে ভাতের চাল থেকে এক মুঠো চাল তুলে রাখুন। এই সময় পয়সার ঝনঝনানি দেখায়েন না প্লিজ। কাউকে সাহায্য করার সময় সেলফী বাজি বন্ধ করুন, আপনার এই ছবি তোলার কারণে কেউ লজ্জায় হয়ত সাহায্য নেবেই না। আপনার পেশা সেবা মূলক হলে এই মুহূর্তে অবশ্যই পেশাদারিত্ব দেখাবেন। যেখানে সরকারি সাহায্য যাচ্ছে, সেখানে আপনার ত্রাণ এখনি দেবার দরকার নেই, আগামী দিনে অভাবী মানুষগুলোর জন্য ঐ টাকা কাজে লাগবে।
জোকার সিনেমাটার কথা মনে আছে? সমাজের অবহেলিত শ্রেণী যখন বিদ্রোহ করে, তখন সমাজের ভীত নড়ে যায়। শুধু বেঁচে থাকার লড়াই যারা করে যাচ্ছে তাদেরকে একটু ভাত-কাপড় দিলেই তারা আপনার জীবনে কোনো ঝামেলা করে না। কিন্তু এই সামান্যটুকু যখন থাকে না, তখন তাদের ন্যায় নীতি, বিবেক এই সব ভারী কথা দিয়ে আটকানো যায় না। তাদের ভেতরের ক্রোধ বাড়ছে। প্লিজ সাবধান হোন।