ইসলামী দৃষ্টিতে কেমন হলো হায়া সোফিয়ার রূপান্তর?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
আজকে হায়া সোফিয়া, বা হাজিয়া সোফিয়া বা যে নামেই ডাকেন তাকে, কোর্টের রায়ে আবারও মসজিদে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ছিল গির্জা, মুসলিমরা একে বানালো মসজিদ, এবং তারপরে হলো জাদুঘর। এবং আজ প্রায় এক শতাব্দী পরে আবারও মসজিদে রূপান্তরিত হবে।
The Church of the Holy Sepulchre হচ্ছে খ্রিষ্টানদের হোলিয়েস্ট অফ দ্য হোলি চার্চ। ওদের বিশ্বাস- সেখানেই যীশু খ্রিষ্টকে ক্রুসিফাই করা হয়েছিল। যদিও মুসলিমদের এই বিশ্বাস নয়। আমরা বিশ্বাস করি, জুডাসকে (যে যীশুকে (আঃ) হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল) আল্লাহ যীশুর চেহারা ও দৈহিক গঠন করে দেন, রোমান সিপাহীরা তাকেই ধরে নিয়ে ক্রুশবিদ্ধ করে, এবং আমাদের নবী ঈসাকে (আঃ) আল্লাহ নিজের কাছে তুলে নেন। আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, তিনি আবারও পৃথিবীতে ফিরে আসবেন, দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়বেন। তাকে হত্যা করবেন। এবং তিনি আবারও পৃথিবীতে শান্তিস্থাপন করবেন।
তা জেরুজালেম দখলের পরে আমাদের খলিফা উমার (রাঃ) নগরের চাবি বুঝে নিতে যান। তিনি তখন এই গির্জা পরিদর্শন করেন। আসরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ায় খলিফা বলেন তাঁকে একটু সময় দিতে, তিনি বাইরে গিয়ে নামাজ আদায় করে আসবেন। গির্জার পাদ্রী ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বলেন, "আপনি এখানেই নামাজ আদায় করুন না!" উমার (রাঃ) তখন বিনয়ের সাথেই সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বাইরে গিয়ে ফাঁকা স্থানে নামাজ আদায় করেন। কারণ, তিনি তাঁর অনুসারীদের চিনতেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, ওরা সেই স্থানে অবশ্যই মসজিদ নির্মাণ করবেন, যার নাম হবে মসজিদ উমার! এবং কথা সত্য, আপনি জেরুজালেম গেলে, এই গির্জার উল্টোদিকেই রাস্তার ওপর পারে একটি মসজিদ দেখতে পাবেন, যার নাম মসজিদ উমার (রাঃ)!
তিনি যদি সেদিন গির্জার অভ্যন্তরে নামাজ আদায় করতেন, তাহলে অবশ্যই আজকে সেই গির্জা একটি মসজিদে পাল্টে যেত। একজন নেতা এক কদম ফেলার আগে সামনের দশ কদম নিয়ে চিন্তা করেন। তা এ থেকে আমরা কী শিখলাম?
উমার (রাঃ) চাইলেই জেরুজালেম থেকে সব ইহুদি এবং খ্রিষ্টানদের বিতাড়িত করতে পারতেন। তিনি ইচ্ছা করলেই তাঁদের সব উপাসনালয় দখল করে মসজিদে রূপান্তর করতে পারতেন। রাজনৈতিক দিক দিয়ে সেই অধিকার, ক্ষমতা সবই তাঁর ছিল। তাকওয়ার দিক দিয়ে উমারের (রাঃ) সমকক্ষ এক আবু বকর (রাঃ) ছাড়া আর কে ছিল? সেই উমার (রাঃ) এইসবের কিছুই করলেন না। কেন?
কারণ তাঁর গুরু, তাঁর শিক্ষক, যার দিকে তাকিয়ে তিনি পথ চলা শিখেছিলেন, তিনি বলে গিয়েছিলেন, "যুদ্ধের সময়ে গির্জায় বা ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করা যাবে না। সেখানে আশ্রয় নেয়া মানুষদের ক্ষতি করা যাবে না।"
প্রতিটা যুদ্ধে বিশেষ করে মুতাহর যুদ্ধে, যেখানে মুসলিমদের লড়াই ছিল খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে, সেই যুদ্ধে তিনি তাঁর সেনানায়কদের এই নির্দেশ দেন।
নবী (সঃ) নিজে হুকুম দিতেন অন্যের ধর্মীয় উপাসনালয় বেদখল করা যাবে না।
হ্যাঁ, যদি সেই এলাকার সবাই মুসলিম হয়ে যায়, এবং মন্দির/গির্জা/সিনাগগ পরিত্যক্ত হয়, তবে ভিন্ন কথা। যেমনটা হয়েছিল মক্কা বিজয়ের পরে। নাহলে কে কাকে পূজা করবে আর কার করবে ইবাদত, সেই স্বাধীনতা আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে সবাইকে দিয়েছেন।
আজকে হায়া সোফিয়া, বা হাজিয়া সোফিয়া বা যে নামেই ডাকেন তাকে, কোর্টের রায়ে আবারও মসজিদে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ছিল গির্জা, মুসলিমরা একে বানালো মসজিদ, এবং তারপরে হলো জাদুঘর। এবং আজ প্রায় এক শতাব্দী পরে আবারও মসজিদে রূপান্তরিত হবে।
আনন্দ-বেদনা ইত্যাদি প্রকাশের আগে আমাদের জানা উচিৎ টার্কিতে কি মসজিদের অভাব পড়েছিল যে একেই মসজিদে রূপান্তরিত করতে হলো? এই ভবনের ভিত্তি কি মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্যেই হয়েছিল? এখানে নামাজ আদায় করলে কি বিশেষ বরকত পাওয়া যাবে? এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে না তো?
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের সাথে হিন্দুরা যা করলো, এবং জায়ানিস্ট ইহুদিরা মসজিদ আকসার সাথে যা করছে, আমরা মুসলিমরা এই হায়া সোফিয়ার সাথে সেই একই আচরণ করিনি তো? আমার আল্লাহ বলে দিয়েছেন অন্যায় না করতে। তিনি বিচার করলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিচার করেন, মুসলিম বা মুশরিকের বিরুদ্ধে নয়।
মাহমুদ গজনী সোমনাথের মন্দির লুট করেছিল, হিন্দু কট্টরপন্থীদের সেই প্রতিশোধ এখনও নেয়া শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে কেউ জানে না। আল্লাহ ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। তিনি জানবেন কী হতে চলেছে। তবে মনের মধ্যে কেমন খচখচ করছে। মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি।
লেখাটি ফেসবুক গ্রুপ 'ক্যানভাস' এ প্রথম প্রকাশিত হয়েছে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
আরও পড়ুন-