
অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে জন্মেছেন বিকল হাত পা নিয়ে। চলাফেরা করতে হয় হুইলচেয়ারের সাহায্যে। শিক্ষার আলো দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন এই বিকলাঙ্গ জীবন থেকে। এক প্রকার মুখের উপর ভর দিয়েই চলিয়েছেন লেখাপড়া। হয়েছেন গ্র্যাজুয়েট।
অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে জন্মেছেন বিকল হাত পা নিয়ে। চলাফেরা করতে হয় হুইলচেয়ারের সাহায্যে। শিক্ষার আলো দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন এই বিকলাঙ্গ জীবন থেকে। এক প্রকার মুখের উপর ভর দিয়েই চলিয়েছেন লেখাপড়া। হয়েছেন গ্র্যাজুয়েট।
জীবনের এ পথচলা শুরু ১৯৯৩ সালে। বগুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক হতদরিদ্রে কৃষক পরিবারে জন্ম তার। নাম হাফিজুর রহমান। পড়ালেখার হাতেখড়ি বাবা কাছ থেকে বর্নমালা চিনে নেয়ার মাধ্যমে। সেই থেকে শুরু। বেয়ারিং এর ঠেলাগাড়ি করে চলাফেরা করতে হতো। বাড়ি থেকে স্কুল ছিলো দুই কিলোমিটারের পথ। কখনো সহপাঠী, কখনো বা পরিচিত কেউ ঠেলে নিয়ে যেতো তাকে। আর এভাবেই ২০০৯ সালে জিপিএ ৪.১৯ ও ২০১১ সালে ৩.৬০ পেয়ে যথাক্রমে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করেন। সুশিক্ষিত হবার আপ্রান চেষ্টা থেকেই গ্র্যাজুয়েট হবার পথে এগিয়ে যান।
ভর্তি কোচিং ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। ২০১২/১৩ শিক্ষাবর্ষে মেধা তালিকায় স্থান করেন নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে পড়াশুনা শুরু করেন। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে ঢাকা মহানগরীতে এসে বাস করা তার জন্যে বেশ ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলো। ক্যাম্পাসে একটি ভাসমান স্টল দিয়ে টুকিটাকি জিনিসপত্র বিক্রী করা শুরু করেন হাফিজুর রহমান। সেই থেকে হয়ে ওঠেন ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ ‘হাফিজ’ ভাই।

কিছুদিন পেয়েছিলেন সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা। টিউশনি করিয়েছেন। এসব মিলিয়ে যে অর্থ জোগাড় হতো তা দিয়ে নিজেই ঠিকমত চলা মুশকিল। অসচ্ছল পরিবার থেকে সাহায্য পাবার সুযোগটুকুও ছিলো না। এ প্রতিকূল পরিবেশেই মানসিক ও শারীরিক বাধার মধ্যে দিয়ে অনার্স শেষ করে, মাস্টার্সও কমপ্লিট করেন তিনি। তার ২ বছর পর এসে, এ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন।
বর্তমানে একটি চাকরীর জন্য ছুটছেন তিনি। তবে যে দেশে প্রতি বছর লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েট উৎপাদিত হয়ে বেকার বসে থাকে, সেখানে কে দেবে একজন বিকালঙ্গ গ্র্যাজুয়েটকে চাকরী? সরকারি বা ব্যাক্তিগত কারো সহযোগিতাই পাচ্ছেন না তিনি। ২৭ বছর জীবনের লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছেন একা একা। এবার কারো সাহায্য না পেলে হয়তো থমকে যেতে বাধ্য হবেন তিনি। একজন অপ্রতিরোধ্য হাফিজুর রহমান কি তাহলে এভাবেই হেরে যাবেন নিয়তির নির্মম পরিহাসে?
কেউ যদি সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে চান তবে, চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন Hafizur Rahman এর ফেসবুক আইডিতে।
তথ্যসূত্রঃ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।