করোনাকালে বন্ধ হয়েছে দেশের হাজার হাজার খাবারের দোকান। সেরকমই এক দোকানের মালিক ছিলেন হাবিবুর। যে মানুষটা দিনে দশ হাজার টাকার খাবার বিক্রি করতেন, তিনিই আজ মাসিক দশ হাজার টাকা বেতনে ওয়েটারের চাকরি করেন...

শাফায়েত মনসুর রানার 'দ্য লাস্ট অর্ডার' নাটকটি দেলাম সম্প্রতি। সে নাটকে দেখা যায়- এক বাবা, যিনি একটি রেস্টুরেন্টের শেফ, তিনি তার পুত্র, কন্যা ও স্ত্রী'কে শেষবারের মতন রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। নাটকের শেষটা মানবিক। সেটি বরং এখন নাই বা বলি। সেই নাটকের সাথেই তীব্র মিল পেলাম বাস্তবের এক মানুষের গল্পে।

'দ্য লাস্ট অর্ডার' নাটকটি যেন মহামারীর বিক্ষুব্ধ সময়কে ভেবেই করা   

গল্পটা হাবিবুরের। ঢাকা শহরে যার ছিলো চারশো স্কয়ার ফিটের এক রেস্টুরেন্ট। গ্রামের ভিটেমাটি সব বিক্রি করে তিনি এসেছিলেন ঢাকায়। পরিবার নিয়ে। কায়ক্লেশে খেটে এক রেস্টুরেন্ট খুলেছিলেনও। ইনকামও হচ্ছিলো। সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন আর নিজেরা থাকতেন মোহাম্মদপুরে। ভালোই যাচ্ছিলো সব। এরপরেই মহামারীর থাবা। সব স্তব্ধ হয়ে যায়। হাবিবুরের হোটেলও তার ব্যতিক্রম না। হাবিবুর তাও চেষ্টা করছিলেন। স্টাফদের টাকাপয়সা দেওয়াসহ সবকিছুই কোনোরকমে সামলে নিচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন, খুব তাড়াতাড়িই হয়তো সবকিছু খুলে যাবে। 

কিন্তু অপেক্ষার পালা যত বেড়েছে, হাবিবুরের অবস্থা তত খারাপের দিকে গিয়েছে। শেষপর্যায়ে এসে হোটেলটাই তাই বন্ধ করে দিতে হয় হাবিবুরকে। হোটেলের সব কর্মীকে ছাঁটাইও করে দিতে হয়। তারা এরমধ্যেই ফিরে গিয়েছে যার যার গ্রামে। হাবিবুর তাও চালিয়ে যাচ্ছেন লড়াই।

যার নিজের ছিলো একটা খাবারের হোটেল, তিনি অন্য আরেকজনের এক হোটেলে ওয়েটারের কাজ করছে এখন। যার হোটেল থেকে প্রতিদিন লাভ হতো ১০০০০ টাকা, তিনিই এখন ১০০০০ টাকা মাসিক বেতনের ওয়েটার! প্রত্যেকদিনই ওভারটাইম খাটছেন তিনি। যাতে করে সামান্য হলেও টাকাপয়সা আয় করা যায়। কিন্তু হাবিবুর নিজেও জানেন না, এভাবে আর কতদিন। তবে তিনি আশাবাদী, হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন! 

এরকম হাবিবুর অজস্র আছে এদেশে। শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই এই করোনাকালীন সময়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার দোকান। মহামারী হয়তো চলে যাবে। কিন্তু সমাজের তৃনমূল মানুষের যে অসহায়ত্ব ও হাহাকারের গল্প, সেগুলোর রেশ যে আরো কতদিন থাকবে, তা শুধু সময়ই জানে।

এই মানুষগুলোর জন্যে সরকারের কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কী না, জানা নেই আমাদের। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকার নিশ্চয়ই আমাদের কথা ভাবেন, এই সব মানুষের কথা ভাবেন। তিনি নিশ্চয়ই হাবিবুরদের কষ্টের কথা ভাববেন। এরপর খুবই প্রাসঙ্গিক কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন৷ বিবেচনায় রাখবেন এইসব মেহনতী মানুষের দুর্দশার গল্পকে। 

মহামারীর কারণে সৃষ্ট মানবিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর প্রায় সব দেশই নিয়েছে বিশেষ বিশেষ পরিকল্পনা। সরকারের তরফ থেকে প্রান্তিক ও শ্রমজীবী মানুষদের দেয়া হচ্ছে প্রনোদনা ও বিভিন্ন রকম সুযোগসুবিধা। বাংলাদেশের সরকারেরও সেরকম পরিকল্পনা আছে। এখন বাস্তবায়ন করারই অপেক্ষা।

আমরা বিশ্বাস করি, সরকারের হাত ধরেই হাবিবুরেরা ঘুরে দাঁড়াবে। 

তথ্যসূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা