আসুন 'গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল' এর ছায়ায় রেখে যাই আমাদের ভবিষ্যতকে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

ঘুর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির বিবিধ কর্মকাণ্ডের মধ্যে কেউ স্বীকার করছি না, কার পিঠের উপর প্রথম ছোবলটা দিয়ে ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলে আসে। কেউ বলছে না, তার কথা। যে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজেকে আত্মাহুতি দিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচাতে। কে সে?
প্রতিবছর ঘুর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে আমরা অনেক স্টেপ নেই। শেল্টার হোমগুলো প্রস্তুত, ভলান্টিয়ার টিম রেডি, ডাক্তারদের ছুটি বন্ধ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের ছুটি বন্ধ, মেডিকেল কিট রেডি, শুকনো খাবারের মজুদ শেষ, ফেসবুকাররা ঘনঘন সচেতনতামূলক স্ট্যাটাস দিচ্ছি। মোটামুটি বিশাল কারবার। বিবিধ কর্মাকান্ডের মধ্যে কেউ স্বীকার করছি না, কার পীঠের উপর প্রথম ছোবলটা দিয়ে ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলে আসে। কেউ বলছে না, তার কথা। যে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজেকে আত্মহুতি দিয়ে বাংলাদেশকে বাঁচাতে। কে সে?
সমুদ্র থেকে উঠে আসা সব দুর্যোগকে প্রথম মোকাবেলা করে- সুন্দরবন। সুন্দরবন বাংলাদেশের ন্যাচারাল ব্যারিয়ার। ঘাড়ত্যাড়া আর দার্শনিকে ভর্তি এই ছোট্ট দেশটার জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ সম্ভবত এই ছোট্ট বনটা। আমাদের বলার মতো কিছু নেই। কিন্তু বলতে পারছি শুধু সে আছে বলেই। সৃষ্টিকর্তা না চাইলে এটা হয়তো দিত না। সৃষ্টিকর্তা ভালোদের সাথে, সহস্র পাপীষ্ঠদেরকেও সমান ভালোবাসেন বলেই হয়তো পৃথিবীর অন্যকোন দেশকে না দিয়ে শুধুই আমাদের দিয়েছেন এই সবুজ জঙ্গলটাকে।
অ্যাঞ্জেলরা নূরের তৈরি হবে সবসময় কে বলেছে? তারা সবুজ পাতার বৃক্ষ হয়ে 'গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল' হয়েও পৃথিবীতে আসতে পারে। গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল না থাকলে কী হত? নইলে লাখে নয়, হয়তো কোটিতে কোটিতে আমরা মারা পড়তাম। মরি না কারণ ঐ কোনায় একলাটি পড়ে আছে সবুজ ছোট্ট বনটা। ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাসের কবলে পড়ে ভাসে, ডোবে, ভেঙে উজাড় হয়; তবুও ঘূর্ণিঝড়গুলোর গতি সে প্রথম ধাক্কাতেই অর্ধেকে নামিয়ে দেয়। কোটি কোটি গাছ ভেঙে যায়, মরে যায়, সহস্র জীব ভেসে যায়, তবুও সে আমাদের রক্ষা করে চলছে অবিরাম।

আমরা করছিটা কী? ভুটানের দিকে তাকান। বছর দশেক আগেও দরিদ্রতম দেশটা আজ দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল, ডেভোলপিং, গোছানো শান্তিময় দেশ। তাদের ৭২ ভাগ বনভুমি। যে পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড তারা উৎপন্ন করে, তারচেয়েও বেশি শোষণ করে তাদের বনাঞ্চল। ভারতের, নেপালের, চীনের একটা অংশের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে সহযোগিতা করে। এজন্যই তাদের কার্বন সিংক বলে। তাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে ৬০% বনভুমি রাখতেই হবে বলে লেখা আছে। তবুও তারা সন্তুষ্ট নয়। সারাদেশের বিচ্ছিন্ন বনজঙ্গলগুলোকে তারা গাছ লাগিয়ে একটার সাথে আরেকটা যুক্ত করে দিয়েছে। সবুজ করিডোর বানিয়েছে। কতটা সচেতন, স্বশিক্ষিত জাতি ভাবা যায়?
আমাদের? যা আছে তার অনেকটা খেয়ে ফেলেছি। গাছ নেই, পাখিও কমছে। গাছ-পাখি না থাকলে মানুষ বাড়বে? না। মানুষও কমবে। শুধু অপেক্ষা করুন। বড়বড় ক্ষতিগুলো কী হচ্ছে সেটা না হয় আরেকদিন বিস্তারিত বলা যাবে। পরের অংশে যাই। ঘুর্ণিঝড় আসলে কী করবেন? অবশ্যই সম্ভাব্য সকল রিসোর্স ব্যবহার করে কমিউনিটিকে পুনর্বাসন করবেন। কিন্তু তারপর? বন কমছে, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, দূর্যোগ বাড়ছে, আরো আসবে। মিটিং করে মোকাবেলা আর কত? আমাদের হুশ হবে না?
সুন্দরবন আমাদের মতো দোপেয়োরা উজাড় করেই যাচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাড়ছে। ওজন স্তর ভাঙছে। তাপমাত্রা বাড়ছে। বরফ গলছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ উঁচু হচ্ছে তো হচ্ছেই। বর্ষা এখন ছয় মাস, গ্রীষ্ম এখন বারোমাস। একটা ঋতু আরেকটাকে গিলে ফেলেছে। এখন আর তাদের আলাদা পর্যন্ত করা যায় না। এই ভয়ংকর অবস্থায় পড়া পৃথিবীকে বাঁচাতে আপনি কী করছেন? শর্টলি বলি। বাংলাদেশটাকে বাঁচাতে আপনি কী করছেন? আরো শর্টলি বলি, আপনি যে সন্তানকে পৃথিবীতে আনছেন/আনবেন, তার পৃথিবীটাকে বাঁচাতে আপনি কী করেছেন?

লেখার এই অংশে যারা এসেছেন, প্রতিজ্ঞা করুন তো দেশ বাঁচাতে, পৃথিবীকে আশু বিপদ থেকে বাঁচাতে এবার ঈদে মাথাপিছু দুটো করে গাছ লাগিয়ে আবার শহরে ফিরবেন। ঈদের আনন্দ ভাগ করবেন দেশের সাথে। করুন তো প্রতিজ্ঞা। এটা তো ধর্মও। এটা তো নেক কাজও। সদকায়ে জারিয়াহ তো! রাইট?
সৃষ্টিকর্তা পৃথিবী দিয়েছে। আবহাওয়া-বায়ুমন্ডল দিয়েছে। সেটাকে বাঁচাতে কিছুই করবেন না? নিজের বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানের চেয়ে প্রকৃতিটা কম জরুরি? সে না বাঁচলে বাকীদের কীভাবে বাঁচাবেন? আমি প্রতিজ্ঞা করলাম। এবার দুটো গাছ লাগাবো। ছোটবেলায় আব্বার সাথে অনেক গাছ লাগিয়েছি। গত বছরেও লাগিয়েছি। প্রয়োজনে আবার লাগাব। নিজ হাতে। গাছ দুটো হবে আমার সন্তানের মতো। পানি ঢেলে, বেড়া দিয়ে সেই সন্তানের ছবি তুলে আমি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে শো অফ করব। সুন্দরবনকে বাঁচাতে আমি দুটো গাছ লাগিয়ে একটা ছোট্ট সুন্দরবন হলেও বানিয়ে আসব। সেই বনের পিতা হব আমি।
এই সন্তান একদিন আমার শুক্রানুজাত মানব-সন্তানকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিয়ে বন্ধুত্ব পাতাবে। ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করবে। আমার মৃত্যুর পরেও তারা আমার লিগ্যাসি হয়ে পৃথিবীতে থেকে যাবে। কে আছেন আমার সাথে? বিশ্বাস করুন। আমাদের দেখাদেখি একদিন বাকীরাও আসবে। তারাও লাগাবে। একদিন বিচ্ছিন্ন দুই গাছের বনগুলো একটার সাথে আরেকটা জুড়ে যাবে। সারাদেশ ভরে যাবে সবুজ গাছে। ভাবা যায়? কত নির্মল, বিশুদ্ধ অক্সিজেন-শীতল ছায়ার দেশ বানিয়ে ফেলব আমরা? একদিন আমরাই আমাদের বাচ্চাকাচ্চাকে গল্প করব- সুন্দরবনটাকে পঞ্চগড় পর্যন্ত আমরাই প্রথম টেনে এনেছিলাম। এই আমরাই। আমাদের মতো পাগলারাই।