সরকারি এসব হেল্পলাইনের ব্যাপারে কি আপনি জানেন?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ফেসবুকের ট্রেন্ড, স্ন্যাপচ্যাটের ফিল্টার সবই আমাদের নখদর্পনে অথচ কর্মক্ষেত্রে এবং গৃহস্থালিতে সহিংসতার স্বীকার হলে কোন নাম্বারে কল দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকার পাওয়া যাবে, তা জানি না কেউ...
আমাদের দেশে 'সহিংসতা' শব্দটি ভাত-ডালের মতই স্বাভাবিক। সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীরাই ভিকটিম অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সে সেটা কর্মক্ষেত্রেই সহিংসতা হোক অথবা ঘরের মধ্যে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, যাদের বয়স পনেরো এর বেশি এবং যারা কাজ করছেন বিভিন্ন জায়গায়, তাদের মধ্যে ৩৫% মানুষ কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে শতকরা ১৩% এর বেশি মানুষ এই সহিংসতার শিকার। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে যে সহিংসতা হয়, সেরকমটি হয় না পৃথিবীর আর কোনো দেশের কোনো কর্মক্ষেত্রেই!
এ লেখার উদ্দেশ্য এটা না, সহিংসতার মাত্রা কতটা বেশি বাংলাদেশে, সেটা বোঝানো। বরং এ লেখাটি একটি আশাবাদী লেখা। প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে বাংলাদেশের সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এইসব সহিংসতা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, আমরা অনেকেই সরকারের এই পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে জানি না। এ প্রসঙ্গে একটা জিনিস জানিয়ে রাখি, ২০০৯ সালে মহামান্য হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলো, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, যে নারী এই অপরাধের ভিক্টিম হবে তার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের হটলাইন নাম্বার-১০৯ সবসময়েই খোলা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সহিংসতার স্বীকার মানুষটি এই হটলাইনে অথবা জাতীয় জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ কল দিলেই কিন্তু খুব দ্রুত গতিতে তার অভিযোগ নিয়ে কাজ শুরু করে দেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বেশ কিছুদিন আগে এক ঘটনা জেনেছিলাম। এক মেয়ে বাসে ওঠার পর তাকে উত্যক্ত করছিলো এক লোক। মেয়েটি উপয়ান্তর না পেয়ে ৯৯৯ এ কল দেয়। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিকটস্থ থানা থেকে এক গাড়ি পুলিশ এসে বাসকে আটকায় এবং ঐ লোকটিকে ধরে ফেলে। বাসে আজকাল কী বর্বরতা হচ্ছে, আমরা জানি। অথচ এই বর্বরতা দমন করার অস্ত্রও কিন্তু আমাদের হাতেই আছে। এজন্যে যে আপনার হাতে দামী স্মার্টফোন থাকতে হবে এমনও কিছু না। আপনি শুধু ৯৯৯ এ কল দেবেন। বাকিটা আপনাকে আর ভাবতে হবেনা।
এছাড়াও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স সম্পর্কেও আমরা কমবেশি সবাই জানি। ঘরে-গৃহস্থালিতে সহিংসতার স্বীকার যারা, তারা দিশেহারা হয়ে যান কী করবেন তা নিয়ে। অথচ তারা চাইলেই খুব সহজেই ট্যাক্স ফ্রি নাম্বার ১০৯২১ এ কল দিয়ে সেবা পেতে পারেন। এই নাম্বারে কল দিলে খুব দ্রুতগতিতেই একটা টীম গঠিত হয়ে যায়, যেই টীমে মেডিক্যাল অফিসার, আইনজীবী, পুলিশ সবাই থাকেন। যারা ভিক্টিমের অভিযোগ অনুযায়ী তার প্রতিকার পাওয়ার কাজ শুরু করে দেন।
এই যে সরকার চাচ্ছে নাগরিককে সুবিধে দিতে এবং নাগরিকেরা যে জানেও না তাদের জন্যে এ সুবিধেগুলো আছে, এ অজ্ঞতার দায়ভার কে নেবে? প্রসঙ্গত আরেকটি বিষয়ের অবতারনা করছি। মহামারীর প্রকোপ শুরু হওয়ার পরে সরকারের একটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু হয়েছিলো, যেই হেল্পলাইন এখনো বহাল আছে। ১৬২৬৩ নাম্বারে কল দিলেই স্বাস্থ্যসেবা ও করোনাভাইরাসের পরীক্ষানিরীক্ষা সম্পর্কিত সব তথ্য পাওয়া যায় এখানে। যদিও এই সেবাটি বিরক্তি কুড়িয়েছিলো কিছুটা। সেটা অবশ্য আমাদের দোষেই।
দেশে একটা মহামারী চলছে, সেখানেও বাঙ্গালীদের তামাশা কমেনি একটুও। হেল্পলাইনে কল দিয়ে 'শিঙাড়া পাওয়া যাবে কী না, মাছ পাওয়া যাবে কী না' টাইপের সস্তা, চটুল রসিকতা করেছে। আবার কল দিয়ে নারীদের গলা শোনার জন্যেও উত্ত্যক্ত করেছে কেউ কেউ। এতে করে যেটা হয়েছে, যারা প্রকৃতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিলেন, তারা ঠিকঠাক সেবা পান নি। এজন্যে হেল্পলাইন নাম্বার বা তার সাথে সংযুক্ত মানুষদের আপনি দোষারোপ করতে পারবেন না। বরং আমাদের অসভ্য মানসিকতাকেই সামনে আনতে হবে এসব প্রযুক্তির ব্যর্থতার জন্যে।
আমাদের হাজারো সমস্যা। ঘিঞ্জি দরিদ্র জনপদ হওয়ার কারণে এখানে অপরাধ, সহিংসতাও বেশি। তাও আমাদের সরকার চেষ্টা করছেন, যতটুকু যা করার। শিক্ষা বাতায়ন, বাস-ট্রেনের অনলাইন টিকেট, গ্যাস বিল- কারেন্ট বিল অনলাইনে দেয়ার সুবিধেসহ অনেক বিষয়েই সরকার চাচ্ছে তার নাগরিকদের সাহায্য করার জন্যে। আপনি সরকারের সেই উদ্যোগগুলোকে অবশ্যই গ্রহণ করবেন। দেশের নাগরিক হিসেবে এটি আপনার অধিকারও। কিন্তু তা না করে সরকারের ভালো উদ্যোগগুলোকে 'ব্যর্থ' করার জন্যে আপনি যদি উঠেপড়ে লাগেন, তাহলে সেটা খুবই হতাশাজনক। আপনি ফেসবুকের সব ট্রেন্ড ফলো করেন, স্ন্যাপচ্যাট এর সব ফিল্টার আপনার মূখস্ত; অথচ আপনি জানেনও না, বিভিন্ন প্রয়োজনে সরকারের কী কী হেল্পলাইন ও উদ্যোগ খোলা আছে, এটা কিন্তু খুবই হাস্যকর এক বিষয়। এবং একজন সচেতন নাগরিকের কাছ থেকে এরকম ব্যবহার মোটেও কাম্য নয়।
তাই আসুন সচেতন হই। নিজের জীবন নিরাপদ করি। আশেপাশের মানুষকেও ভালো পরামর্শ দিই। সহিংসতা নির্মূল করি একসাথেই। তাতেই সবার মঙ্গল।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন