মহামারি বারবার আমাদের বুঝিয়ে যায় যে কোনো আয়াত, ভার্স, বাণী না; মানুষকে বাঁচাতে পারে একমাত্র মানুষই।

৮০ বা ৯০ এর জেনারেশন এই প্রথম প্রি-ডিস্টোপিয়ান সিচুয়েশনের মুখোমুখি। দুইটা বিশ্বযুদ্ধ, ৩০ দশকের অর্থনৈতিক মন্দা বা আমাদের দেশের ৭১; কোনোটাই এই জেনারেশনের দেখা হয়নি সরাসরি। এর আগেও বহু ভাইরাস আসছে, কিন্তু গ্লোবাল এপিডেমিক হিসেবে করোনা যে পরিমাণ প্যানিক তৈরী করছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি করছে, তা আর কয়েক মাস বহাল থাকলে পৃথিবী একটা বড় ধরনের ডিস্টোপিয়ার দিকে যাবে।

গত ৩০/৪০ বছরে আমরা দেখেছি পুঁজিবাদের উত্থান; তুচ্ছ এবং নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে মারামারি, হানাহানি, অরাজকতা। আমরা বনের পর বন সাফ করে ফেলছি নিজেদের জীবনকে উন্নত করতে আর আমাদের ইকোসিস্টেমকে দিয়েছি এনট্রপি। মরুর বরফ গলায়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি করছি, গ্লাসিয়ারে সুপ্ত থাকা হাজারো অজানা ভাইরাস, রোগকে করছি জীবন্ত। আজ এই প্যানডোমিকের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ বুঝবে এতোদিন মানুষ আসলে মানুষকেই কামড়িয়েছে; অহেতুক, অযথাই। কাক কাকের মাংস খায় না, কিন্তু মানুষ মানুষেরই রক্ত খেয়েছে, খাচ্ছে।

দৃশ্যমান শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়, অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব না। এইরকম ডিস্টোপিয়ায় মানুষই লড়াই করবে মানুষের জন্য। একজন ডাক্তার দিনরাত শ্রম দিবেন অসুস্থদের জন্য, ল্যাবরেটরিতে বসে একজন বিজ্ঞানী দিনরাত কাজ করে যাবেন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের। মানুষ মানুষকে ধরে রাখবে, বাঁচিয়ে রাখবে।

অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তাকে মহামারিতে অর্থহীন ধর্ম আর নিরেট উপাসনালয়ে পাওয়া যায় না। মানুষের মহামারিতে ঈশ্বর দৃশ্যমান হন মানুষেরই রূপ ধরে; ডাক্তার, বায়োলজিস্ট, ক্যামিস্ট, সায়েন্টিস্ট হিসেবে। মহামারি বারবার আমাদের বুঝিয়ে যায় যে কোনো আয়াত, ভার্স, বাণী না; মানুষকে বাঁচাতে পারে একমাত্র মানুষই। অর্থ, বিত্ত বা দৈব্য শক্তি না; বিপদে মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু মানুষই।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা