তার ছবির গল্পগুলো পড়ে ভিন্নধর্মী মতামত চালাচালি হলেও, শুধু মত দিয়ে তো আর জীবন পাল্টানো যায় না। দায়িত্ব নিয়ে কেউ এগিয়ে আসে না। আকাশ যেভাবে তার বিশালতার পরিচয় দিয়েছেন, সার্মথ্য থাকলেও এমনটা করবার সাহস কেউ দেখায় না। প্রায় ৪০ লক্ষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুর দেশে উদ্যোগটি খুব ছোট মনে হতে পারে। কিন্তু ভেবে দেখুন, একজন আকাশ যদি একশো শিশুর দায়িত্ব নিতে পারে। প্রায় ১৮ কোটির দেশে আকাশের মতো মানুষের কি এতোটাই অভাব আমাদের?
যে বয়সে একটি শিশুর হাতে থাকার কথা রং পেন্সিল ও বইখাতা, অথচ দু’মুঠো অন্নের তাগিদে শিশুটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমের পথ বেছে নিতে। দারিদ্রতার সুযোগে এক শ্রেণীর অর্থলোভী স্বার্থপিপাসু ব্যবসায়ী এ সকল শিশুর দ্বারা অমানবিক কাজ করায়। অর্থ উপার্জনের পারিবারিক চাপও থাকে এমন কোমুলমতি শিশুদের মাথায়।
স্কুল চলাকালীন সময়ে ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে তার পরিবারের লিখিত অনুমতি ছাড়া উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ দেয়া বা কাজ করিয়ে নেয়াকে শিশুশ্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথবা শিশুশ্রম বলতে শিশুদের শ্রমের সময় প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন কাজে এবং পরোক্ষভাবে গার্হস্থ্য শ্রমে ব্যয় করাকে বোঝায়। মার্কিন শ্রম বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, শিশুশ্রম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। কেননা, এ সকল শিশুদের শ্রমের মূল্য খুবই নগন্য। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশের সংবিধানে অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী সকল বাংলাদেশী ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে এবং ১৪ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে কিশোর/কিশোরী হিসেবে গন্য করা হয়।
বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ এ স্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নেওয়া যাবে না। ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত কাজে নেয়া যাবে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেয়া যাবে না। শিশুদের জন্য সব কাজই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরেও ৩৮টি কাজকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, এসব কাজে শিশুদের কোনোভাবেই নিয়োগ করা যাবে না। বেশি ঝুকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক কাজে শিশুর মানসিক বিকৃতি দেখা দিতে পারে। যারা বাসায় কাজ করে, তাদের কল্যাণের জন্যেও রয়েছে নির্দিষ্ট একটি নীতিমালা।
তবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করাও কিন্তু কোনো সমাধান নয়। কেননা, শিশুস্রমকে করা গেলেও দারিদ্রতাকে কখনোই নিষিদ্ধ করা যাবে না। ঘুরেফিরে সেই দারিদ্র্যের গেঁড়াকলেই পড়ে থাকবে সেসব শিশুরা ও তাদের পরিবার। দরিদ্র্য পরিবারগুলোকে একটা আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে, সেই পরিবারের শিশুরা জীবননাশক কাজের বদলে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাবে। শিক্ষা ছাড়া এমন ক্রাইসিস মোকাবেলা করার ক্ষমতা অন্য কিছুতে নেই। পার্থক্য শুধু একটি ইউনিফর্ম ও একটু সহানুভূতির।
আপনি একাই পৃথিবীটা বদলাতে পারবেন না। তবে কারো না কারো পৃথিবী অবশ্যই বদলাতে পারেন। এমনই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন বাংলাদেশী আলোকচিত্রী। হয়তো নামে চেনেন তাকে কিংবা ফেসবুকে দেখেছেন তার ফটোস্টোরি। তার নাম জিএমবি আকাশ। ছবি তোলাই যার কাজ, অথচ সেই কাজের সীমানা পেরিয়ে নিজের সীমিত আয় দিয়ে একক প্রচেষ্টায় ১৫ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে। তার চেষ্টায় দারিদ্র্য ও অশিক্ষার কবল থেকে বেরিয়ে এসেছে কমপক্ষে ১০০ শিশুর ভবিষ্যৎ। সেসব শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থার পাশাপাশি, দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের পরিবারেরও। নিশ্চিত করেছেন তাদের আয়ের উৎস।
তার ছবির গল্পগুলো পড়ে ভিন্নধর্মী মতামত চালাচালি হলেও, শুধু মত দিয়ে তো আর জীবন পাল্টানো যায় না। দায়িত্ব নিয়ে কেউ এগিয়ে আসে না। আকাশ যেভাবে তার বিশালতার পরিচয় দিয়েছেন, সার্মথ্য থাকলেও এমনটা করবার সাহস কেউ দেখায় না। প্রায় ৪০ লক্ষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুর দেশে উদ্যোগটি খুব ছোট মনে হতে পারে। ঢাকার বিখ্যাত নটরডেম কলেজ কিংবা স্বপ্নের ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে, ইতিমধ্যেই তার সহযোগিতায় ঢাকার স্বনামধন্য স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি থেকেও লেখাপড়া করেছেন অনেকে। কিন্তু ভেবে দেখুন, একজন জিএমবি আকাশ যদি একশো শিশুর দায়িত্ব নিতে পারে। প্রায় ১৮ কোটির দেশে আকাশের মতো মানুষের কি এতোটাই অভাব আমাদের?
সম্প্রতি, আরো ৫ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর আজীবনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন জিএমবি আকাশ। সেই ছবি শেয়ার করেছেন তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে। ছবিগুলোয় স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া বাচ্চাদের নির্মল মুখের হাসি বদলে দিতে সক্ষম ঘুণে ধরা এ সমাজের কুৎসিত চিত্র। শুধু দরকার একটু সহযোগিতা। আপনি যদি এই মহৎ কর্মে অংশগ্রহণ করতে চান তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুক GMB Akash , টুইটার @GmbAkash , ইন্সটাগ্রাম gmbakash আইডিতে অথবা মেইল করতে পারেন akashphoto@gmail.com এই ঠিকানায়। আপনার আমার সহযোগিতায় এগিয়ে চলুক জিএমবি আকাশ, এগিয়ে চলুক বাংলাদেশ।