'গ্লাইসেরা শেখমুজিবি' নিয়ে কেন আমাদের এত হীনম্মন্যতা?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

বিরিয়ানীর প্যাকেটে বঙ্গবন্ধুর নাম আসায় বিরক্তিটা যৌক্তিক। কথায় কথায় চোর বাটপাররাও যখন 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ' ব্যবহার করে সেখানে বিরক্তি আসবেই। কিন্তু..
বঙ্গবন্ধুর নামে একটি নতুন প্রজাতির প্রাণীর নামকরণ করেছেন একজন গবেষক। এই ব্যাপারটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছি। যারা নামকরণটি নিয়ে অনুভূতিতে আঘাত পেয়েছেন, তাদের একমাত্র যুক্তিটি হচ্ছে প্রাণীটি অমেরুদণ্ডী।
বায়োলজিক্যাল সায়েন্স নিয়ে যাদের জানাশোনা আছে তারা ভালোমতই জানার কথা কোনো ব্যক্তির নামে কোনো স্পিসিসের নাম রাখা কতটা সম্মানজনক। ট্যাক্সোনমিতে কিংডম থেকে জেনাসের ট্যাক্সন গুলো নামকরণের নির্দিষ্ট নিয়মাবলী থাকলেও স্পিসিসের নামকরণের ক্ষেত্রে গবেষকদের ছাড় দেয়া হয়। বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে স্পিসিসের নামকরণের ট্রেন্ড নতুন কিছুই না।
রুজভেল্টের নামে গিরগিটির একটি প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে, বারাক ওবামার নামে কৃমির নামকরণ আছে, নেলসন ম্যান্ডেলার নামে শামুকের নামকরণ আছে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও একটি মথের নামকরণ আছে। শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গই নয়, জনপ্রিয় কবি সাহিত্যিক শিল্পী বিজ্ঞানী এমনকি বিটলস, পিংক ফ্লয়েডের নামেও বিভিন্ন প্রাণীর প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। এমনকি অনেকের নামে একাধিক প্রাণীরও নামকরণ আছে। আর পৃথিবীর প্রায় ৯৭% প্রাণী অমেরুদণ্ডী হওয়ায় নামকরণের অধিকাংশই অমেরুদণ্ডী প্রাণী।

বাংলাদেশের উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্যের দরুণ গবেষনায় এদেশে আরো অনেক নতুন প্রজাতির উদ্ভাবন সম্ভব। প্রজাতির নামকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভাবক কোন বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সম্মান জানিয়ে তার এই আবিষ্কারটি উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারেন। জীববিজ্ঞানে এই নামকরণকে চূড়ান্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়।
যারা 'গ্লাইসেরা শেখমুজিবি' নামটি নিয়ে চেতনায় আঘাত খেয়ে বসে আছেন, যদি এই প্রাণীটি মেরুদণ্ডী হতো তাহলে হয়তো আনন্দে নাচতেন। তার মানে স্পষ্টতই এই মনখারাপের কারণ, অমেরুদণ্ডী প্রাণী নিয়ে আপনার ট্যাবু। কিন্তু বিজ্ঞানের ফিলসফি এতটা নিচু নয়। বিজ্ঞানে এমন কোন বর্ণপ্রথা বা হায়ারার্কি নাই। তাই বিজ্ঞান পৃথিবীর এই বিশাল প্রাণী বৈচিত্রে সব প্রাণীকেই এনিমেলিয়া কিংডমে অন্তর্ভূক্ত করে।
আপনি মানুষ তাই বলে আপনার কিংডম আলাদা নয়, আপনি যে কিংডমের অন্তর্ভূক্ত, একটা কীটপতঙ্গকেও বিজ্ঞান সেই কিংডমের অন্তর্ভূক্ত করেছে। এমনকি শিম্পাঞ্জির ক্লাসিফিকেশান দেখুন, কিংডম থেকে ফ্যামিলি পর্যন্ত সবগুলো ট্যাক্সন মানুষের অনুরূপ। এসব নিয়ে বিস্তর সায়েন্টিফিক আলাপ আলোচনায় যাওয়া যায় চাইলেই, কিন্তু আমি বলতেসি আপনাদের ট্যাবু নিয়ে। আপনি যে চেতনা দিয়ে চিন্তা করতেছেন, বিজ্ঞান সেই চেতনায় চলেনা। অতএব, হীনদৃষ্টি যদি থাকে সেটা আপনার, সেটা বিজ্ঞানের নয়, 'গ্লাইসেরা শেখমুজিবির'ও নয়।
কোন বাঙালির নামে পৃথিবীর একটি নতুন প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। আর সেই বাঙালি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি এটি অনেকগুলো সম্মানের একটি। তাই গবেষক ড.বেলাল হোসেন স্যারকে অভিনন্দন জানাই। ধন্যবাদ স্যার। কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানবেন।