স্ত্রীর পেট কেটে ছেলে সন্তানের খোঁজ ও আমাদের পঁচে যাওয়া সমাজ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ভারতের এক লোক কাস্তে দিয়ে স্ত্রী'র পেট কাটলেন, ভেতরের সন্তান পুত্র না কন্যা, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্যে। বর্বর একটি ঘটনা ভেবে চমকে উঠছেন! চমকাবেন না। এ বর্বরতার পেছনে হাত রয়েছে আমাদেরও...
এই উপমহাদেশে কন্যাসন্তান হিসেবে জন্ম নেয়ার মতন বালাই বোধহয় আর কিছুতে নেই৷ কোনো একজন নারী গর্ভবতী হলেই পরিবার-শুদ্ধ সবার প্রত্যাশা একমুখী, ছেলে আসবে ঘরে। সেই প্রত্যাশাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে যদি কোনো মেয়ে চলেই আসে পরিবারে, তাহলেই হয়েছে! গোমড়ামুখো পরিবারে জীবন শুরু করে মেয়েটি। আস্তে আস্তে মেয়েটি যত বড় হতে থাকে, সমস্যা তত বাড়েই। পরিবারের রক্তচক্ষু, বাইরে নামলে বখাটেদের লকলকে জিহ্বা, শিক্ষাক্ষেত্র- চাকরীক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য... এভাবেই একসময় জীবনবাতি ফুরিয়ে যায়। বলছি না ব্যতিক্রম নেই৷ ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু অধিকাংশ মেয়েদের জীবনচক্রটা ঠিক এরকমই। কোনো পরিবর্তন ছাড়াই।
এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মেয়েদের ধরা হয় তীব্র এক বোঝা হিসেবে, আপদ হিসেবে। সে কারণেই হয়তো ভারতের উত্তর প্রদেশের বাদাউন জেলায় স্ত্রী'র পেট কেটে দেখতে চেয়েছিলেন স্বামী- গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে? আপনি হয়তো ঘটনাটিকে বর্বরতা ভাবছেন৷ কিন্তু ভেবে কী লাভ? এরকম বর্বরতার ঘটনাগুলো নিয়মিতই ঘটছে আশেপাশে। আমরা সামান্য আহা-উহু করছি। এরপর আবার ঠিকই ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছি নিজের কাজে। এটাই হয় আসলে।
যাই হোক, উত্তর প্রদেশের এই লোকটি যে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী'র পেটকে কাস্তে দিয়ে কেটে দেখতে চাইলেন ভেতরের সন্তান ছেলে না মেয়ে, তার পেছনেও গল্প আছে। এর আগে সেই লোকটির হয়েছে পাঁচটি মেয়ে। পাঁচটি মেয়ে হলো কেন, তা নিয়েও গল্প আছে। পুত্র সন্তানের আশায় তার ঘরে জন্ম নিয়েছে একে একে পাঁচটি মেয়ে! কিন্তু পুত্র আর আসেনি। এবার প্রশ্ন, পুত্র সন্তান জন্ম নিলে কী এমন মহাভারত শুদ্ধ হয়, যেটা কন্যা সন্তান জন্ম নিলে হয় না? এর উত্তর অনেক গভীরে প্রোথিত৷ ধর্মীয় বইখাতা, রাষ্ট্রীয় বিধান ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি মিলিয়ে যদি আমি কন্যা সন্তানের চেয়ে পুত্র সন্তান কেন বেশি প্রাসঙ্গিক, তা যদি বলতে চাই- তাহলে খুবই জটিল প্রসঙ্গের অবতারণা করতে হবে। ওদিকে তাই যাচ্ছি না।
উত্তর প্রদেশের এই ঘটনায় স্বামীর বর্বরতার স্বীকার স্ত্রী'র গর্ভে এবার পুত্রসন্তানই এসেছিলো। কিন্তু অতিউৎসাহী বাবার কাস্তের আঘাতে সে ছেলেটি ভূমিষ্ট হয়েছে লাশ হয়ে। বাবার গালে যেন এক বড়সড় চপেটাঘাতই করে দিয়েছে মৃত সন্তান!
ভারতে প্রতিবছরেই গর্ভপাত ঘটিয়ে ৪৬ লাখ কন্যা সন্তানের ভ্রুণ'কে নষ্ট করে ফেলা হয়। মেয়েদের উপর অত্যাচারের কারণে সে দেশে নারীর সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছেও প্রকটভাবে। বাংলাদেশ শিক্ষা-দীক্ষা-গবেষণায় ভারতকে অনুসরন করতে না পারলেও বর্বরতার ক্ষেত্রে চোখ বুজে অনুসরণ করছে ভারতকে। নারী নির্যাতনে এবং কন্যা সন্তানের ভ্রুণ হত্যায় বাংলাদেশও যে খুব একটা পিছিয়ে আছে এরকমও না। তাছাড়া কন্যাসন্তানকে এখনও এ দেশে দেখা হয় মন্দভাগ্য হিসেবে। হিংস্র শ্বাপদের থাবায় প্রতিদিনই বিষিয়ে ওঠে এদেশের নারীদের জীবন। নারীদের জন্যে সুস্থ, মুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতেও ব্যর্থ গোটা দেশ। এভাবেই চলছে।
নারীরা আসলে কী, কী তাদের অবদান, সে জ্ঞান আর না দেই। সবাই জানেন। চর্বিত চর্বন করে লাভ নেই মোটেও। তবে লিঙ্গ-বৈষম্যের ক্ষেত্রে আমরা যে পাশবিক মানসিকতা বহন করি তারই এক ছোটখাটো নিদর্শন উত্তর প্রদেশের এই ঘটনাটা।
এ ঘটনায় চমকে উঠে লাভ নেই। অভ্যস্ত হতে হবে। যতদিন না নিজেরা প্রতিবাদ করছি এসব মানুষরূপী পশুদের, ততদিন পর্যন্ত এ সমস্ত ঘটনায় দায়ী মানুষের তালিকায় আপনার আমার নামও থাকবে।
দায়ী তো আমরাও!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন